somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রেকিং নিউজ- মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী রাজাকার শিরোমণি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযমের ৯০ বছরের সাজা।

১৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযম-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১, ৯০ বছরের সাজা প্রদান। বয়সের কারণে তাকে এ সাজা দেওয়া হয়।
এটি হতাশাব্যঞ্জক দ্বিতীয় রায়।
তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চ এ রায় প্রত্যাখান করেন।
বেকিং নিউজ-মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত রাজাকার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযমের রায় আগামীকাল।
২৪৩ পৃষ্টার রায় পড়া শুরু করেন প্রধান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর।মূলরায়ের সারসংক্ষেপে পড়া হয় ৭৫ পৃষ্টা।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫ টি অভিযোগ প্রমানীত।
বিচারপতি আনোয়ারুল হক, জাহাঙ্গীর আলম সেলিম ও প্রধান বিচারপতি ফজলে কবীর যেীথভাবে রায় পড়ে শোনান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এর চেয়ারম্যান এটি এম ফজলে কবীর সুচনা বক্তব্যে বলেনঃ-
একাত্তরে রাজাকার, আলবদর,আল-শামস্ সহ প্যারামিলিশিয়া বাহিনীর সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে গোলাম আযম কোন নিষেধাজ্ঞা দেননি, সুতরাং তিনি সুপিরিয়ির রেসপনসিবিলিটি বা যেীথ নেতৃত্বের দায় এড়াতে পারেন না, একাত্তরে গোলাম আযম জামাতের আমির ও শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন - রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষ্য স্বীকার করেছে, মৌখিক সাক্ষ্যের চেয়ে দালিলিক প্রমাণ বেশি গুরত্ব পেয়েছে।

রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৬১ ধরণের ৫ টি অভিযোগ আনা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত ছয়টি, তাদের সহযোগিতা করার তিনটি, উস্কানি দেয়ার ২৮টি, তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেয়ার ২৩টি এবং হত্যা ও নির্যাতনের একটি অভিযোগ রয়েছে। মোট ৬১ ধরণের ৫ টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর দ্বিতীয় রায় এটি।
বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় দেন। এর আগে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।


(গোলাম আযম।)
বিচারকার্য্যঃ-
মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা ২০১০ সালের ১ আগস্ট গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। তবে তা ‘অবিন্যস্ত ও অগোছালো’ উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ পুনর্দাখিলের নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ পূর্ণদাখিল করলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নিয়ে গত বছরের ১১ জানুয়ারি গোলাম আযমকে হাজির হতে বলেন। সে অনুযায়ী তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানালে তা খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে পরে বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁকে বিএসএমএমইউর কারাকক্ষে রাখা হয়। ১৩ মে তার বিরুদ্ধে ৬১ ধরণের পাঁচটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগঃ-
১ নং অভিযোগ

