somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৎ ব্যক্তির জীবনের গল্প

১৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
[img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/189179/small/?token_id=f1e4f90d5ac5190968aae72464e14d9d
‘রফিক! কাল সন্ধ্যায় আমার বাসায়
আইসো, তোমার দাওয়াত’।

‘কি উপলক্ষে আঙ্কেল?’

হাসান সাহেব মৃদু হাসেন। ‘না, এখন
বলবোনা, সন্ধ্যায় বাসায়
আসো তারপরে বলবো’।

'ওকে আঙ্কেল, কাল
দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।'

হাসান সাহেব
হেঁটে হেঁটে মহল্লার
প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত
দিয়ে এলেন, সবার মনেই কৌতুহল,
কি এমন উপলক্ষ
যেটা তিনি কাউকে বলছেননা!

হাসান সাহেবের
মুখে মিটি মিটি হাসি, সবার জন্য
একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
ভূমি অফিসের তৃতীয় শ্রেণীর
কর্মচারী এই হাসান সাহেব,
মহল্লায় এসেছেন ৫বছর হলো। সবার
কাছেই তার পরিচিতি দজ্জাল
বউয়ের বেড়াল স্বামী হিসেবে।
প্রতিরাতেই ধুপ ধাপ শব্দে প্লেট-
গ্লাস ভাঙা, বউয়ের চিল্লা-
পাল্লা এবং রান্নাঘড়ের
হাঁড়ি পাতিল আছড়ানোর
শব্দে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এলাকার
লোকজন।

বউয়ের এতো চিৎকার
চেঁচামেচিতেও হাসান সাহেব
কোনো জবাব দেননা, জবাব
দিলে ঝগড়াটা জমতো ভালো।
কিন্তু হাসান সাহেবের এই
নিরবতা অসহ্য ঠেকে বউয়ের
কাছে, ঝগড়া করার জন্য উপযুক্ত
প্রতিপক্ষ না পেয়ে রাগে থর থর
করে কাঁপতে কাঁপতে হাসান
সাহেবকে এক প্রকার ঠেলেই ঘর
থেকে বাইরে বের করে দেয় বউ।

হাসান সাহেব চাইলে পুরুষ
নির্যাতন আইনে বউয়ের
বিরুদ্ধে থানায় নালিশ
জানাতে পারতেন, কিন্তু
তিনি তার কিছুই করেননা,
যেনো কিছুই হয়নাই এমন একটা ভাব
নিয়ে মহল্লার এক কোণের বন্ধ
দোকানটার সামনের
বেঞ্চিতে গিয়ে সটান
শুয়ে পড়েন।

রাতের আকাশের
তাড়া গুনতে গুনতে হাসান সাহেব
ভাবনায় পড়ে যান, দেশে পুরুষ
নির্যাতন বিরোধী কোনো আইন
আছে? আবার নিজেকে প্রবোধ
দেন, নাহ! বউয়ের
বিরুদ্ধে অভিযোগ
জানালে মানুষে কি বলবে!

বাঁশিতে তীব্র হুইসেল এবং ভরাট
গলায় চোরদের
উদ্দেশ্যে হুশিয়ারী উচ্চারণ
করতে করতে নাইট গার্ড
এসে গা ঘেঁসে বসে পড়ে। রাত
বিরোতে বাহিরে ঘুর ঘুর
করা হাসান সাহেবের
সাথে এলাকার নাইট গার্ডদের
দারুন একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে।

‘ভাই শইলডা ভালা নি?’
‘হ্যা, ভালো আছি, তোমাদের খবর
কি?’
‘আছি ভাই একরকম। তা ভাই আজকেও
বাইরে থাকবেন?’
‘হ্যা, বাসায় প্রচন্ড গরম, আমি আবার
গরম সহ্য করতে পারিনা’।
‘আজকেতো ভাই গড়ম নাই,
বাতাসতো ঠান্ডা।'

