somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবি ব্লগঃ হিমালয় কন্যা নেপাল - কাঠমান্ডুর পথে (প্রথম পর্ব)

২৫ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতি এবং তার বিবেক, সবাই বলে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারে আমি নাকি রোল নাম্বার ওয়ান! ঘটনা আসলে মিথ্যা না! বেশিরভাগ মাসেই আমি কিছু সময়ের জন্য ঢাকার বাইরে থাকি। মাঝে মাঝে মনে হয় ক্যারিয়ার ট্রাকটাই বদলিয়ে ফেলি।:):) কিন্তু এখন তো আর ইবনে বতুতা বা হিউ এর যুগ নেই, নতুবা ঠিক বদলিয়ে ফেলতাম! আমার নির্যাতনে আমার বাবা-মা অতিষ্ঠ। আমি যাই, বাধ্য হয়ে ওরাও আমার পিছে দৌড়ায়। অবশ্য বন্ধুদের সাথে এই সমস্যা নেই! যাই হোক, নেপালে আমি গিয়েছি দুইবার, প্রথমবার আকাশ পথে (ঘটনা বিহীন) আর দ্বিতীয়বার একেবারে মুড়ির টিনে চেপে(ঘটনা এত বেশী যে লিখে শেষ করা অসম্ভব)। দুইবার যাওয়ার মাঝে গ্যাপ ছিল মাত্র ২৫ দিন। তাই বরং দ্বিতীয়টাই লিখি। :):)

হিমালয় দুহিতা, প্রকৃতির রানী ইত্যাদি শুনতে শুনতে একদিন গাটরি বোঁচকা নিয়ে আমরা ৩৮জন ফ্রেন্ড মিলে অটো (যারা অটো মানে জানেন না, তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই, মেডিকেল কলেজে একেবারে সরকারী অফিসের বন্ধ ছাড়া কোন বন্ধ নাই, তাই বাধ্য হয়ে নিজ দায়িত্বে মাঝে মাঝে পালাতে হয়) নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, উদ্দেশ্য ১২ দিন নেপাল এবং দার্জিলিং এ বান্দরামী করা (দেশে আর কত?):P:P:P। যাত্রা শুরুতেই টের পেলাম মানুষ সামলানো যায়, কিন্তু ৩৮×২=৭৬টা লাগেজ?! ওরে আমার খালা, কে জানত প্রাণহীন লাগেজের এত্ত শক্তি? ঘাম ঝড়িয়ে তবে ছাড়ল! অক্টোবরের ৩০ তারিখে অনেক ঝামেলা এড়িয়ে পুরো রাত জার্নি করে পরের দিন সকালে পৌঁছলাম বুড়িমারি বর্ডার।


সবার চোখ এড়িয়ে তোলা ছবি (ছবি তোলা নিষিদ্ধ কিনা;))

দিল্লি বহুদূর! মানে, নেপাল বহুদূর!