১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল গোলাম আযম, নুরুল আমীন, মৌলভী ফরিদ আহমেদ, খাজা খয়েরউদ্দিন, এ কে এম শফিকুল ইসলাম, মাওলান নুরুজ্জামান, হামিদুল হক চৌধুরী, মোহসিনউদ্দিন আহমেদ, এ টি সাদীসহ ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে নাগরিক শান্তি কমিটি গঠনের ষড়যন্ত্র করেন।
তারই সূত্র ধরে ৬ এপ্রিল গোলাম আযম আবারও টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন এবং ওই ষড়যন্ত্রে অংশ নেন। এই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ১৯ জুন রাওয়ালপিণ্ডিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেন গোলাম আযম। ১ ডিসেম্বর সেখানে আবারো ইয়াহিয়ার সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষকে দমনের জন্য রাজাকার বাহিনীর শক্তি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
২ নং অভিযোগঃ-
১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল টিক্কা খানের সঙ্গে বৈঠকে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৯ এপ্রিল গোলাম আযম ও অন্যরা ঢাকায় ১৪০ সদস্যের নাগরিক শান্তি কমিটি গঠন করেন। এরপর ৪ মে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে এ কিউ এম শফিকুল ইসলামের বাসভবনে গোলাম আযম উপস্থিতিতে শান্তি কমিটির সভা হয়। খাজা খয়েরউদ্দিনের সভাপতিত্বে ওই সভায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিয়নে শান্তি কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়।
অভিযোগ প্রমানীত।
৩ নং অভিযোগঃ-
মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধে উস্কানি দেয়ার ২৮টি ঘটনার কথা বলা হয়েছে প্রসিকিউশনের অভিযোগে।
এতে বলা হয়েছে,
* ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল গোলাম আযম এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে ‘ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যায়িত করে তাদের ধ্বংস করার আহ্বান জানান।
* ২২ এপ্রিল শান্তি কমিটির সভা শেষে এক বিবৃতিতে গোলাম আযমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংগঠনগুলোর সদস্যদের ‘দেশপ্রেমিক নাগরিক’ উল্লেখ করে দেশের সাধারণ নাগরিকদের ধ্বংস করার আহ্বান জানানো হয়।
* ১৭ মে গোলাম আযম ঢাকায় এক সভায় স্বাধীনতা আন্দোলনকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ’ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যায়িত করেন। সেই সঙ্গে ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের মানুষের স্বাধীনতার স্পৃহা স্তব্ধ করে দিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নমে যে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়, তারও প্রশংসা করেন জামায়াতের তথনকার আমির।
এরপর ১৬ জুলাই রাজশাহী, ১৮ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৪ অগাস্ট খুলনা, ৭ অগাস্ট কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও উত্তেজনাকর বক্তব্য দেন গোলাম আযম। ১৪ অগাস্ট পাকিস্তানের ২৫তম আজাদী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে, ১৭ ও ২৩ অগাস্ট দলীয় সভায় এবং ২৬ অগাস্ট পেশোয়ারে জামায়াতে ইসলামীর অনুষ্ঠানেও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন।
* ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল এডুকেশন সেন্টারে রাজাকারদের প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শন করে তাদের সশস্ত্র হওয়ার আহ্বান জানান গোলাম আযম।
* ৩ অক্টোবর ঢাকায় জামায়াতের মজলিসে শুরার সভায় একই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন তিনি।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চতুর্থ অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে সহযোগিতা বা সম্পৃক্ততার ২৩টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
অভিযোগ প্রমানীত।
৪ নং অভিযোগঃ-
প্রসিকিউশন বলছে, গোলাম আযমসহ অন্যরা একাত্তরের ৪ ও ৬ এপ্রিল টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। গোলাম আযমের সহযোগিতায় ৯ এপ্রিল নাগরিক শান্তি কমিটি গঠিত হয়। এরপর ১৫ এপ্রিল এর নাম বদলে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি করা হয়। শান্তি কমিটির ২১ সদস্যের কার্যকরী কমিটিরও সদস্য ছিলেন তিনি।
১৮ জুন পাকিস্তানের লাহোর বিমানবন্দরে গোলাম আযম বলেন, জনগণ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে চায়। ১৯ জুন রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করে তিনি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মোকাবিলার জন্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানান। পরদিন লাহোরে জামায়াতের পশ্চিম পাকিস্তান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গোলাম আযম বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে ‘দুষ্কৃতকারীরা’ সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের প্রতিরোধে ও শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রসজ্জিত হওয়া উচিত।
অভিযোগ প্রমানীত।
৫ নং অভিযোগঃ-
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগে হত্যা ও নির্যাতনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে প্রসিকিউশন।
এতে বলা হয়, কুমিল্লার হোমনা থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সিরু মিয়া একাত্তরে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় দারোগা (সাব-ইন্সপেক্টর) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৮ মার্চ তিনি স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও ১৪ বছরের ছেলে আনোয়ার কামালকে নিয়ে কুমিল্লায় নিজের বাড়িতে যান। সেখানে শরণার্থীদের ভারতে যাতায়াতে সাহায্য করতেন সিরু মিয়া।
সিরু মিয়া ও তার ছেলেসহ ছয়জন ভারতে যাওয়ার সময় ২৭ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে কসবা থানার তন্তর চেকপোস্টের কাছে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। তাদের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে কয়েক দিন নির্যাতনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, স্বামী-সন্তানের ধরা পড়ার খবর পেয়ে সিরু মিয়ার স্ত্রী গোলাম আযমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সিরু মিয়ার ভগ্নিপতি ছিলেন গোলাম আযমের দুই ছেলে আজমী ও আমীনের শিক্ষক। তিনি গোলাম আযমের কাছে সিরু মিয়া ও তার ছেলেকে মুক্তি দিতে অনুরোধ জানান।
বিষয়টি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শান্তি কমিটির নেতা পেয়ারা মিয়াকে একটি চিঠি পাঠান গোলাম আযম, যাতে সিরু মিয়া ও তার ছেলেকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়। চিঠি পাওয়ার পর ঈদের দিন রাতে রাজাকার ও আলবদরদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা সিরু মিয়াসহ ৩৯ জনকে কারাগার থেকে পৈরতলা রেল সেতুর কাছে নিয়ে যায়। সেখানে হানাদারদের গুলিতে ৩৮ জন মারা গেলেও একজন প্রাণে বেঁচে যান।
অভিযোগ প্রমানীত।
প্রসিকিউশন পক্ষে ১৬ জন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেনঃ-
রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৬ জন, আসামিপক্ষে দিয়েছেন একজন। ২০১২ সালের ১ জুলাই ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের অপর উল্লেখযোগ্য সাক্ষীরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবউদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম (এসপি মাহবুব); আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল; সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।
গোলাম আযমের পক্ষে একমাত্র সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেঃ- তার ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহহিল আমান আযমী।
চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। গোলাম আযম একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির ছিলেন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ২২ নভেম্বর তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান। ১৯৭৩ সালের ১৮ এপ্রিল তাঁর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী গোলাম আযম ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন, যাদের সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়।
১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।একাত্তরের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে গোলাম আযম পাকিস্তানে পালিয়ে যান। সেখান থেকে লন্ডন যান। স্বাধীনতার পর তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়।
১৯৭১ থেকে ৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৮ সালের ১১ আগস্ট গোলাম আযম পাকিস্তানি পাসপোর্টে আবার বাংলাদেশে আসেন এই জামায়াত নেতা ।১৯৯৪ সালের জুনে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাঁর নাগরিকত্বও পুনর্বহাল হয়। ১৯৯১-২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমিরের পদ থেকে অবসরে গেলেও দলটির ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে তিনি সম্পৃক্ততা বজায় রাখেন।
গণ-আদালতঃ-
গণ-আদালতের যুগান্তকারী প্রতীকীরায়ঃ-
১০টি অভিযোগে গণ-আদালতে গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার করা হয় সেগুলো নিম্নরূপ :
১. অভিযুক্ত গোলাম আযম কি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে ৩০ লাখ নিরস্ত্র নারী, পুরুষ ও শিশু হত্যা এবং দুই লাখ নারী অপহরণ ও ধর্ষণে সহায়তা করে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন?

