somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প:অসভ্যতার প্রথম পাঠ

০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাগ বেশী হলে কান্ডজ্ঞাণ থাকে না ডরোথীর।
এখন যেমন সে হাতের চুড়িগুলো খুলছে আর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে।
কাঁচের চুড়ি পাকা মেঝেয় পড়ে রিনিঝিনি শব্দ তুলে ভেঙে যাচ্ছে।
ডরোথীর মা আয়েশা শান্তশিষ্ট,নির্বিবাদী মহিলা। তিনি
বারান্দায় জায়নামাজে বসে নামাজ পড়ছিলেন।একবার শুধু
বলে ছিলেন,চুড়ি ভাঙতে হয় না,স্বামীর অকল্যাণ হয়।
মেয়ে তাতে ক্ষেপে উঠল,চাই না আমার অমন স্বামী,আমি
ডিভোর্স দেব।
আয়েশা তখন থেকে চুপ মেরে গেছেন। তাঁর পঁচিশ বছরের
বিবাহিত জীবনে তিনি যে কথা মুখে তো দূরের কথা,স্বপ্নেও
ভাবেননি,মেয়ে কেমন অনায়াসে বলে,চাই না অমন স্বামী!

যুগ বদলে গেছে। দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মানসিকতাও বদলে যাচ্ছে।
নামাজ পড়তে গিয়ে সুরা ভুল হয়ে যাচ্ছে আয়েশার।
হাতের চুড়ি শেষ। এবার মোবাইল নিয়ে পড়ল ডরোথী।
ফোন করল,হ্যালো উকিল-চাচা,সন্ধ্যেয় একবার আমাদের বাড়ি
আসতে পারবেন?
উকিল-চাচা ডরোথীর আব্বার বন্ধু। তিনি ডরোথীর খামখেয়ালীপনার
সাথে মোটামুটি পরিচিত। তাই তিনি বার কয়েক কেশে বললেন,
কেন,কি হয়েছে মা?
---আমি ডিভোর্স দেব।
---ডি-ভো-র-স! উকিল চাচার মুখ যেন সোডা-ওয়াটারের বোতল।
---হ্যাঁ,ডিভোর্স। আপনি আজই সব কাগজপত্র নিয়ে চলে আসুন।
---বেশ মা,তাই যাব।
ডরোথী এবার ফোন করল আরিফকে,এই যে ম্যানেজার সাহেব,সারাদিন
শুধু অফিস নিয়ে পড়ে থাকলে হবে?
---আজ না একটু কাজের চাপ,একটু দেরী হবে ফিরতে।
---চাকরীতে রিজাইন দাও,দিয়ে সোজা এখানে চলে এসো,আমার আব্বু
আমার জন্যে যা রেখেছেন,তা শেষ করতে সাতপুরুষ লাগবে,চলে এসো।
---আহা হলোটা কি বলবে তো?
---হবে আর কি,আমি তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছি,উকিল-চাচা কাগজপত্র
সব নিয়ে আসছেন।সন্ধ্যায় ডিভোর্স-পার্টি সেলিব্রেট হবে,তারপর ছাড়াছাড়ি।
---কি সব আবোল-তাবোল বকছো,তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
---অ্যাই খবরদার আমাকে ধমকাবে না,ড্যামনা সাপের আবার ফনা তোলা।
যা বলছি মন দিয়ে শোন,জানো তো আমি এককথার মেয়ে,বাবা-মার অমতে
তোমার মত একটা বাউন্ডুলে ছেলেকে বিয়ে করেছিলাম।
---এ কথা তো দিনে একশ বাইশবার শুনি,সেই সাথে এ-ও শুনি যে,তোমার
বাবা দয়ায় তাঁর কোম্পানীতে কাজ করছি। সাংসারিক-দাস নামে বন্ধুমহলে
বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছি।
---বেশ যা করেছো ভাল করেছো,কাল থেকে তুমি মুক্ত-পুরুষ হবে তা কিন্তু
ভুলেও ভেবো না। তোমার জন্যে আমি একটা পাত্রীও ঠিক করে রেখেছি।
---কে বলো তো?
---ও লোভ কত মিনসের,শ্লা পুরুষজাতই ফুলমুখো,বেশ পাত্রীর নাম শুনে
