somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূটান: ল্যান্ড অব থান্ডার ড্রাগন (শেষ পর্ব)

২৯ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তাকিন প্রিজারভেশন কেন্দ্র থেকে আমরা গেলাম পার্লামেন্ট হাউজ আর রাজার প্রাসাদ দেখতে। পার্লামেন্ট হাউজও একই রকম দেখতে, শুধু এটা মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং। সেদিন কি বার ছিল মনে নেই, তবে বন্ধ থাকায় ভিতরে ঢুকতে পারিনি। ঠিক তার বিপরীত দিকেই রাজার প্রাসাদ। অবশ্য আরেকটা পাহাড়ের মাঝে। রাজা তখন ইউরোপ ভ্রমনে। তার বাগানের পরিচর্যা দেখলাম কিছুক্ষন। তারপর ঘুরতে ঘুরতে পিছনে গিয়ে দেখি, বিশাল ফাঁকা জায়গা। রাজার বসার জন্য আলাদা জায়গা আছে, স্টেডিয়াম টাইপ জায়গা। মনে হয় আগেকার দিনে প্রকাশ্যে এখানে বিচারকাজ চলত। ফাঁকা জায়গা দেখলেই চেঁচাতে ইচ্ছা করে। চমৎকার প্রতিধ্বনি হল। অবশ্য বেশীক্ষন এই খেলা চললো না, রাজার প্রহরী এসে ঘোষনা করল, এখানে চিৎকার করা নিষেধ।/:)/:) রাজার প্রাসাদও ড্রাগন দিয়েই ভরা। এই ড্রাগনের কাহিনীটা কি?!


পার্লামেন্ট হাউজ


রাজার প্রাসাদ







শহরে ফেরার পথে।

বিকালের মাঝেই সব স্পট দেখা শেষ। এরপর গাইড আমাদের থিম্পুর বিখ্যাত সবজী মার্কেট দেখাতে নিয়ে গেলো। বিশাল জায়গা জুড়ে মার্কেট। তিন/চার ভাগে বিভক্ত, যেমন প্রথম বিল্ডিং এ সবজী আর ফল, দ্বিতীয়টাতে শো পিস, তৃতীয়টাতে কাপড়, এরকম ভাগ করা। সব বিক্রেতা মেয়ে। দেখার আসলে কিছু নাই, খামোখা এরা এটা একটা স্পট হিসেবে সবাইকে দেখায়। কারন দাম এমনকিছু কম নয়, আর সূদূর ভূটান কে যাবে সবজী কিনতে! তাও আমরা কয়েকরকম ফল কিনে ফেললাম, নাম একটারও মনে নেই, তবে খেতে ভালোই ছিল। সব্জী মার্কেটের ঠিক বিপরীতে পাহাড়ী নদীর উপরে একই ডিজাইনের একটা ব্রীজ। ব্রীজ পার হয়ে স্যুভনির মার্কেট। যত উৎসাহ নিয়ে গেলাম, তার চেয়ে ১০ গুন হতাশ হয়ে ফিরলাম।:| দাম একেবারে মাথার ১০ হাত উপরে। একটা সামান্য লোহার ড্রাগনের দাম প্রায় ২৫০০ গুলট্রাম। দামাদামিতে মোটেই ইচ্ছুক না। আমার একটা ভূটানি ড্রেস কেনার ইচ্ছে ছিল, কোনভাবেই ৩৫০০ গুলট্রামের নীচে দেবে না। বিরক্ত হয়ে হোটেলে ফিরলাম।



স্যুভনির শপ।

এরপর সন্ধায় বের হলাম আশপাশ দেখতে। হাঁটতে হাঁটতে ওদের স্কয়ারে গেলাম। আড্ডা বা কনসার্টের জন্য জটিল জায়গা। বিশাল একটা ঘড়ি ঠিক মাঝখানে। সবাই এখানে সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আশে পাশের দোকান ঘুরে বুঝলাম ভূটানে আসলে কিছুই তৈরী হয় না, সব কিছু আমদানী করে বাইরে থেকে। একটা স্টাইলিশ কোট খুবই পছন্দ হল, হিসাব করে দেখলাম যে দেশে মেয়েদের কোট এর ডাবল দাম। কিনে ফেললাম। মজা হলো হোটেলে ফিরে। উলটে দেখলাম যে লেখা made in bangladesh।:-*:-* সবাই যে হাসির হাট টা এরপর বসালো সে আর বলার না।:|:|

