তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের একদিকে থাকবে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ইহুদি খ্রিষ্টান জায়োনিসট এলায়েন্স ও অপর দিকে থাকবে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন এলায়েন্স। কোরআনে ক্লিয়ার এভিডেন্স থাকা সত্ত্বেও আপনি যদি আমেরিকা ন্যাটোর ইহুদি খ্রিষ্টান এলায়েন্সকে সমর্থন করেন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বোগাস জিহাদ করেন, তাহলে আপনার জন্য দুঃখও হবে না।
“রোমকরা পরাজিত হয়েছে, নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে, কয়েক বছরের মধ্যে। অগ্র-পশ্চাতের কাজ আল্লাহর হাতেই। সেদিন মুমিনগণ আনন্দিত হবে” – (সূরা রুমঃ ২-৪)।
কোরআনে ও হাদিসে রুম (Rum) শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয় খ্রিষ্টান সাম্রাজ্য। এটা ইটালির রোম (Rome) নয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জমানায় খ্রিষ্টান সাম্রাজ্য বা রুম ছিল বাইজেইন্টাইন এম্পায়ার, যাকে বলে পূর্ব রোমান এম্পায়ার। এর রাজধানী ছিল কনস্টান্টিনোপল শহর যা আধুনিক তুরস্কে ইস্তানবুল নামে পরিচিত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর ওফাতের কয়েকশত বছর পর ১০৫৪ সালে খ্রিষ্টান সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিম- এই দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পশ্চিমা খ্রিষ্টানরা হল রোমান ক্যাথলিক যাদের কেন্দ্র ইটালির রোমের ভ্যাটিকান। আর পূর্বের খ্রিষ্টানরা হল ইস্টার্ন অর্থোডক্স যাদের কেন্দ্র তুরস্কের কনস্টান্টিনোপল। কোরআনে দুই ধরণের খ্রিষ্টানদের কথা বলা হচ্ছে- একটা শত্রু ও একটা মিত্র। শত্রুদের ব্যাপারে কোরআন বলছে-
“হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে মিত্র হিসাবে গ্রহন করো না। তারা একে অপরের মিত্র। তোমাদের মধ্যে যে তাদের মিত্র হিসেবে গ্রহন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না” – (সূরা মায়েদাঃ ৫১)।
কোরআন অবশ্যই সব ইহুদি খ্রিষ্টানদের কথা বলছে না। কেননা, সৎকর্মশীল ইহুদি খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে কোরআন খুব পজিটিভ, বহু আয়াত এই দাবিকে সমর্থন করে। উপরিউক্ত আয়াতে কোরআন এমন একদল ইহুদি ও এমন একদল খ্রিষ্টানদের কথা বলছে যারা একসময় নিজেদের মাঝে একটি ইহুদি খ্রিষ্টান জোট (Judeo-Christian alliance) তৈরি করবে। কোরআন মুমিনদের সতর্ক করছে যে যখন এই ইহুদি খ্রিষ্টানের জোটবদ্ধ মিত্রবাহিনী দেখতে পাও, তখন ভুলেও তাদের দলে যোগ দিও না। দিলে তুমি তাদেরই দলে অন্তর্ভুক্ত হবে, তুমি আর ইসলামের সীমানার মধ্যে নেই।
পশ্চিমের রোমান ক্যাথলিকরা আমাদের মিত্র হতে পারে না, কেননা তারা হল সেই ইহুদি খ্রিস্টান যায়োনিসট জোট যারা ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের জন্মদাতা ও লালন পালন কর্তা। রোমান ক্যাথলিক দেশগুলোই জায়োনিসট ন্যাটো (NATO) এলায়েন্সের সমর্থন দিচ্ছে যা ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। আমাদের মৈত্রী হবে ইস্টার্ন অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের সাথে।
