somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোয়াখালী বিভাগের দাবি কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?

১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাতীয় জুলাই সনদের চুড়ান্ত ভাষ্যে দুইটি বিভাগ গঠনের প্রস্তাব নিয়ে বির্তকের শুরু। যেখানে বলা হয়েছে;

“ ৮০। কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুইটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন: ভৌগোলিক অবস্থান ও যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুইটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন করা হবে”

বিশেষ করে বৃহত্তর নোয়াখালীর ভাষাভাষী প্রায় ১ কোটি মানুষের কোন মতামত না গ্রহণ করে, কোন প্রকার গণশুনানী ব্যাতিরেকে বৃহত্তর নোয়াখালীকে কুমিল্লা বিভাগের অর্ন্তভুক্ত করার প্রস্তাবে বৃহত্তর নোয়াখালীবাসী ( নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর জেলার জনগণ) আন্দোলনে নেমে পড়েছে। নোয়াখালীবাসীর দাবি তারা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের অধিভুক্ত। তাদেরকে নতুন বিভাগের সহিত অর্ন্তভুক্ত করতে হলে অবশ্যই তাদের কথা শুনতে হবে। তারা কি চট্টগ্রামে থাকবে, নাকি কুমিল্লার সাথে যাবে কিংবা আলাদা বিভাগ হবে এই সংক্রান্তে তাদেরকে না শুনে জুলাই জাতীয় সনদে এই বিষয়টি আনা একপ্রকার হটকারি সিদ্ধান্ত। তাছাড়া জুলাই বিপ্লব বিভাগ গঠনের তাহগদে বা বিভাগকে সামনে রেখে তো হয় নি! এমন অসংখ্য কথা আসছে। আসছে দেশের অর্থনীতি, রেমিটেন্সসে বৃহত্তর নোয়াখালীর অবদান এবং ভৌগলিক নানান গুরুত্বের কথা।

যাইহোক, আমরা আবেগী কথা বাদ দিয়ে নিম্নে কিছু যুিক্তি দেখতে পারি। যেগুলো বিবেচনা করলে বুঝা যাবে আসলেই নোয়াখালী বিভাগ পাওয়ার হকদার কিনা? এই যুক্তিগুলো নোয়াখালীর লোকজন বিভিন্ন ফোরামে উল্লেখ করেছেন। তা হলো:

কুমিল্লা বিভাগ কেবল প্রশাসনিক পুনরাবৃত্তি (administrative redundancy) সৃষ্টি করবে, কিন্তু জাতীয় বি​কেন্দ্রীকরণ নীতি, Blue Economy Policy, Vision 2041 বা Delta Pl​an 2100–এর কোনও মূল উদ্দেশ্যই পূরণ করবে না।
নিচে সব যুক্তি ধাপে ধাপে দেওয়া হলো। কুমিল্লা বিভাগ কেন অযৌক্তিক: নীতিগত, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ:

১️। Need-Based Decentralization নীতির পরিপন্থী
জাতীয় বিকেন্দ্রীকরণ নীতির (National Decentralization Policy Framework, 2012 Draft & Vision 2041) মূল উদ্দেশ্য হলো —
“অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে, ভৌগোলিকভাবে প্রান্তিক, ও প্রশাসনিকভাবে অবহেলিত অঞ্চলে বিভাগ স্থাপন করা।”

কিন্তু কুমিল্লা এমন নয় —
• এটি ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি, সরাসরি মহাসড়ক সংযুক্ত,
• অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগতভাবে ইতিমধ্যেই উন্নত,
• এখানে বহু সরকারি দপ্তর, শিল্প এলাকা, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান।
অর্থাৎ, কুমিল্লা বিভাগ করলে নতুন কোনো সুবিধা বা বিকেন্দ্রীকরণ হবে না, বরং প্রশাসনিক পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

২️। ভূগোলগতভাবে ঢাকা–চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল
• কুমিল্লা ভৌগোলিকভাবে ইতিমধ্যেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই বৃহৎ প্রশাসনিক কেন্দ্রের মাঝখানে।
• এখানে বিভাগ গঠন করলে দুটি বৃহৎ মেট্রো অঞ্চলের (Dhaka & Chittagong) মাঝখানে আবার একটি নতুন প্রশাসনিক স্তর তৈরি হবে, যা কার্যকারিতা না বাড়িয়ে বিউরোক্রেটিক ওভারল্যাপ সৃষ্টি করবে।
• অন্যদিকে নোয়াখালী দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত, যা চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে—একেবারে “peripheral zone”।

তাই বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন নোয়াখালীর, কুমিল্লার নয়।

৩️। উপকূলীয় উন্নয়ন ও Blue Economy–এর সঙ্গে কুমিল্লার কোনো সংযোগ নেই

• কুমিল্লা অভ্যন্তরভাগের জেলা, যার সমুদ্র বা ব্লু-ইকোনমি সংশ্লিষ্ট কোনো ভৌগোলিক অবস্থান নেই।
• অথচ সরকার “Blue Economy Policy 2014”–এর ধারা ৩(খ)–এ বলেছে,
“অর্থনৈতিক সম্ভাবনাযুক্ত উপকূলীয় এলাকাগুলোকে বিকেন্দ্রীভূত শাসনের অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
• অর্থাৎ ব্লু-ইকোনমি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, স্বর্ণদ্বীপ হলো অগ্রাধিকার এলাকা।
কুমিল্লা বিভাগ এই জাতীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।


৪️। জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র ইতিমধ্যেই উন্নত


• কুমিল্লা জেলার জনগণ উচ্চ সাক্ষরতার হার, উন্নত সড়ক, বাণিজ্যিক কেন্দ্র (কুমিল্লা EPZ) ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান–এর মাধ্যমে জাতীয় গড়ের চেয়ে এগিয়ে।
• অন্যদিকে নোয়াখালী অঞ্চলের উপকূলীয় উপজেলা (হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ) এখনো দুর্গম ও অবহেলিত।
তাই কুমিল্লা বিভাগ “need-based” নয়, বরং “comfort-based” — যা নীতিগতভাবে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করবে।


- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু, 'অসমাপ্ত জবানবন্দী' এবং 'গায়েবি শৃঙ্খল'; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×