কয়দিন আগে বলেছিলাম, সাভারে সাংবাদিক গুলা যেভাবে পৈতালের মত আচরন করতেছে, পাবলিক যে তাদের কে ধরে মাইর দিচ্ছেনা, সেটা তাদের বাপের ভাগ্য।
আপনার অনুভূতি কী? জাতীয় রঙ তামাশার পর, আরেক চুতিয়া গেছিল মাইক নিয়ে ঝামেলা করতে। দেশ যখন শোকস্তব্ধ, মাতারী তখন ছিল চোষায় ব্যাস্ত। "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলে নাকি মানুষ বিশৃংখলা করতে চাচ্ছে। কলেমা শুনলে চুতিয়ার গা জ্বলে। হেফাযতীরা নাকি গেছিল জিনিস পত্র চুরি করতে। খালি রিপোর্টিং করে ক্ষান্ত নেই, রীতিমত সেনা কর্তৃপক্ষকে আবদার ও করে বসল তাদের কে ঐখান থেকে বের করে দেয়ার জন্য ।
এমনি এমনি কি আর বলছি, তারা পৈতালের মত ঘুরতেছে, আর পাবলিক ধরে মাইর দিলে অবাক হবার কিছু থাকবে না?
এবার মাইক নিয়ে সোজা কবরে নাইমা পডেন আরেক আবাল রিপোর্টার। একটা কবরস্থানের আদব-শ্রদ্ধা যেমনে জুতাপিষ্ট করলেন, তা কোনভাবেই কাম্য নয়।
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যে হারে টিভি চ্যানেল এর লাইস্যান্স দেয়া হইছে সে তুলনায় কি মিডিয়া জগত তৈরী ছিল? তাড়াহুড়া কইরা টিভি খুইলা কেমনে সরকারী দলের চামচামি করা যাবে সেই ধান্দায় ব্যাস্ত ছিল মালিকেরা। একটা টিভি চালানোর জন্য যে মেধা, প্রতিভা, শ্রম দরকার সেটার তারা প্রয়োজন মনে করলেন না।
প্রশিক্ষনের বালাই নাই, মাইক ধইরা নামাই দিছে, সাংবাদিকতা করতে। তাই বলি, অকালে পাকলে যেমন হয়, মিডিয়া হইছে পিছলা।
কেমনে সাংবাদিকতা করতে হইব, কেমনে উপস্থাপনা করতে হইব, কেমনে ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্টিং করতে হইব, এসবের টেরনিং আদতে যে কাউরে দেয়া হয় নাই সেটা তাদের কর্ম কান্ড দেখলে বোঝা যায়।
আপনি যখন কোন ঘটনাস্থলে থাকবেন তখন সেই ঘটনাস্থলের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আপনার দ্বায়িত্ব। সেটা যদি শত্রুপাড়াও হয়, তবুও। নইলে ঘটনাস্থলে আপনার দাম্ভিক আচরনের কারনে, আপনাকে পিটা খাইতে হবে এটাই স্বাভাবিক।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জায়গায় এই অকাল পিছলা শ্রেনীর মাইর খাওয়ার ঘটনা সে কথাই প্রমান করে। আপনি জায়গায় গিয়া মাতবরি করবেন, আবার পাবলিক ধরে চুমাইলে "উহ আহ, মরি মরি" করে হাউ মাউ করবেন; আর আপনারে ধরে দুইটা কিল দিলে, কাইন্দা কাইটা অস্থির হইয়া যান। বাক স্বাধিনতা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধিনতা, গনতন্ত্রের কথা কইয়া আকাশ পাতাল ভারী করে ফেলবেন, এটা হইতে পারেনা।
সংবাদ মাধ্যম হিসেবে বরঞ্চ আপনার ভূমিকাই বেশী। আপনাকেই শতভাগ সহন শীল হয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে হবে। মাইক নিয়ে, কে কেন গেছে বলে হা হতাশ করবেন , চাপা পড়া মানুষের অনুভূতি কি জানতে চাইবেন , জুতা নিয়ে কবরে নাইমা পড়বেন, টিভিতে লাশের স্কোরবোর্ড দেখাইবেন; আর পাবলিক মুখ বুইঝা সব সহ্য করব, সেটা হতে পারেনা। যে কোন সময় পাবলিকের চান্দি গরম হয়ে গেলে পিঠে দুই-চারটা পড়তেই পারে।
[[ টেরনিং যে একেবারে দেয়া হয়নাই তা না। সাম্প্রতিক সময়ের রিপোর্টার, উপস্থাপকদের বেয়াদিবির টেরনিং ঠিকি দেয়া হইছে। ফল স্বরুপ আমরা পাইছি কতগুলা পিছলা মিডিয়া। উপস্থাপক এখানে অনুষ্টান সঞ্চালনার চাইতে পক্ষপাতদুস্ট রেফারীর ভূমিকায় অবতীর্ন হন। রাজনৈতিক পক্ষ নিয়া প্রতিপক্ষকে হলুদ কার্ড আর ফাউল দিতে দিতে ক্লান্ত হইয়া যান। নিজে নিজে মতামত দেন, প্রতিপক্ষের কথা কাইটা দেন, স্টুডিও তে ডাইকা আইনা অপমান করেন, কথা বলতে দেননা। মনে কইরেন না, ঝাউড়ামি কইরা আপনারা জিতা যান। পাবলিক যে আপনাদের পিতা মাতাকে শ্রদ্ধা ভরে স্বরন করে এই কথা কি আপনেরা জানেন? ]]]
