দরজার আড়ালে অনেকদিন একা ছিলাম
অনেকদিন একা থাকার পর টেবিলটা মুছে টুছে চেয়ারটা টেনে পুরোনো পোকায় খাওয়া খাতাটা খুলে ধরতেই শত বছরের স্মৃতিগুলো পলকেই হানা দিতে লাগলো। আমিত্বকে এবার কাগজ থেকে ঘষে ঘষে কালচে শিকে পড়া রবারটা দিয়ে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করতে যেতেই মনে হলো,
আশপাশে কেউ আমাকে দেখছে!
চশমার ঘষটে যাওয়া লেন্সটা তো কিছু দেখছে না।
তবে যারা দেখছে তারা কি আমার মনের ভেতরে থেকেই দেখছে?
এরপর কাগজটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হাত পাকালাম ট্র্যাশবক্সটার দিকে। সেখান থেকে তিনদিনের বাসিন্দা তেলাপোকারা বেরিয়ে আসতেই আমি ছুট দিলাম জানলার দিকে।
ভয় পেয়ে আমি ছুট দিই নি!
ওই কালো তেলচিটে পোকাদের যেমন নতুন একটা পাথরের আঘাত পেতেই মনে পড়ে গেলো বাইরেও একটা মাটি আছে, একটা পাতা আছে, ঘুনে ধরা কাঠ আছে, তীক্ষ্ণ চোখের সূর্য আছে তেমনি আমিও-
আমারও মনে পড়ে গেলো আমার বাইরেও একটা, এই জানলাটার বাইরেও কিছু একটা আছে।
ক্যাঁচক্যাঁচ করে ওঠা জানলার কবাট খুলতেই দুইদিনের বন্ধ বাক্সে সূর্য হানা দিতে আসলো। আমি চোখ মিটমিট করে তাকিয়ে দেখি, আমার বাইরেও একটা ধুলোমাখা রাস্তা আছে, কাপড় ধুচ্ছে এরকম একজন ঘর্মসিক্ত নারী আছে, সামনের তিনতলা বাড়িটার ছাদে কয়েকটা টবে কুঞ্জচাঁপার ফুল আছে, সেই ফুলে পানি দিতে আসা সদ্য জড়তা নিয়ে থাকা মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে আছে, দুপুর জিরোনো কাকের একটা সঙ্গী আছে, ক্লান্তিহীন সূর্যের ক্লান্তিভরা দীপ্তি আছে...
চকিতে আমি কাগজটার দিকে তাকালাম।
রাবারটা কালচে হয়েই আছে।
তবে আমিত্ব মুছে গেছে।