somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা নাটক বন্ধুকে উপহার দিলাম

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি কখনো নাটক লিখিনি। গতকাল আমার এক টেলার-মাসটার বন্ধু বলল—তিনটে পয়েন্ট দিচ্ছি,এটা নিয়ে লিখুন।
পয়েন্ট-১
পশ্চিমবঙ্গে মৌলভীরা ভাতা পাচ্ছে,টোলের পন্ডিতরা পাবে না কেন।
পয়েন্ট-২
ব্রিটিশ আমলে ২৫০জন মৌলভীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল,এই ভাতা তার পুরস্কার নয় তো?
পয়েন্ট-৩
আমার বান্ধবী আয়েশা একটা কবিতা লিখেছে,কবিতার বিষয়বস্তু ওই ভাতা,কবিতাটা পড়ুন,তবে লেখায় যেন ওই কবিতার ছাপ না থাকে।


লেখক জীবনে এমন অনেক পরীক্ষায় পড়েছি বহুবার।লিখেছি,পাঁচ মিনিটে অনুগল্প,যা দেখছি তাই নিয়ে
তাৎক্ষণিক গল্প।
ভাবলাম বন্ধু বোধহয় তেমনই পরীক্ষা নিতে চাইছে।নিক।
কবিতাটা একবার পড়ে বইটা ফেরৎ দিলাম।বললাম,বাজারটা করি তারপর লিখে দেব।
বাসায় ফিরে লিখলাম একটা শ্রুতি নাটক।
বন্ধু ফোন করল।ফোনেই শুনল কি লিখেছি।
শুনে বলল,প্রিন্ট করে দোকানে নিয়ে আসেন।


গেলাম।
বলল—এটা আমি কালকের চরৈবেতি সাহিত্য আড্ডায় পাঠ করব।তার আগে আপনি তিনবার পাঠ করে শোনান। শোনালাম।
বলল—আপনি কি কাল আড্ডায় যাবেন?
--না কাল আমি গ্রামের বাড়ি যাব।
আজ গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে তাকে ফোন দিলাম।বলল—
সাহিত্য আড্ডায় ওটা পাঠ করেছি। সবাই ধন্য –ধন্য করল।
আমার চিন্তা-ভাবনা আর তার প্রকাশের জন্য অগনিত হাততালি।
বললাম—নারী কন্ঠের পাঠ কে করল।
--কুদ্দুসের মেয়ে মধুরিমা।(অনুষ্ঠানের আয়োজকের মেয়ে)
অবাক হলাম আমাকে কোন ধন্যবাদ জানাল না সে। অনুষ্ঠানে
আমার নাম একবারও উচ্চারণ করে নি।তবে ছ-পাতা প্রিন্ট বাবদ তিরিশ টাকা দিয়েছিল সে।
আমি আনন্দিত আমার টেলার-মাসটার বন্ধু সেলাই করে প্রচুর নাম কিনলেও,গল্প কবিতার জগতে বিশেষ সুবিধা করতে পারে নি।আজ থেকে সে নাটক-মাস্টার নামে খ্যাতিমান হল।



ভাবলাম
সামুর বন্ধুদের শুনিয়ে দিই সেই সেই নাটক। পড়ুন আঞ্চলিক ভাষায় লেখা সেই নাটক:



নাটিকা:ভাবতে হবে
---উঠো মোলবির বাপ,ঘড়িতে বুধোয় বারোটা-তেরোটা বেজে গেল,শেহেরি খাবা
মেহেরবানি করে গলির টিপকল থেকে এক বোলটিন পানি এনে দাও।
--- ধুর মাগী,রেতের নিদে কত হুরপরি আমার সপুনে দ্যাখা দ্যায়,তুর খ্যানকাবতি আওয়াজে,ওরাসব পালিন গেল।একবোলটিন পানি আনা আমার
কাম তো শুধু,বেশ তু দু-আঁচা চুলা ধরা।
--হুঁ, ধরাবো তো,তুমার বিড়ি খুয়া লায়েটটো দিয়ে যাও,আমি কাল কুড়িন আনা পাতা গুলান জড়ো করি।
--এই লে লায়েট,তা চাল,ডাল আছে তো কিছু নাকি শুধু শাকসিজা দিয়েই শেহেরী খাওয়াবি?
--আছে গো আছে,দু-মালোয় চাল আছে,এক খাবল ডাল আছে,ইদুর-কামড়া
আলু আছে খানকতক,ওতেই আমাদের শেহেরীও হবে,এফতারও হবে।লোকে
বুলে,মোলবির মা সুখে আছে,অরা জানেই না,রুজার মতুন সারা বছরই আমরা একবেলা খিয়ে বাঁচি।
---সুখশান্তি খুয়াদুয়াতে লয়রে মোলবির মা,মুনের সুখই আসল,তু চুলা ধরা আমি পানি আনি।
--ললটিন টো নিয়ে যাও,সাঁজবেলা জাত সাপ বেরালছিল গলিতে।

