somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবি ব্লগঃ হিমালয় কন্যা নেপাল – মনোকামনা ও সারেংকোট (তৃতীয় পর্ব)

০২ রা এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাঠমান্ডু থেকে পোখারা ৫/সাড়ে ৫ ঘন্টার রাস্তা, তবে পাহাড়ী এবং সরু বলে মাঝে মাঝে আরো অনেক সময় লেগে যায়। আর যদি কোন কারনে রাস্তা ১০ মিনিটের জন্যও ব্লক হয় তাহলে তো কথাই নেই!:|:| ওই জাম ছাড়তে মাঝে মাঝে ৫/৬ ঘন্টাও লেগে যায়। শেষ মূহুর্তের শপিং এর জন্য একটু দেরীই হয়ে গেল রওনা দিতে।:P পরবর্তী গন্তব্য ছিল মনোকামনা। সাউথ এশিয়ার সবচেয়ে বড় কেবল কারে না চড়লে নেপাল দর্শন পুরো কি করে হয়? মনোকামনা কাঠমান্ডু থেকে দুই ঘন্টার রাস্তা, তবে সমস্যা হচ্ছে দুপুর ১টার মাঝে না পৌঁছালে সেটা লাঞ্চব্রেকের জন্য দুই ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো, একেবারে কাঁটায় কাঁটায় ১২টাতেই পৌঁছলাম। কাঠমান্ডু থেকে পোখারার রাস্তার দৃশ্যের কোন তুলনা নেই, মনে হলেই ইচ্ছে হয় আবার যাই!

কোন এডিট করা হয়নি, আকাশের রঙটাই ছিল এমন!

“রুকখোলা সেতু”। অসংখ্য ব্রিজ় পার হতে হয় পোখারা যাওয়ার পথে, সবকিছুর শেষেই দেখলাম খোলা লেখা। কে জানে খোলা মানে সেতু কিনা!

৩টা পাহাড় কেবল কারে পাড়ি দিয়ে হয়, প্রায় ৩.৬ কিমি রাস্তা।সর্বোচ্চ টাওয়ার সী লেভেল থেকে প্রায় ১৩০০ মিটার উঁচুতে। প্রথম পাহাড় পার হতেই একেবারে মেঘের সমুদ্রে, আর যদি একটু বৃষ্টিভাব থাকে তাহলে তো কথাই নেই। সে এক অসাধারন অভিজ্ঞতা! মালয়েশিয়ার গ্যাংটিন হাইল্যান্ডর কেবল কারের চেয়ে আমার এইটা বেশী পছন্দ হয়েছে। কারন নীচের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য! পাহাড়ী খরস্রোতা নদী আর ঘন সবুজ পাহাড়। বানর দিয়ে ভরা। তবে বেশ ধীরে ধীরে চলায় আমি একটু হতাশ! আরেকটু যদি দ্রুত হত, তাহলে আরো বেশী ভালো লাগতো! অবশ্য এতেই আমার অনেক বন্ধুর মাথা ঘুরিয়ে অস্থির!!! মাঝে দেখলাম দুই একটা ভাঙ্গা কারে চড়ে ছাগল যাচ্ছে, বলির ছাগল। পাহাড়ের ওপাশে মনোকামনা মন্দির। দর্শনার্থীরা আগেকার দিনে এই দীর্ঘ কঠিন পথ পায়ে হেঁটে যেত। কথায় আছে, যারা যেত তাদের সকল মনের বাসনা পূর্ণ হত। এখন অবশ্য আর অত কষ্ট কেউ করে বলে মনে হয়না।