২. অভিযুক্ত গোলাম আযম ২৬ মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আলবদর, আলশামস গঠন করেন এবং তাঁর অনুগত রাজাকার বাহিনী দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে দুই লাখ নারীকে অপহরণ এবং ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানিজনক অপরাধ সংঘটন করতে সাহায্য করেছেন?

৩. অভিযুক্ত গোলাম আযম কি পাকিস্তানি বাহিনীকে গণহত্যার উসকানি এবং প্ররোচনাদান করেছেন?

৪. অভিযুক্ত গোলাম আযম কি আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে তাদের দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিরীহ পরিবার-পরিজনের ওপর সশস্ত্র ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করেছেন?

৫. অভিযুক্ত গোলাম আযম কি বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে বিদ্বেষ ও সহিংসতা ছড়ানোর লক্ষ্যে ধর্মের নামে বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মের নামে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছেন এবং এ দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন?

৬. অভিযুক্ত গোলাম আযম কি তাঁর নিজস্ব অনুগত বাহিনী আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনী দিয়ে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ করে অসংখ্য জনপদ ধ্বংস করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন?

৭. অভিযুক্ত গোলাম আযম কি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে এ দেশে ১৯৭১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে তাঁর অনুগত বাহিনী আলবদর ও আলশামসকে দিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা সংঘটন করেছেন?

