somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রীট নিয়ে মৌলিক কিছু ধারণা

২০ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আইন জগতে রীট একটি কমন বিষয়। অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে জানতে চান। কখন রীট হয়, কেন হয়, কিভাবে করতে হয় এমন হাজারো প্রশ্ন থাকে। এক কথঅয় যদি বলা হয়, তাহলে বলতে হয় রীট তখনই হবে যখন আইনে আপনার হাতে আর কোন বিকল্প পথ নেই কিংবা মৌলিক অধিকার যখন লঙ্গিত হয়ে থাকে তখন। সহজ কথায় যদি বলি রীট কখন হয় তার উত্তর হচ্ছে যে সব ক্ষেত্রে আইনী প্রতিকারের জন্য অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না (when an alternative and equally efficacious remedy is not available) তখন মহামান্য হাইকোর্টের দারস্থ হয়ে রীট করতে হয়। অর্থাৎ কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারি বা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনত ফোরাম থাকলে সেটাকে পাশ কাটিয়ে রীট করা যায় না। করলেও টাকা নষ্ট হবে এবং শুনানীঅন্তে খারিজ হবে।

যেমন, আপনার জমি নিয়ে সমস্যা। কেউ আপনাকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দিয়েছে বা দিতে চাচ্ছে। সেক্ষেত্রে রীট হবে না। কারণ এর জন্য দেওয়ানী আদালতে প্রতিকার রয়েছে। অপরদিকে, ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংক যদি আপনার বসতবাড়ি/জমি নিলামে তুলে দেয় সেক্ষেত্রে রীট করে প্রতিকার পেতে পারেন।

আইনীভাবে আলোচনা করলে বলতে হয়, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারো মৌলিক লঙ্গিত হলে হাইকোর্ট তা বলবৎ করতে পারে যা রীট এখতিয়ার নামে পরিচিত । রীট শুধু মাত্র হাইকোর্ট বিভাগে করা যায়।

মৌলিক অধিকারগুলো হলো সংবিধানের ২৭ থেকে ৪৩ পর্যন্ত বর্ণনা দেওয়া রয়েছে।

**কেন সরাসরি রীট করা হয়, মামলার সাথে রীটের তফাৎ কিঃ
রিটের বিষয়টি মামলার মত হলেও মৌলিক একটি পার্থক্য আছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন আইনের অধীনে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে। তখন ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করতে পারে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়। আবার কেউ যদি মনে করে সরকারের প্রণীত কোন আইন প্রচলিত অন্য আইনের পরিপন্থী বা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সে ক্ষেত্রেও আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে রিট করা যায়। রীটে খরচ কিছুটা বেশি হলেও সাধারণত দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।

**রীটের প্রকারভেদঃ বাংলাদেশ সংবিধানে পাঁচ ধরনের রীটের কথা বলা আছে। যথা:
(১) Writ of Habeas Corpus (হেবিয়াস কর্পাস)
(২) Writ of Mandamus (ম্যান্ডামাস)
(৩) Writ of Prohibition (প্রহিবিসন)
(৪) Writ of Certiorari ( ছারসিওরারি)
(৫) Writ of Quo Warranto (কুয়া ওয়ারেন্টো)

বিস্তারিত আলোচনা করলাম না, এতে বরং মূল বিষয়ের উপর মনযোগ নষ্ট হবে। বিস্তারিত আমার অপর একটি লেখায় দেওয়া আছে।


** রীট করার আগে করণীয়-

উচ্চ আদালতে মামলার জন্য কোন আইনজীবীর কাছে যেতে হবে সে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে যে কোন আইনজীবীর কাছেই যাওয়া যেতে পারে। তবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবির হাতে ফল ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অভিজ্ঞ এবং সুপরিচিত আইনজীবি ছাড়া যে মামলা জেতা যাবে না, তা কিন্তু নয়। তুলনামূলকভাবে নবীন কিন্তু দক্ষ আইনজীবিও কম খরচে মামলা জিতিয়ে দিতে পারেন। রীট করলেই হয় না, যথাযথভাবে বুঝে শুনে করলে ভালো প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।

সংক্ষেপে রীট বৃত্তান্তঃ-

১. রীট করতে হলে প্রথমে একজন আইনজীবীর সাথে কথা বলতে হবে ।

২. আইনজীবী রীট করার মতো বিষয় হলে রীট পিটিশনটি হাইকোর্টে দাখিল করবে এবং দাখিলের সময় রীটকারীকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে স্বশরীলে উপস্থিত থাকতে হবে।

৩. রীট পিটিশন দায়েরের পর আদালতে প্রাথমিক শুনানি হবে।

৪. উক্ত শুনানিতে আদালত রীট কারীর আইনজীবীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হলে প্রতিপক্ষের উপর রুল জারি করবেন অর্থাৎ রুল শুনানিতে যদি আদালত মনে করে রীট কারীর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি রিটের শর্তগুলো পূর্ণ করেছে তবে আদালত উক্ত রিটের জবাব দেওয়ার জন্য প্রতিপক্ষে নির্দেশ দিবে যা রুল জারি নামে পরিচিত।

৫. অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি যদি তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আদালত মনে করে তবে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিতে পারে এবং একই সাথে রুল জারি করতে পারে। আর যদি প্রাথমিক শুনানিতে আদালত রীট কারী আইনজীবীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট সন্তুষ্ট না হয় তবে উক্ত রীট আবেদনটি খারিজ করে দিবে।

৬. এবার প্রতিপক্ষের থেকে রুলের জবাব পাওয়ার পর উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আদালত চূড়ান্ত শুনানি গ্রহন করবেন।

৭. উক্ত শুনানির উপর ভিত্তি করে আদালত সুচিন্তিত একটা ডিরেকশন দিবেন যা অনেকটা রায়ের মতো বলতে পারেন। আদালতের এই ডিরেকশন প্রদানের মাধ্যমে একটি রীট মামলার চূড়ান্ত নিস্পত্তি হয়ে থেকে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রীট হয়ে থাকে যে বিষয়গুলো নিয়ে তা হলঃ

১. কারো কোন সরকারি পদে থাকার বৈধতা নিয়ে

২. কমিটি গঠনের বৈধতা নিয়ে রীট

৩. নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে রীট

৪. সরকারি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিধি বহির্ভুতভাবে কাউকে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে চাইলে

৫. কাউকে কোন পদ থেকে বিধি বহির্ভুতভাবে বহিষ্কার করলে

৬. সংবিধান পরিপন্থী বা মৌলিক অধিকার পরিপন্থী কোন আইন হলে

৭. খেলাপি ঋণের বিষয়ে/অর্থঋণের বিষয়ে

৮. সরকারি কোন বে-আইনি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে

৯. দেশের স্বার্থে বা জন স্বার্থে কোন কিছু ক্ষতিকর হলে আপনি রীট করতে পারবেন

১০. অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে

১১. আপনার জমি সরকার অধিগ্রহণ করলে উক্ত অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে

১২. সরকারি কোন সিদ্ধান্তে আপনি সংক্ষুব্ধ হয়ে রীট করতে পারেন।


-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' , 'একাত্তরের অবুঝ বালক' এবং ‘গায়েবি শৃঙ্খল’



সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×