নাইট
গার্ডরা পরস্পরের
দিকে তাকিয়ে মুখ
টিপে হাসা হাসি করে।
হাসান সাহেব সবই দেখতে পান,
তবুও না দেখার ভান করেই ঝিম
মেরে পড়ে থাকেন,
ধীরে ধীরে মুখ খোলেন, 'আমি গরম
একদম সহ্য করতে পারিনা, ডাক্তার
বলেছে মাঝে মধ্যে খোলা হাওয়াতে ঘুমাতে।'

দাড়োয়ান আর কথা বাড়ায়না,
বাঁশিতে ফুক
দিতে দিতে এগিয়ে যায়,
হুশিয়ার...... সাবধান......
হাসান সাহেব শুয়ে থাকেন,
শুয়ে শুয়েই হারিয়ে যান দূর
আকাশের নক্ষত্রের রাজ্যে। অদ্ভুত
অদ্ভুত
নামে একটা একটা করে তারা গুনতে থাকেন,
শুক তারা, হাসি তারা, দুঃখ
তারা....

হাসান সাহেব জিকিরের
মতো করেই ধীর
লয়ে গুনতে থাকেন, দুঃখ তারা...
দুঃখ তারা............, চোখ
দুটি ঝাপসা হয়ে আসে, দুঃখ
তারাটাকে অনেক
বেশি কাছে মনে হয়, চোখের
কোণ
বেয়ে গড়িয়ে পড়ে লোনা পানি,
হাসান সাহেব চোখ মোছার
প্রয়োজন বোধ করেননা, নিশ্চুপ
পড়ে থাকেন। দুই একটা কুকুর এসে মৃদু
ঘেউ ঘেউ
করতে করতে দূরে চলে যায়।

জীবনের হিসেব
মেলাতে পারেননা রাহেলা বেগম,
সাংসারিক জীবনের ১০টি বছর
পার হয়ে গেলো, কি পেয়েছেন
তিনি। দুটি সন্তানের মুখের
দিকে তাকিয়ে পড়ে আছেন এই
সংসারে। মাস শেষ সাংসারিক
খরচের টানাটানি, মানুষ
কতভাবে অর্থ উপার্জন করে!
হাসানের কলিগরা একেকজন
ঢাকা শহরে আলিশান
বাড়ি গাড়ি করে ফেলেছে, আর
হাসান পড়ে আছে সততা নিয়ে।

নিকুচি করি এই সততার,
সততা কি সংসারে তেল-নুন
এনে দিবে!? ভালো একটা কাপড়
নেই, লজ্ব্বায়
কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া যায়না!
হাসানের এক কথা, সে হারাম
পথে উপার্জন করতে পারবেনা।
রাহেলার বুঝে আসেনা,
এখানে হারামের কি আছে!
ভূমি অফিসেতো এমনিতেই কত
রকমের লেনদেন হয়, মানুষের উপকার
করে যদি বাড়তি কিছু উপার্জন
করা যায় সেখানে হালাল-
হারামের প্রশ্ন আসবে কেনো?

নিজের বাবার
প্রতি মনটা বিষিয়ে ওঠে রাহেলা বেগমের,
এমন একটা লোকের
সাথে বিয়ে দিলো, সংসার
জ্ঞান যার শূণ্যের কোঠায়। এমন
সহজ সড়ল মানুষ
নিয়ে দুনিয়াতে চলা যায়!?

ঘরের
দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করেন
রাহেলা বেগম, ছেলে-
মেয়ে দু’টি ফ্যাল ফ্যাল
করে তাকিয়ে থাকে, স্কুলের
বেতন বাকি পড়ে আছে, খাতাও
শেষের পর্যায়ে।

মনে মনে পুরো পরিকল্পনাকে নতুন
করে সাজিয়ে ফেলেন হাসান
সাহেব। অনুষ্ঠানটা খুব জমজমাট
হতে হবে। ঠিক আসরের নামাজের
পর পর
লাশটা পড়ে থাকবে বাউন্ডারি ওয়ালের
পাশে।

