somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারাগারে ডিভিশন কি? ডিভিশন সুবিধা কারা পায় এবং কিভাবে নিতে হয়?

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হঠাৎ কেউ গ্রেফতার হলে এবং গ্রেফতার পরবর্তী কারাগারে পাঠানো হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে ডিভিশনের বিষয়টি। বিশেষ করে ভিআইপি আসামীদের ক্ষেত্রে এটি একটি কমন বিষয়। এখন প্রশ্ন হলো ডিভিশন বিষয়টি কী? সহজে বললে কারাগারে ডিভিশন মানে হলো সামাজিক মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী একজন বন্দীকে কিছু অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, যা সাধারণ বন্দীদের দেওয়া হয় না। যেমন: আলাদা নির্ধারিত কক্ষে থাকা, ভালো মানের ও বেশি খাবার পাওয়ার সুযোগ, বই ও পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা, নিয়মানুযায়ী স্বজনদের সাথে বিশেষ অনুমতি নিয়ে অফিস রুমে তারা দেখা করার সুযোগ, ক্ষেত্র বিশেষ ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামিদের কাজকর্ম করে দেয়ার জন্য আরেকজন বন্দিও দেয়া হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসেবে আরেকজন ছেলে বন্দি আর নারী আসামিদের জন্য একজন মেয়ে বন্দি ।

ডিভিশনের কথা কোন আইনে বলা রয়েছে?

ডিভিশন বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে জেল কোড বা কারা বিধিতে। জেল কোডের ৬১৭ নাম্বার বিধিতে কারা ডিভিশন পাবেন তা উল্লেখ রয়েছে।

কারাগারে কয় ধরনের ডিভিশন রয়েছে?

কারাবিধি অনুযায়ী বন্দিদের কারাগারে তিন ধরনের ডিভিশন দেয়া হয়ে থাকে। ডিভিশন-১, ডিভিশন-২ এবং ডিভিশন-৩।

কারা ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য?

জেলকোডের ৬১৭ বিধিতে বলা আছে, ‘যারা ভালো চরিত্রের অধিকারী ও অনভ্যাসগত অপরাধী; সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে যাদের জীবনযাপনের ধরন উচ্চমানের এবং যারা নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ বা বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখা, সম্পত্তি সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত নন বা অন্য কাউকে এসব অপরাধ করতে প্ররোচিত বা উত্তেজিত করেনি তারা ডিভিশন-১ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন।

এছাড়া বিধি ৬১৭ (২)-এ বলা হয়েছে, ‘নাগরিকত্ব নির্বিশেষে সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে জীবনযাপনের ধরন উচ্চমানের বন্দিগণ ডিভিশন-২ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন। অভ্যাসগত বন্দিগণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই শ্রেণির বহির্ভূত হবে না, সরকারের অনুমোদন বা পুনর্বিবেচনার শর্তে শ্রেণি বিভাজনকারী কর্তৃপক্ষকে বন্দির চরিত্র এবং প্রাক পরিচিতির ভিত্তিতে এ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ক্ষমতা দেওয়া হবে।
যেসব বন্দি ডিভিশন ১ ও ২-এর অন্তর্ভুক্ত নয় তারা তৃতীয়টির অন্তর্ভুক্ত হবেন।

সহজ করে বললে ডিভিশন-১ পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিরা হলেন:

সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি:

সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী (সিআইপি) বা একই ধরনের সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হন।
সাধারণত ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সের ১ থেকে ১৮ নম্বর পর্যন্ত অবস্থানে থাকা সব সাবেক ব্যক্তিবর্গ এই শ্রেণীর অন্তভুক্ত হয়ে থাকেন। এছাড়াও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক বীরত্বসূচক মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি, প্রফেসর অফ ইমিরেটাস হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরাও ডিভিশন-১ এর সুবিধা পাবেন। এর বাইরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শক্রমে সময়ে সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিবেচিত ব্যক্তিরাও এই সুবিধা পেতে পারেন।

ওদিকে নাগরিকত্ব নির্বিশেষে সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে জীবনযাপনের ধরন বিবেচনায় অন্য উচ্চমানের বন্দিগণ ডিভিশন-২ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন।

যেসব বন্দি ডিভিশন ১ ও ২-এর অন্তর্ভুক্ত নয় তারা তৃতীয়টির অন্তর্ভুক্ত হবেন।

ডিভিশন পেতে হলে করণীয় কী?

ডিভিশন পেতে হলে গ্রেফতারের পর যেদিন আদালতে তোলা হবে সেদিন জামিন শুনানির পর জামিন নামঞ্জুর হলে জেল কোডের বিধি-৬১৭ মোতাবেক ডিভিশনের দরখাস্ত দাখিল করতে হবে। দরখাস্তের সাথে কেন ডিভিশন প্রাপ্ত হবেন তার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। যেমন; সাবেক সংসদ সদস্য হলে তার সংশ্লিষ্টতায় গেজেট টি ফিরিস্তি আকারে দিতে হবে। সিআইপি হলে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টস্ দিতে হবে।
যদি আদালতে তা প্রদান করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করলেও কারা কর্তৃপক্ষস্বি-বিবেচনায় ডিভিশন প্রদান করতে পারে।

ডিভিশন না পেলে/দিলে করণীয়:

যদি কারা কর্তৃপক্ষ এমনটি না করে সেক্ষেত্রে ডিভিশন দেওয়ার জন্য প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা আদালতের কাছে আবেদন করতে হয়। আবেদন অনুমোদিত হলে কারা কর্তৃপক্ষ নির্দেশ অনুযায়ী সেই বন্দীকে ডিভিশন সুবিধা প্রদান করে। অথবা আদালতে দরখাস্ত দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট আদালত তা মঞ্জুর না করলে বা কারা কর্তৃপক্ষের বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে সন্তুষ্ট না হলে হাইকোর্টে রীট করা যেতে পারে।

-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ (কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু, 'অসমাপ্ত জবানবন্দী' এবং 'গায়েবি শৃঙ্খল'; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।



সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×