---এই লে তুর পানি,আরে তুর চুলায় জি আগুনের চিয়ে ধুয়া বেশি।
---চুলা আর আমাদের জীবুন ইরকমই মোলবির বাপ,আগুনের চিয়ে ধুয়া বেশি।
--শুভানাল্লা,তু জি দেখছি মোলবিসাহেবদের মুতুন কথা বুলছিস মোলবির মা!
--তুমার মোলবিকে তো আমিই প্যাটে ধরাছি মোলবির বাপ,মোলবিদের মুতুন কথা বুললেই দোষ?
--আরে আমি কি দোষের কথা বুলছি,তুর কথাটো শুনে ভাল লাগল তাই বুললাম।
--আমার ভাল লাগে না বুঝলা মোলবির বাপ,মোলবি আমার আড়াই হাজার টাকা পায় গরমেন থেকে,তা আমাদের জন্যে কি কল্লে?
--কি করে করবে বল মোলবির মা,অরও তো প্যাটে চারটা জনমালছে,তাদের পুষতেই হয়রান বেচারা।
--যারা প্যাটে জনমালো তারাই বুঝি সব আর আমরা জি অকে প্যাটে ধরলাম,মাদরাসায় পড়তে পাঠালাম,আমরা বুঝি কেউ লয়?
--কে বুললে আমরা কেউ লয়,আমরা হলাম গিয়ে গাছ,মোলবি তার ছায়া।
---—ঠিক বুলাছো মোলবির বাপ,আমরা দুজনায় গাছ,তাই গাছতলাতেই ঠাই।
--মোলবিও তো কুনো পাসাদে থাকে না,দুটো খুপরি তুলতে ব্যাটা আমার ঘামে দাড়ি ভিজে যেত।
--গরমেন তো তিনকাঠা জমি দিলে,অতে কি আমাদের একখান খুপরি হতো না?
--বাদ দে মোলবির মা,সাড়ে তিন হাত জমি আমাদের নামে আল্লা এজেসটি করে রেখাছে।
--বুঝলা মোলবির বাপ।আমার একটো কথা মুনে পড়ে গেল,আমার নানা বড় মোলবি ছিল। তিনি বুলতো,বিটিশ আমলে নাকি আড়াইশো দেওবন্দী মোলবিকে পুড়িন মেরাছিল,এই আড়াই হাজার টকা তার পুরস্কার লয় তো?
--তাতে তুর কি,মোলবি আমার ছেলাপলা নিয়ে সুখে থাকলেই হল।
--মোলবিরাই শুধু সুখে থাকবে মোলবির বাপ?টোলের পন্ডিতগুলা তারা কি দোষ করছে বুলো? অই সোনা পন্ডিত অর তো ছেলা দুটা না-খিয়ে মরার দশা,পরনে কানি নাই। অদের কথা কে ভাববে?
--ভাবতে হবে মোলবির মা,ভাবতে হবে। তা তু-আমি ইসব ভাবার কে,বল?যার ভাবার সে ঠিকই ভাববে। তুর হাতও চলে না,জালও জলে না,আলুসানা ডাল হতেই দেখছি আজান পড়ে যাবে।
--রাত ফুরালেই সকাল হয় গো মোলবির বাপ,আমাদের ভাবা গুলান চুলার ধুয়ার মুতুন বাতাসে মিশে যায়,কি বুলো?
@






সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×