বুড়িমারির শান্ত পরিবেশ, বাংলার খাঁটি দৃশ্য যাকে বলে।

আমাদের লাগেজের এক অংশ। এইইইই শেষ নয়। :|:|

ভ্রমনপথ হিসেবে বাই রোড বেছে নেয়ায় আমরা একদিনে তিনটা দেশে পা দিলাম, বাংলাদেশ, ভারত আর নেপাল। এর মাঝে ভারতের ভিসা পাওয়ার যন্ত্রনার কথা মনে হলেই মন চায় ইটা মারতে X(X(। বাংলাদেশ বর্ডার অনেক ভালো, তাড়াতাড়িই ছাড়ল। সকলে “আমরা করব জয়” গান গাইতে গাইতে ঢুকে পড়লাম নো ম্যান্স ল্যান্ডে। ওইটুকুর যা শান্তি ছিল, এরপর আরেক দফা চেকিং ভারত বর্ডারে, চেংড়াবান্দায়। সব ঝামেলা মিটিয়ে ভারতের বস্তাপচা ট্যাক্সি চেপে রওনা দিলাম ভারত-নেপাল বর্ডারের দিকে। চারপাশের দৃশ্য দেখে বাংলাদেশের সাথে পার্থক্য করা মুশকিল। সমরেশের গোয়েন্দা অর্জ়ুনের জলপাইগুড়ি আর শিলিগুড়ি পার হয়ে পৌঁছলাম রাণীগঞ্জ। অতি অখাদ্য জায়গা, একেবারেই খাবার কিছু নেই! তবে চমৎকার কিছু চা বাগান আছে। শেষকালে ডাবে প্রাণ রক্ষা করলো। কিন্তু এদের আর চেকিং শেষ হয় না। শেষে কেউ কেউ যখন রাণীগঞ্জে সংসার করার প্লান শুরু করলো, তখন খবর এলো যে ভারত বিএসএফ বিশ্বাস করেছে যে আমরা সকলেই নিরীহ, কারো মনে বোমাবাজির ইচ্ছে নেই।(তবে থাকলে দুই একটা মেরে দিয়ে আসতাম, এমন জ্বালানো জ্বালিয়েছে X(()। অবশেষে শেষ বিকেলের আলোয় ঢুকলাম নেপালে, কাঁকড়ভিটায়। নেপালে প্রবেশের পথটা অপূর্ব! তবে ডিজাইনের মাঝে চায়নিজ আর্কিটেকচারের ভাব লক্ষণীয়।


নেপালে ঢোকার মুখে।

রাতটা কাঁকড়ভিটাতেই কাটাতে হলো, রাণীগঞ্জের চেয়েও অখাদ্য জায়গা! সাথে নেপালী সিম ছিল, কিন্তু নেটওয়ার্ক পেতে শুধু গাছে উঠতে বাকি ছিল, তাও পাওয়া যায় কি যায় না। হোটেলের অবস্থাও তথৈবচ! রুমে পারলে দেয়াল থেকে প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে, কিন্তু আবার একটা সুইমিংপুলও আছে। যদিও নামেই সুইমিংপুল, ব্যবহার করা হয় দুনিয়ার আবর্জনা আর পুরনো হার্ডড্রিংসের বোতল রাখার কাজে।:P:P:P

পরের দিন রওনা হলাম কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে। ৩৬ ঘন্টার ভয়াবহ জার্নি। তখন টের পেলাম বাংলাদেশ বাসের মাহাত্ব্য! নেপালের বাসের অবস্থা খুবই খারাপ, মুড়ির টিন বললে মুড়ির টিন রাগ করে জানালা দিয়ে লাফ দিতে পারে, এমনই অবস্থা খারাপ। আর আমরা যারা ব্যাক সিটার তাদের কষ্ট দেখে বাসটাও বুঝি লজ্জা পেলো, কিন্তু চালকের হুশ নাই! এক পাশে সুউচ্চ পাহাড়, অন্য পাশে ততোধিক গভীর খাদ, চালকের ভাব ভংগী দেখে মনে হল শাহবাগে গাড়ির পাল্লা দিচ্ছে।তবে অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য। পুরো নেপাল ঘেরা পাহাড়ী নদী দিয়ে।ভোরের কুয়াশায় যে অপূর্ব দৃশ্যের সূচনা হল তা বর্ননা দেয়ার ভাষা নাই। বরং দুই একটা ছবিই দিয়ে দেই।