৮. অভিযুক্ত গোলাম আযম কি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেছেন?

৯. অভিযুক্ত গোলাম আযম কি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারকার্য চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন?

১০. অভিযুক্ত গোলাম আযম কি স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে তাঁর অনুগত আলবদর, আলশামস বাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী দিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন?'

গণ-আদালতের সদস্য যাঁরাঃ- ওই গণ-আদালতের সদস্য ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজীউল হক, ড. আহমদ শরীফ, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, ফয়েজ আহমদ, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, শওকত ওসমান, মাওলানা আবদুল আউয়াল, লে. কর্নেল (অব.) কাজী নুরুজ্জামান, লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী ও ব্যারিস্টার শওকত আলী খান।
জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, সংসদ যাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, মহাসমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। একপর্যায়ে গোলাম আযমসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনে সমর্থন দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
গণতদন্ত কমিশনঃ-
১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও গণ-আদালতের প্রথম বার্ষিকীতে কবি বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে গঠন করা হয় গণতদন্ত কমিশন। ওই কমিশনের সদস্য ছিলেন সাহিত্যিক শওকত ওসমান, শিক্ষাবিদ ড. খান সারওয়ার মুরশিদ, বিচারপতি (অব.) দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, বিচারপতি (অব.) কে এম সোবহান, কবি শামসুর রাহমান, অধ্যাপক অনুপম সেন, এম এ খালেক, অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন ইউসুফ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সদরুদ্দীন ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ (সমন্বয়কারী)।
দুই দফায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনঃ-
গণ-আদালতের প্রথম বার্ষিকীর সমাবেশে আরো আটজন অভিযুক্ত 'যুদ্ধাপরাধী'র নাম ঘোষণা করা হয়। ওই আটজন হলেন- আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মো. কামারুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ ও আবদুল কাদের মোল্লা।
১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ গণ-আদালতের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে বিশাল জনসমাবেশে জাহানারা ইমামের হাতে তুলে দেন জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট। ওই সমাবেশে আরো আটজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়।
গণতদন্ত কমিশন দ্বিতীয় দফায় আরো আটজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই আটজন হলেন- এ এস এম সোলায়মান, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আবদুস সোবহান, এ কে এম ইউসুফ, মোহাম্মদ আয়েন উদ-দিন, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, এ বি এম খালেক মজুমদার ও ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন।
গণ-আদালতের রায় গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য


ঘৃণার জুতার মুখে গোলাম আযম
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এর আগে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের চারটি মামলার রায় প্রদান করেন, এটি হবে পঞ্চম রায়।
মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত চারটি মামলার রায় দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ প্রথম রায় দেন,
* ২১ জানুয়ারি/১৩ প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে।
* ৫ ফেব্রুয়ারী/১৩ দ্বিতীয় রায় জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। হতাশাব্যঞ্জক রায়!
* ২৮ ফেব্রুয়ারী/১৩ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তৃতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড দেন। ব্রেকিং নিউজ-একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ।
* ৯ মে/১৩ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চতুর্থ রায়ে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ব্রেকিং নিউজ- আলবদর নেতা কুখ্যাত রাজাকার কামরুজ্জামানের ফাঁসি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, উস্কানি, পাকিস্তানি সেনাদের সাহায্য করা এবং হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেওয়ার ৫ ধরনের অভিযোগ রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার বিচারের দাবি দীর্ঘ দিনের।

গণজাগরণ মঞ্চ।
আবারও মুখর শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ


জ্বালাময়ী স্লোগানে ফের জেগেছে গণজাগরণ মঞ্চ- কালের কন্ঠ।
রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের ছক।


(একাত্তরে এক বৈঠকে গোলাম আযম, রাও ফরমান আলী ও এম এ মালেক )
বক্তব্য-বিবৃতিতে ‘যুদ্ধাপরাধের’ ছক- bdnews24.com নকশাকারের রায় আজ- কালের কন্ঠ।
সবার দৃষ্টি আজ ট্রাইব্যুনালে- প্রথম আলো।
জেগে উঠছে শাহবাগ


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×