পরদিন সকালে আমাদের বরফ দেখতে যাওয়ার পালা। শুনলাম শহরে নাকি এত বেশী পড়ে না, শহরের বাইরে যে পাহাড়ী জায়গা, সেখানে পড়ে।আমাদের গাইড আবার হোটেলের মালিকও। সেই নিয়ে গেলো। প্রথমে গেলাম ভূটানের যুদ্ধে শহীদদের উদ্দেশ্য গড়া স্মৃতিসৌধ দেখতে। শহর থেকে বেশ বাইরে। সৌধটা বেশ উঁচুতে। উপরে উঠে দেখলাম আবার সেই হিমালয় রেঞ্জ। কাঞ্চনজঙ্ঘা। দূরে বরফের পাহাড়, আর আশ পাশ পুরো সাদা হয়ে আছে বরফে।ভয়াবহ পিচ্ছিল, কয়েকবার আছাড় খেতে খেতে বাঁচলাম।:-*:-* একবার গেলে আর আসতে ইচ্ছে হয় না। অনেক ভিক্ষু আছে সেখানে, তারাই দেখভাল করে জায়গাটার। এমনিতেই আমার নাকের কোন অবস্থা নেই, তারউপর দেশেই আমাকে অনেকে মারমা/মুরং ডাকে। সেখানে যে আমাকে বেশীর ভাগই ভূটানি ভেবে বসবে সে আর বিচিত্র কি।:((:((

স্মৃতিসৌধ।






কিন্তু নরম বরফ কই?? স্নোম্যান আর স্নো অ্যাঞ্জেল কই?? মন খারাপ একটু পরেই উধাও হল, যখন আমরা গাড়ী নিয়ে আরো দক্ষিনে গেলাম। নরম বরফে ঢাকা পুরো পাহাড় আর পথ ঘাট। গাছের ডাল-পালা আর পাতা, সবই তুষারে ঢাকা। এখানে সেখানে মাঝে মাঝে পড়ছে, সে এক অপূর্ব দৃশ্য। গিয়েই তুষারে লাফ দিয়ে পড়লাম, ডুবে গেলাম সাথে সাথেই। বাতাস এখানে এতবেশী ঠান্ডা না। খানিকক্ষন ব্যর্থ চেষ্টা করলাম স্নোম্যান বানানোর, কিন্তু সবাই দিলো তাড়া। বেশী মানুষ নিয়ে যাওয়ার এই এক সমস্যা।



এরপর বাকি দিন শহরটা হেঁটে হেঁটে দেখলাম। এত শান্ত সিগ্ধ একটা শহর। রাজধানী শহর বোঝার কোন উপায়ই নেই। মানুষ কম, দোকান কম এমনকি রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুকুর টুকুরও কম। ভূটানি খাবারের অবস্থা বিশেষ সুবিধার না। আমার মা আবার বাইরে গেলে মিষ্টি ছাড়া কিছু খেতে চায় না।অনেক খুঁজে যা একটা কেকের দোকান পাওয়া গেলো, বেশীরভাগ কেকের স্বাদ অতি বাজে। ভূটানিরা খুবই সহজ সরল আর শান্ত স্বভাবের। রাতে আমাদের ডিনার ছিল থিম্পু রোটারী ক্লাবের সাথে। সেখানে খুবই সাধারন ভাবে তাদের অর্থমন্ত্রী এসে উপস্থিত। আমরা তো অবাক।:-*:-* সাথে পুলিশ তো দূরের কথা, সঙ্গীসাথীও মাত্র দুই জন। সবার সাথে করমর্দন করলেন, ছবি তুললেন। বিরক্তকর পুরো অনুষ্ঠান হাসিমুখে দেখলেন। ভূটানিদের ঐতিয্যবাহী নাচ দেখলাম। হাত পা নাড়ানো, আর তেমন কিছু না। একই মুভ বারবার করতেই থাকে করতেই থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনুষ্ঠানের শেষে নাচে সবার সাথে ওদের মন্ত্রীও যোগ দিলেন। কি সহজ স্বাভাবিক জীবনধারা।

আমাদের দলের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্যা

অর্থমন্ত্রী (মাঝে)।


মহা বোরিং গান এবং নাচ।

পরদিন ঢাকায় ফেরার তোড়জোড়। থিম্পুতে ইন্টারনেট ক্যাফে দেখেছি মাত্র একটা, পারোতে এসে দেখলাম এয়ারপোর্টে দুইটা মান্ধাতা আমলের কম্পিউটারে ফ্রি নেট আছে। খুবই অবাক হলাম। বড়লোক দেশগুলো যেখানে পয়সা ছাড়া একটা বাইটও ব্যবহার করতে দেয় না, সেখানে ভূটান ফ্রি দিচ্ছে। প্লেনে আবার সেই যা-তা খাবার নিয়ে উপস্থিত হল কেবিন ক্রুরা। তবে এবার চিনি গোলা পানিও কফি ভেবে গিলে ফেললাম।। এত চমৎকার সময় কাটালাম ভূটানে, তাদের একটা দিক না দেখার ভান করাই যায়।:):):)

ভূটান: ল্যান্ড অব থান্ডার ড্রাগন (প্রথম পর্ব)
ভূটান: ল্যান্ড অব থান্ডার ড্রাগন (দ্বিতীয় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৫
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×