somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বন্দ!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ মানুষের দিকে আঙ্গুল তোলে তখনই যখন সে নিজে বুঝে নেয় আঙ্গুলের অপরপাশের মানুষটির মতের সাথে তার মতের বিরোধ আছে। তার জিনগত স্বভাব, সে মতামতের অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকতে চায় না। সে সবসময় একটা সমাধান খুঁজে। হয় তার মত ধ্বংস হবে নাহয় অপরের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু তবুও দ্বন্দে থাকব না। দ্বন্দ থেকে বের হয়ে নিজের একটা গতি করতেই হবে।

আমরা যাকে দ্বন্দ বলি সেই দ্বন্দ আসলে দ্বন্দ না। তা মূলত দ্বন্দ থেকে বের হবার একটা প্রয়াস মাত্র। এখলাস সাহেবের ভাই সোহরাব হোসেনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত মনোমালিন্য চলছে। ঘটনা গড়ালো হাইকোর্টে। মামলা চলছে, সাক্ষী আসছে, সাক্ষ্য দিচ্ছে। দিনশেষে যে যার মতো বাড়ি গিয়ে মামলা জেতার একটা অভিনব পন্থা খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এখলাস সাহেবের পাশের বাসার তিন সন্তানের মা আমিনা বেগম রাতে তাঁর স্বামীকে বলতে লাগলেন, দেখেচ! মাটির ঢেলা কিভাবে এক পেটের ভাইয়ের সাথে দ্বন্দে লাগায় দিলো? আমিনা বেগমের স্বামী চুপ করে শুনে মাথা নাড়তে লাগলেন।

দ্বন্দ!

এখলাস সাহেব আর সোহরাব সাহেব দুইজন সাধারণ ভাষায় দ্বন্দে লিপ্ত হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু আসলে যে তাঁরা মানসিক ও আধিকারিক দ্বন্দ থেকে মুক্ত হবার জন্যেই কাঠগড়ায় মুখোমুখি হয়েছেন এই ব্যাপারটি দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।

একটা ফেনোমেনন আছে এ সম্পর্কে। টার্মটা হচ্ছে, Zeigarnik Effect. এটার মানে হলো, মানুষজন তখন খুব অস্বস্তিতে পড়ে যায় যখন সে সমাধান হয়নি এমন এক বা একাধিক পরিস্থিতিতে পড়ে। ধরো, তুমি একটা সমীকরণ সমাধান করতে পারছো না কিংবা সংখ্যাতত্ত্বের কোন প্রবলেম? অথবা জ্যামিতির কোন প্রুফ? যেহেতু এগুলো আমি সমাধান করতে পারিনি তাই এর আধাখেঁচড়া পরিস্থিতি আমাকে পীড়া দিতে থাকবে। একটা সমাধান চাই! একটা সমাধান চাই! এরকম তাড়না ভেতরে ভেতরে আঘাত হানবে। তখন সেই প্রবলেমের দিকে বারেবারে ছুটে গিয়ে সমাধান খোঁজা হয় যাতে অন্তর্নিহিত দ্বন্দের অবসান ঘটে। Zeigarnik Effect এভাবেই কাজ করে।

এখলাস সাহেবের সাথে সোহরাব সাহেবের। মামলা মোকদ্দমার দ্বন্দ এই অন্তর্নিহিত দ্বন্দেরই রূপ। আমি কেন আমার জমি পেলাম না? কেন আমাকে অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হলো? কেন আমাকে একটু বেশী দেওয়া হলো না? তার তো জমি আছে, আমার নাই। আমি তো ছোট ভাই? লোভ বলো আর বঞ্চনাই বলো দুটোই তৈরী হয় মানসিক অশান্তি থেকে। সেই অশান্তি থেকে পরিত্রাণের জন্যেই ছুটে যাওয়া হয় আরো ওপরে। আশা এবারে একটা মিমাংসা হবে। আমি এবার কিছুটা ভোগ করতে পারব।

এই এফেক্টটা নিয়ে অনেককিছু বলা যায়। এই এফেক্টটা এমন মাস্টারমাইন্ড একটা ফেনোমেনন যা দিয়ে ব্যাখা করা যায় কেন ভালোবাসার সম্পর্কগুলো গোলাপ পাপড়ির মতো ঝুরঝুর করে ভেঙ্গে পড়ে। কেন মানুষ ঝগড়া করতে শুরু করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, কেনো আমরা কোন রসাত্মক কিংবা ভালো লাগার বই একবার পড়তে শুরু করলে আর শেষ করে উঠতে পারি না।

যখন একটা থ্রিলার পড়তে শুরু করা হয় প্রতি মূহুর্তেই লেখকরা একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে নিজেরাও যেমন থাকেন অন্যদেরও তেমনি টেনে আনেন। ড্যান ব্রাউনের রবার্ট ল্যাংডনের সিরিজগুলোই মানানসই উদাহরণ। যেমন একটা অধ্যায় যদি ল্যাংডনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয় এর পরের অধ্যায়ে প্রেক্ষাপট পুরোই পাল্টে যাবে। দেখা যাবে এর পরের অধ্যায়ে প্যারিসের আন্ডারওয়ার্ল্ড কম্যুনের মধ্যে সভা চলছে বা ইত্যাদি। ওই প্রথম অধ্যায়ের ল্যান্ডনের অমিমাংসিত কাহিনীর মাঝেই শুরু হয়ে যাওয়া আরেকটি প্রেক্ষাপট - এই জিনিসটিই পাঠককে ধরে রাখে Zeigarnik Effect এর মাধ্যমে। আমরা উশখুশ করতে শুরু করি। কী হবে এরপর? কী হবে এরপর? শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি নাই!

এই যে "শান্তি নাই" - এই শান্তিটা নাই ওই এফেক্টের মাধ্যমে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ মানসিক দ্বন্দের কারণে। সেই দ্বন্দটা আমরা মোকাবেলা করতে চাই, সারভাইভ করতে চাই। কেননা আমরা অসমাপ্ত কিছু পছন্দ করি না। তাই আমরা মানুষ।

এই এফেক্টটার আলোকে ছোট দুইটা প্রবলেম, "প্রেমে পড়ার রোমাঞ্চটা প্রেমে পড়ার আগমূহুর্ত পর্যন্ত থাকে। যখন দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে সম্পর্ক শুরু করে দিলো তখনই তা হাওয়া। কেন?"

কিংবা, "আমরা কেন রাশিফল দেখি, হাত দেখাই?"
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×