মনোকামনা কেবল কারে যাবার প্রবেশপথ।










কেবল কারের যাত্রার পরও বেশ খানিকটা পথ পায়ে হেঁটে উঠতে হয়, মন্দিরটা এতই উঁচুতে। মন্দির দেখে বিশেষ পছন্দ হলোনা, বেশ নোংরা।:| এর মাঝে এখানে সেখানে বলির ছাগল বাঁধা অথবা বলি হওয়া ছাগল কাটা হচ্ছে। যাওয়ার পথটাও ততোধিক নোংরা। পথের দুই পাশে চূড়ি-মালা আর সস্তা খেলনার দোকান। ওহ হ্যাঁ, আর সবুজ কমলার গাছ! দেদারসে বিক্রি হচ্ছে পূজার থালা আর ফুল। তবে মন্দিরের উপর থেকে নীচের দৃশ্যের বর্ণনা দেয়ার ভাষা নেই! টুং টাং শব্দে ঘন্টাগুলো বাজছে আর বাতাস প্রায় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে…..অসাধারন!!!:):)





ওখানেই দুপুরের খাবার সেরে বিকেলে রওনা দিলাম পোখারার উদ্দেশ্যে। পোখারায় ঢুকে সব ক্লান্তি এক নিমিষে দূর হয়ে গেল! শান্ত, সিগ্ধ এবং চরম রোমান্টিক একটা শহর।:) বিশাল ফেওয়া লেকের উপর দিয়ে বয়ে আসা হাওয়া পুরো শহরে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে যেন। রাতে শহরের দোকানগুলো একটু দেখে হোটেলে ফেরত গেলাম। কারন পরদিন ভোর ৪টায় উঠে আমরা সূর্যদয় দেখতে যাবো সারেংকোটে, হিমালয়ের দেশে এসে হিমালয় না দেখলে আর দেখলাম কি? অবশ্য এভারেস্ট শুধুমাত্র কাঠমান্ডু থেকে দেখা যায়, এখানে আমরা দেখবো অন্নপূর্না পর্বতমালা।

ভোর সাড়ে ৪টায় যখন রওনা দিলাম, পুরো পোখারা তখন ঘুমিয়ে। ঘুটঘুটে অন্ধকার, রাস্তায় মাঝে মাঝে ডিম লাইটের মত রোড লাইট আছে বটে, তবে তা ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরী ছাড়া কোন উপকারেই আসছে না! রওনা দেয়ার পর টের পেলাম ঠান্ডা কাকে বলে! সোয়েটার, শাল, ডাবল জিন্স কোন কাজেই এল না, যেখানে সুযোগ পাচ্ছে ঠান্ডা কামড় বসাচ্ছে, কিছুক্ষনের মাঝেই আমাদের নাক আর গাল লাল টকটকে হয়ে গেল। উঠছি তো উঠছিই, উঠা আর শেষ হয়না!ঘন কুয়াশায় ড্রাইভার যে কি দেখে চালাচ্ছে আল্লাহ মালুম। টিকিট কেটে প্রথম চেকপোস্ট পার হতেই এক নেপালি মেয়ে তার চায়ের কেটলী নিয়ে আমাদের গাড়ীর পিছে দাঁড়িয়ে গেল! :-*:-*আমরা টাশকি খেয়ে দেখলাম, গাড়ীর ভিতরে এত কাপড় পরেও যেখানে আমাদের অবস্থা শোচনীয়, সেখানে এই মেয়ে শুধু পাতলা থামি আর ব্লাউজ পরে গাড়ীর হ্যান্ডেল ধরে দিব্বি দাঁড়িয়ে চললো!! এটাই নাকি নিয়ম, আমাদের গাড়ীর কাউকে অন্য কেউ চা/কফি দিতে পারবে না, আমাদের খেতে হলে ওর থেকেই খেতে হবে। যখন সারেংকোট পৌঁছলাম, তখনো ঘুটঘুটে অন্ধকার! ভাঙ্গা সিঁড়ি বেয়ে একেবারে উপরে উঠার পর মনে হলো আরেকটু হলেই বুঝি আকাশ ধরে ফেলব! সমস্ত পোখারা মেঘের নীচে ঘুমিয়ে, শুধু কিছু ঘরে টিমটিমে বাতি জ্বলছে।