আচ্ছা বাউন্ডারি ওয়ালের
সাথে বাড়ি খেয়ে মাথাটা কি থেতলে যাবে?
হাসান সাহেব ভাবনায় পড়ে যান।
নাহ! লাশটাকে খুব বেশি বীভৎস
করা যাবেনা, বিভিৎস লাশের
ছবি পত্রিকার পাতায়
ছাপা হয়না, টিভিতেও
দেখানো হয়না।

এক কাজ করলে কেমন হয়?! ফ্যানের
সাথে ঝুলন্ত লাশ! এটাই
ভালো হবে। হাসান সাহেব
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

আচ্ছা, লাশ দেখে ছেলে-
মেয়ে দু’টির অনুভূতি কেমন হবে?
ওরা কি খুব
বেশি কান্নাকাটি করবে?
বাচ্চা মানুষ, কাঁদুক কিছুদিন,
তারপর এমনিতেই সব ঠিক
হয়ে যাবে। নিষ্ঠুর পৃথিবীর
কঠোরতা বুঝুক!

এলাকার সব মানুষকেই দাওয়াত
দেয়া হয়েছে, পরিচিত বেশ কিছু
মিডিয়া কর্মীকেও খবর
দেয়া হয়েছে। হাসান সাহেব
কল্পনাতে দেখতে পাচ্ছেন
মানুষের অনুভূতি। তার
মৃত্যুটা কতটা আলোড়ন
সৃষ্টি করবে সেটা ভাবতেই
শিহরিত বোধ করেন।
জানাজাতে ঢল
নামবে হাজারো মানুষের।
আচ্ছা আত্মহত্যা করলে কি জানাজা হয়?

না হোক জানাজা, সবাই বুঝুক মানুষ
কতটা অস্ত্বিত্ব
সংকটে ভুগলে পরে নিজের
জীবনটাকেও তুচ্ছ করতে পারে।

অভিমান! দুনিয়ার প্রতি প্রচন্ড
অভিমানে ঢুকরে কেঁদে ওঠেন
হাসান সাহেব। এই অভিমান কার
প্রতি, দুনিয়ার
প্রতি নাকি দুনিয়ার স্রষ্টার
প্রতি তিনি জানেননা,
কখনো জানতেও চাননা।

হাসান সাহেব চোখ বন্ধ
করে বেঞ্চের উপর সটান
শুয়ে থাকেন, কেউ একজন
পাশে এসে দাড়ায়, দূরে কোথাও
করুণ স্বরে ডেকে ওঠে কুকুর, হাসান
সাহেব কৌতুহল বোধ করেননা।
মৃত্যুর পরিকল্পনা করতে থাকা একজন
মানুষের কৌতুহল থাকতে নেই।

কেউ একজন পাশে বসে, পরম মমতায়
চুলে বিলি কেটে দেয়। হাসান
সাহেব শুয়ে থাকেন
নির্বিকারভাবে,
হবে হয়তো কেউ একজন!

কোথা হতে টুপ
করে একফোটা লোনা জ্বল
এসে গাল ভিজিয়ে দেয়। হাসান
সাহেব চোখ খুলেন, অবাক হন, মৃত্যু
পথযাত্রী মানুষও
কখনো কখনো অবাক হয়, তিনিও
অবাক হলেন।

বেঞ্চের মাথার
কাছটাতে রাহেলা বসে আছে,
কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, গণ্ড
বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা,
অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে ছেলে-
মেয়ে দুটি।

হাসান সাহেব আকাশের
দিকে তাকিয়ে থাকেন,
সেখানে অনেক তারা, সুখ তারা,
দুঃখ তারা, হাসি তারা, আনন্দ
তারা...

হাসান সাহেব জিকিরের
মতো করেই
মনে মনে আওড়াতে থাকেন, সুখ
তারা... সুখ তারা.... চোখ
দুটি ঝাপসা হয়ে আসে, সুখ
তারাকে অনেক কাছে মনে হয়,
চোখের কোন
বেয়ে গড়িয়ে পড়ে লোনা পানি,
হাসান সাহেব চোখ মোছার
প্রয়োজন বোধ করেননা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×