এর মাঝে শুরু হল আরেক ঝামেলা। সন্ধ্যার দিকে একটা এক্সিডেন্টে রাস্তা হয়ে গেলো ব্লক।:((:(( নেপালে মনে হয় এটা কমন ব্যাপার। কারন আগের বারও পোখারা যাবার সময় এক্সিডেন্টে আটকা পড়েছিলাম। তবে এটা বেশী ভয়াবহ ছিল। ধারে কাছে ৫০ কিমির মাঝে না আছে কোন লোকালয় না আছে কিছু। মাইলের পর মাইল গাড়ির লাইন লেগে গেলো। এক জায়গায় আটকে থাকলাম সারা রাত। ভাবলাম, সকালে ঠিক হবে। বিধি বাম, সকালে শুরু হলো মাওবাদী সমর্থকদের ড্যাগার টাইপ ব্যাপার নিয়ে মারামারি, সে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা! সামনের বাসটিও ঢিল খেল, আল্লাহর রহমতে আমাদের বাস ঠিক ছিল। তাতে কি? ১৫ ঘন্টা পানি, খাবার আর বাথরুম ছাড়া থেকে আমরা পারলে পাঙ্খা লাগায়ে বাংলাদেশে ফিরি। নেপালের পুলিশ বাংলাদেশের চেয়েও এক কাঠি সরেস, কারো কোন মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হলোনা। তবে বেলা ১১টার দিকে আর্মি এসে ঠিক করলো সব কিছু, আবার রওনা দিলাম।


এই সেই অপূর্ব, মানে কালান্তক জায়গা যেখানে আমরা আটকে ছিলাম।

গাড়ির বিশাল লাইন, আরেক পাহাড় থেকে তোলা ছবি।

রওনা দেয়ার পর।

কাঠমান্ডুতে প্রবেশের মুখে।

কাঠমান্ডু পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। কাঠমান্ডু গিয়ে সবাই শান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম!হায়, তখন যদি জানতাম যে ওটা ছিল কেবল শুরু, সিনেমা এখনো শুরুই হয়নি! যাই হোক, যাত্রার কষ্ট ভুলতে সেই রাতে সবাই ছিলাম পার্টি মুডে। সেদিন ছিল আবার শারমিনের জন্মদিন। কেক, বেলুন আর চিৎকারে পার্টি জমল বটে। কেকটা আসলেই ইয়ামি ছিল, ছবি দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না।


এরপর বের হলাম রাতের কাঠমান্ডু দেখতে। আমরা ছিলাম থামেল এরিয়াতে হোটেল তিরুপতিতে। আগের বার আমি ছিলাম হোটেল এভারেস্টে। নেটে এভারেস্টের বর্ননা দেখে মাথা গরম হলেও আদতে দাম অনুযায়ী হোটেল যাচ্ছেতাই!বেশ পুরনো হোটেল। বরং তিরুপতি বাজেট হোটেল হলেও অনেক ভালো। তবে আমার “ইয়াক এন্ড ইয়েতি” হোটেলটা অনেক ভাল লেগেছে। বাজার থেকে বেশ খানিকটা দূরে হলেও চমৎকার লবি আর খাবারও ভালো। থামেল নেপালের মোটামোটি পশ জায়গা। তবে দামের জ্বালায় কিছুতেই হাত দেয়া গেলোনা। পরে আমরা টের পেয়েছি যে থামেলে যা দাম, বাইরে সেই জিনিসই ১/৩ দামে পাওয়া যাচ্ছে। শুধুমাত্র ইউরোপীয়ানদের জন্য এত দাম! পরিষ্কার পথঘাট, তবে সবই সরু। গাড়িও বেশ কম। পুরো নেপালেই বিদ্যুত সংকট। রাত সাড়ে আটটার মাঝে শহর অন্ধকার। রোড লাইট ও এত কম যে কি বলব! মোট কথা সে যে রাজধানী তা বোঝার উপায় নেই!তবে, পুরো শহরেই একটা শান্ত ভাব, না গেলে বোঝা যাবে না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে হোটেলে ফিরে আসলাম। পরের দিন ছিল প্রধান আকর্ষন, কাঠমান্ডু দর্শন।:D:D:D


হোটেল এভারেস্ট।

এভারেস্টের লবির স্যুভনির দোকান।

হোটেল ইয়াক এন্ড ইয়েতি।


হিমালয় কন্যা নেপাল- কাঠমান্ডু (দ্বিতীয় পর্ব)
হিমালয় কন্যা নেপাল – মনোকামনা ও সারেংকোট (তৃতীয় পর্ব)
হিমালয় কন্যা নেপাল – পোখারা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৩৪
৩২টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×