কনকনে বাতাসের আওয়াজ আর পুব আকাশে হাল্কা লালিমা এক অপূর্ব পরিবেশের সৃষ্টি করলো।মনে হলো কিছু একটা বলি, কিন্তু প্রাণপণ চেষ্টা করেও একটা লাইন মাথা থেকে বের করতে পারলাম না। জ়ীবনে প্রথমবারের মত কবিতা না লিখতে পারার দুঃখে কাতর হলাম!:|:| অবশ্য বেশীক্ষনের জন্য না, কারন ততক্ষনে আকাশ ধীরে ধীরে ফরসা হতে শুরু করেছে।অসম্ভব টেনশনে ছিলাম আমরা, কারন অনেকেই এতদূর এসেও মেঘের কারনে সূর্যদয় ঠিক করে দেখতে পারে না, বছরের বেশীরভাগ সময়েই মেঘে ঢাকা থাকে। কিন্তু আল্লাহ চাইলেন আমরা তার নেয়ামত দেখি। সূর্যের প্রথম কিরণ অন্নপূর্ণা রেঞ্জে পড়া মাত্র যে দৃশ্যের সূচনা হলো তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না! আলোকরশ্মী সবার প্রথমে সর্বোচ্চ চূড়া “ফিস টেইল” এ পড়লো। মাছের লেজের মত আকৃতি, এই কারণে এই নাম। প্রথমে ফিস টেইল, এরপর তার পরবর্তী চূড়া, এরপর তার পাশে, এভাবে ধীরে ধীরে সমস্ত অন্নপূর্না রেঞ্জ যেন হেসে উঠলো! ব্যাপারটা না দেখলে শুধুমাত্র বর্ণনা দিয়ে বুঝানো অসম্ভব! ওয়াও, অসাধারন, magnifique, জীবন ধন্য- এই জাতীয় শব্দ ছাড়া কারো মুখে কোন কথা নেই! আর চারিদিকে শুধু ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক! যদিও এই মূহুর্তকে মনে হয় বন্দি করা অসম্ভব!










চায়নীজ আরেকটা গ্রুপও ছিল খুব হাসিখুশী, তারাও এসে আমাদের সাথে পোজ দিল! এরপর আমরা যেটা করলাম, সেটার জন্য অবশ্যই অন্নপূর্ণা প্রস্তুত ছিল না! ৩৭ জন মিলে (আমাদের এক বন্ধু পারিবারিক কারণে কাঠমান্ডু থেকে ঢাকা ফিরে গিয়েছিল) চিৎকার দিয়ে আমাদের ব্যাচ সংগীত “ও পরাণের পাখি রে” গান ধরলাম!:D:D আমাদের ইচ্ছা ছিল পুরোটাই গাওয়ার, কিন্তু আশেপাশের লোকজন ভড়কে যাওয়ায় কিছুক্ষন গেয়েই থামতে হল! এরপর খানিকক্ষন বাংলাদেশীরা কত মহান(?) সে বিষয়ে স্লোগান দিয়ে নামলাম।:P:P তবে কেউই আমরা একবারে নামতে পারলাম না, কারন এখানেও শাল আর জাঙ্ক জুয়েলারীর দোকান! স্বাভাবিক কারণেই দামটা একটু বেশী। তারপরও নেপালি টুপি না কিনে কেউই নামলাম না। মেয়েদের জন্য স্পেশাল টুপি না থাকায় আমার মেজাজটা বড়ই খারাপ হল! কি আর করা! আর চায়ের স্বাদটা আর কি বলবো! এত জটিল চা মনে হয় অন্যকোথাও খাইনি! ওখান থেকে নামতে নামতে সকাল সাড়ে ৮টা বেজে গেলো! এরপর আমরা শহরে ফেরত গেলাম, কারন আমাদের পোখারা দর্শনই যে বাকি! :):)

ছবি ব্লগঃ হিমালয় কন্যা নেপাল - কাঠমান্ডুর পথে (প্রথম পর্ব)
ছবি ব্লগঃ হিমালয় কন্যা নেপাল – কাঠমান্ডু (দ্বিতীয় পর্ব)
হিমালয় কন্যা নেপাল – পোখারা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০১
২৭টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×