আপনাদের কর্মকান্ড দেখে একটা গান মনে পড়ে; "আম খাইয়ো, জাম খাইয়ো, কাঠাল খাইয়ো না; অল্প বয়সে বিয়া কইরা প্রানে মইরো না"
বাংলাদেশের মিডিয়ার [মূলতঃ ব্রডকাস্ট মিডিয়া] হয়েছে সেই দশা। অকালে পেকে গেছে। গুনতে গেলে ২০-২২ টা টিভি চ্যানেল হয়েছে। সব গুলোই রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদনপ্রাপ্ত। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটা টিভি চ্যানেল মোটামোটি প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে এবং টি আর পি রেটিং এ সেই চ্যানেলগুলোই এখনো শীর্ষে আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে যে সমস্ত টিভি চ্যানেল লাইসেন্স নিয়ে মাঠে নেমেছে, তার সিংহ ভাগের অবস্থা ভয়াবহ। এর মধ্যে খুব কম টিভি চ্যনেলই দর্শক প্রিয়তা পায়। বাকী গুলোর হাবভাব দেখলে মনে হয়, এগুলা বিটিভির শাখা চ্যানেল খুলছে। একটা টিভি চ্যানেল তো, ব্রডকাস্টে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যাপক সুনাম [দূর্নাম] কুড়িয়েছে।
বলি কি? রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আপনি টিভি চ্যানেল এর লাইস্যান্স নিতে পারবেন, টাকা খরচ করে যন্ত্রপাতি কিনতে পারবেন, নামের পাশে HD, লাগাইতে পারবেন; কিন্তু টিভি চালানোর জন্য যে মেধা, মিডিয়াজ্ঞ্যান, প্রতিভা দরকার সেটা আপনা রাতারাতি তৈরী করতে পারবেন না। কিছু জিনিষ বাই বর্ন থাকতে হয়, কিছু জিনিষ তৈরী করতে হয়।
এটাতো গেল শুধু খবর আর টক শোর কথা। এই যে দুই ডজন টিভি চ্যানেল, দর্শক দের বিনোদন চাহিদা মেটাতে এগুলার ভূমিকা কি? ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টা খবর দেন, আর টক শো চালাইয়া পার করেন। বাকী সময়ে চলে বস্তাপচা নাটক আর অনুষ্টান। টিভি মিডিয়ার বাহুল্যের কারনে বাংলাদেশের কিছু নতুন মিডিয়া গোষ্টি পয়দা হয়েছে। তারা যে কি নাটক বানায়, আর কি পোগ্রাম বানাই, বোঝা মুশকিল।
এক সময় বাংলা নাটকের ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়তা। মানুষ সাপ্তাহিক নাটক দেখার জন্য দিন গুনে গুনে অপেক্ষা করত। সবাই ভিড় করে শুক্রবারে বিটিভির সিনেমা দেখতো, আলিফ লায়লা বলতে ফিদা ছিল পাবলিক। আর বর্তমান আধুনিক যুগে, এত আধুনিক প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি নিয়া বর্তমান মিডিয়া গুলার ভূমিকা কি? খুবই হতাশাজনক।
ভূমিকা কিছুটা আছে, সেটা হল রাজনৈতিক দলাদলি, আর গরম গরম খবর আর ফুটেজ বিক্রী। সারাদিন ছাইপাশ দেখিয়ে টাইম পাস করা এই লোকগুলাই কিন্তু, আবার বড় গলায় চেচায়, হিন্দি সিরিয়াল দেশটারে খাইলোরে, ডরিমন বন্ধ কর।
[[বুঝিনা, ডরিমন এর মত একটা কার্টুন বন্ধ করে, শিশুদের বিনোদনের পথ বন্ধ করে দিয়ে উনারা কি উদ্ধার করে ফেলেছেন। শিশুরা কি তাইলে মুন্নি, শীলা, চামেলী, জিলাপী দেইখা হিন্দি শিখেনা? অশ্লীলতা শিখেনা? এখন কি তারা বড়দের মত খবর, টক শো, সিরিয়াল আর মুন্নী-শীলা দেখে টাইম পাস করবে?
কিন্তু, কেউ প্রশ্ন তুলেনা, তাইলে দুই ডজন মিডিয়ার ভূমিকা কি? তারাও তো, শিশুতোষ পোগ্রাম গুলো বাংলায় ডাবিং করে দেখাতে পারে।
..................না তারা দেখাবেনা, তাদের কাছে দর্শক বিনোদন মূখ্য নয়। এ কারনে উনারা সারাদিন খবর দেখান। কারন এতে লাভ বেশী, খবর-ফুটেজে টাকা বেশী, তাই তারা ধংসস্তুপে মাইক ঢুকিয়ে দিয়ে অমানুষের মত প্রশ্ন করতে পারে, জুতা পায়ে কবরে নেমে যেতে পারে। ]]
শেষ করার আগে বলতেছি, বেশী পিছলামি ভালো না। অফিসে থাইকা যাই করেন, অন্তত স্পটে থাকার সময় সাবধান থাইকেন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১:৫১