সূরা রুম বলছে রোমক খ্রিষ্টানরা রয়েছে নিকটবর্তী এলাকায়, অর্থাৎ কুরআন যেখানে নাযিল হচ্ছে তার নিকটবর্তী এলাকায়। এটা ইস্টার্ন ক্রিশ্চিয়ানিটির ক্ষেত্রেই সম্ভব, কেননা তার কেন্দ্র হল তুরস্কের কনস্টান্টিনোপল যা আরবের নিকটবর্তী। ওয়েস্টার্ন ক্রিশ্চিয়ানিটির ক্ষেত্রে সম্ভব না, কারণ তার কেন্দ্র ইটালির ভ্যাটিকান আরব থেকে বহু দূরে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সময় মুসলিমদের মিত্র ছিল আবিসিনিয়ার খ্রিষ্টানরা যারা ছিল রোমক অর্থোডক্স খ্রিস্টান। কোরআন এখানে দুইটি যুগের কথা বলছে যেখানে এক যুগ হল নবীজির (সঃ) যুগ যেখানে রোমক খ্রিষ্টানরা মুসলিমদের মিত্র ও ভবিষ্যতে আরেকটি যুগ আসবে যেখানে তারা আবার মুসলিমদের মিত্ররুপে আবির্ভূত হবে। সূরা রুম অনুযায়ী তাদের সঙ্গে আমাদের একটি প্রাকৃতিক মিত্রতা রয়েছে কেননা সূরা রুম বলছে তারা যখন যুদ্ধে বিজয়ী হবে আমরা মুসলমানরা সেদিন আনন্দ করব, উল্লাস করব বিজয়ের খুশিতে। এই মিত্রদের ব্যাপারে কোরআন আরও বলছে –
“আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী তাদেরকে পাবেন, যারা নিজেদেরকে খ্রিষ্টান বলে। এর কারণ এই যে, তাদের মধ্যে আলেম রয়েছে, দরবেশ রয়েছে এবং তারা অহঙ্কার করে না” – (সূরা মায়েদাঃ ৮২)।
সূরা মায়েদার এই আয়াত অনুযায়ী এই খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের পরম বন্ধুরুপে আবির্ভূত হবে। তাদের চেনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তারা সন্ন্যাসবাদের রীতি বজায় রেখেছে, তাদের মধ্যে ধর্মীয় স্কলারশিপ রয়েছে ও তারা অহঙ্কার বশত মানব জাতির উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে খড়গহস্ত হয় না।
১৪৫৩ সালে অটোম্যানরা কনস্টান্টিনোপল জয় করার পর তা অর্থোডক্স ক্রিশ্চিয়ানিটির কেন্দ্র হিসেবে তার পদ হারায়। বর্তমানে অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মের নেতৃত্ব দিচ্ছে যে দেশটি তা হল রাশিয়া। মস্কো হল অর্থোডক্স ক্রিশ্চিয়ানিটির হেডকোয়ারটার। উল্লেখ্য যে, পূর্বের সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমান রাশিয়ার মধ্যে আকাশ ও পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একটি বামপন্থী নাস্তিক্যবাদী দেশ যা ছিল একই সাথে কমিউনিস্ট ও যায়োনিসট। তারা ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মীয় পথ অবলম্বনকারী মানুষের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া ১৯৯১ সালে তার জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার চার্চ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে চলেছে এবং তাদের দেশের রাজনীতি ও আইনে ধর্ম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যেখানে পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার রোমান ক্যাথলিকরা সমকামিতার মত নিকৃষ্টতম বস্তুকে আইনসম্মত করেছে সেখানে রাশিয়া এর বিরুদ্ধে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়ার সাথে ইতিমধ্যে সিরিয়া, ইরান, ইরাক, কাতার ও পাকিস্তানের এলায়েন্স হয়ে গেছে ও আরো মুসলিম কান্ট্রি এগিয়ে আসছে। এর পরও যারা রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে গুলিয়ে ফেলে, রাশিয়াকে পশ্চিমা ধর্মহীন বিশ্বের সমকক্ষ গণনা করে ও মুসলিমদের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করে, তাদের ব্যাপারে মনে হয় আর কিছু বলার নেই। রাশিয়া হল আখিরি জমানার রুম।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