দেখি কত লালা ঝরে। পাত্রী তোমার অফিসেরই স্টেনো যাকে তুমি আড়ালে
ডলফিশ বলো।
---অ্যাঁ,ওই কুস্তিগীরটার সাথে,না,না, তুমি আমাকে গুলি করে মেরো কিন্তু
অমন সাজা দিও না।
---বেশ তাহলে যা-যা আনতে বলছি,অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা বাজারে
যাও,নিয়ে এসো।
আরিফকে মোবাইলে একটা বিশাল ফর্দ দিয়ে বান্ধবীদের একের পর এক
ফোন করল ডরোথী। সকলকেই বলল,তোরা এতদিন,বন্ধুদের বিয়ে সেলিব্রেট
করেছিস,আজ আমার ডিভোর্স সেলিব্রেট করবি আয়।
বারান্দার এককোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন আয়াজউদ্দিন।হার্টের অবস্থা ভাল
নয়।ডাক্তার বলেছেন,সাবধানে থাকবেন,টেনশন নেবেন না।
টেনশন নিতে না চাইলেও টেনশনে পড়ে যান আয়াজ।এই এখন যেমন তাঁর
বুকটা ধ্বক-ধ্বক করছে।নিজেকে গালমন্দ দিয়েও সেটা কমাতে পারছেন না
তিনি।পান্জাবীর পকেটে রাখা গোলাপ ফুলটা যেন কাঁটা হয়ে ফুটছে তাঁর বুকে।
আজ আয়াজের জীবনের একটা বিশেষ দিন। প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটি
কেন কে জানে বিষময় হয়ে ওঠে! নইলে আজকেই হঠাৎ মেয়ের কেন ডিভোর্সের
শখ উঠবে?
বিবাহবার্ষিকী নয় আজ আয়াজের মৃত্যু হলে বেশী খুশি হন তিনি। ডিভোর্সের
পাগলামি মেয়ের মাথা থেকে কয়েক দিনের জন্যে ছুটবে। ডাক্তার বলেছেন,
বিয়ের কয়েক বছর পরেও মেয়েরা যখন মা হয় না,তখন তাদের বিভিন্নরকম
মনোবিকার দেখা দেয়।
বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আয়াজ আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করছেন,হে রব্বুল
আল আমিন,আমার মৃত্যু দাও,আজ এক্ষুণি।
সম্রাট বাবর নাকি মৃত্যু-পথযাত্রী পুত্র হুমায়ুনের শয্যার পাশে এমনই প্রার্থণা
করেছিলেন। আয়াজ তো তাঁর মত প্রার্থণা করতে পারছেন না।
সব ঘরে আলো ঝলমল। ফুলে-ফুলে সাজানো হয়েছে একটা পালঙ্ক। বাবুর্চী
নানারকম পদ রান্না করছে। সুগন্ধে জ্বিভে জল এসে যাচ্ছে মকবুলের। অজান্তে
চোখেও পানি আসছে। যে বিয়ের ওকালতনামা তিনি নিজে হাতে লিখেছিলেন,আজ
তার শেষ-অধ্যায় লিখতে হবে তাঁকেই।
ডরোথীর বন্ধুরা সব বিয়ের সাজে সেজে এসেছে। তার হুকুমে সাজানো হল আয়াজ
আর আয়েশাকেও।
বিরক্ত ডরোথী একসময় হাত ধরে টেনে ঘরে ঢোকাল আরিফকে। বলল,কি ব্যাপার
তুমি অত হাসি-হাসি মুখ করে ঘুরছো-ফিরছো কেন?
আরিফ হাসতে-হাসতে বলল,তোমার ফর্দ শুনেই আমি বুঝে নিয়েছি,বাবামায়ের বিবাহ
বার্ষিকীটা তুমি এভাবেই সেলিব্রেট করতে চাও।
ডরোথী ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল,অসভ্য।
---তুমি মা হতে চলেছো এই কথ যখন সর্বসমক্ষে বলব,তখন তুমি আরো একবার
‘অসভ্য’ বলার সুযোগ পাবে।
---না,আমি এখনই বলব,অসভ্য,অসভ্য,অসভ্য। বলে আরিফের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল
ডরোথী।

১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×