somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাজ্জালের জ্ঞানতত্ত্ব ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা

১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা জ্ঞান সন্ধানের জন্য আধুনিক যুগে যে জ্ঞানতত্ত্ব ব্যবহার করছি তা হল সায়েন্টিফিক মেথড অফ নলেজ। সায়েন্টিফিক মেথডে শুধুমাত্র বাহ্যিক দৃষ্টিতে যা দৃষ্টিগোচর হয় এবং যা যুক্তি তর্ক করে প্রমাণ করা ও ব্যাখ্যা করা যায় তাকেই জ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। হাদিসে এই বিষয়টা সিম্বলিকভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে – দাজ্জাল বাম চোখ দিয়ে দেখে, তার ডান চোখ অন্ধ যা দেখতে ফোলা আঙ্গুরের মত। তার কপালে কাফির লেখা থাকবে যা মুমিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ পড়তে পারবে না, সে মুমিন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হোক বা না হোক (বুখারি, মুসলিম)। মুমিন ব্যক্তির এমন কি আছে যাতে সে দাজ্জালের কপালের কাফের লেখা পড়ে ফেলতে পারে? মুমিন আর কাফের দুজনকেই চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো যাক – ডাক্তার বললেন দুইজনের চোখই ওকে। তাহলে কাফের কেন দাজ্জালের কপালের কাফের শব্দ পড়তে পারছে না? আমাদের কি তবে এই দুই চোখ ছাড়া অন্য কোন চোখ আছে? আল্লাহ কোরআনে বলেন – “বস্তুত এই চক্ষুগুলো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হল কল্বসমূহ যা রয়েছে বক্ষের ভিতরে” (সূরা আল হাজঃ ৪৬)।

তাহলে কোরআন বলছে মানুষ শুধু চোখ দিয়েই দেখে না, মানুষ কল্ব দিয়েও দেখতে পায়। আর এই কল্বের দৃষ্টি দিয়েই মুমিন ব্যক্তি দাজ্জালের কপালের কাফের লেখা পড়তে পারে, এই দৃষ্টি না থাকার ফলেই কাফের ব্যক্তি দাজ্জালের কপালের কাফের লেখা পড়তে পারে না। কি ফলাফল হতে পারে এই কল্ব অন্ধ হলে? আল্লাহ বলেন – “নিশ্চয়ই আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি বহু জীন ও মানুষ। তাদের হৃদয় আছে তা দিয়ে তারা বোঝে না, তাদের চোখ আছে তা দিয়ে তারা দেখে না, তাদের কান আছে তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা হল চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং আরো পথভ্রষ্ট। এরাই হল গাফেল” (সূরা আরাফঃ ১৭৯)। “যে ইহকালে অন্ধ থাকবে, সে পরকালেও অন্ধ থাকবে” (সূরা ইসরাঃ ৭২)। তাহলে কেউ যদি জন্মান্ধ হয় বা দূর্ঘটনাবশত দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে তবে সে কি পরকালে অন্ধ হবে? অবশ্যই না। তাহলে এটা কোন অন্ধত্ব? এটা হৃদয়ের অন্ধত্ব – এটাই দাজ্জালের ডান চোখ যা অন্ধ, অর্থাৎ দাজ্জাল ও তার অনুসারীরা হল আভ্যন্তরীণভাবে অন্ধ। আর তার বাম চোখ হল বাহ্যিক দৃষ্টি শক্তি বা মেকানিক্যাল নলেজ যা দিয়ে সে ও তার মত আভ্যন্তরীণভাবে অন্ধ যারা আছে তারা দেখে। এমন একচোখা ব্যক্তি যত বড় জ্ঞানীই হোক, যত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, স্কলার অথবা বিজ্ঞানী যাই হোক না কেন, আল্লাহ বলছেন সে চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চেয়েও নিচু ও নিকৃষ্ট।

আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানতত্ত্ব অনুযায়ী জ্ঞান শুধুই বাহ্যিক বিচার বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আহরণ করা সম্ভব। এই পদ্ধতি ছাড়া অন্য যত পদ্ধতিতে জ্ঞান আসে তা জ্ঞান হিসেবে কোয়ালিফাইড হবে না, ঐ জ্ঞানের স্থান হলিউড বা ডিজনিল্যান্ড। আর বিশ্বজগতের সব কিছুকে বাহ্যিক জ্ঞান দিয়েই বুঝতে হবে। ইসলাম কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে। “মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছিয়াল্লিশ ভাগের এক ভাগ” (সহিহ বুখারি)। “যখন কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে যাবে তখন মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন খুব কমই অবাস্তবায়িত থাকবে” (সহিহ বুখারি)। নবুয়তের ঐ ছিয়াল্লিশ ভাগের একভাগ দিয়ে জ্ঞান এখনও পৃথিবীতে আসছে, এবং কেয়ামত পর্যন্ত আসতে থাকবে। অর্থাৎ জ্ঞান শুধু বাহ্যিকভাবেই আহরণ করা যায় না, আভ্যন্তরীণভাবেও জ্ঞান লাভ করা যায়, কল্বের ভিতর। বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক – এই দুইটি জ্ঞানের সমুদ্রকে যে নিজের ভেতরে একত্র করতে পারবে সেই হল পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি, সেই হল একজন খিজির (আঃ)। তার পক্ষেই সম্ভব বিশ্বজগতের প্রকৃত সত্যকে ভেদ করতে পারা। সব কিছুর মূলে যে তিনিই পরম সত্য আল হক্ক, সর্বত্র তারই একত্ববাদের জয়গান - একথা উপলব্ধি করতে পারা। কাজেই নাসার বিজ্ঞানীরা হাবল টেলিস্কোপ দিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বিশ্বজগতের হাকিকত উপলব্ধি করতে পারবে না। কেয়ামত এত নিকটে হওয়া সত্ত্বেও তারা জানতে পারবে না বিশ্বজগত যে শেষের দিকে, কারণ দাজ্জালের মত তারা দেখে এক চোখ দিয়ে।

আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়টা শুধু মুসলিমরা নয়, সারা পৃথিবীর রিলিজিয়াস, স্পিরিচুয়াল এবং ইন্টেলেকচুয়াল ট্র্যাডিশন ও সভ্যতা স্বীকার করে এসেছে। শুধুমাত্র আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা সর্বদাই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে অস্বীকার করেছে। সারা পৃথিবীতে আধুনিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তারা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এগুলোর মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করেছে। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি কোন সেক্যুলার সাবজেক্ট না। কোরআনেও তো ফিজিক্স আছে, বায়োলজি আছে। তাহলে তারা এগুলোকে সেক্যুলার সাবজেক্ট বলে কেন? তারাই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাকে সেক্যুলার বানায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আজকের বহু মানুষ আধ্যাত্মিকতা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে বিশ্বাস করে না যা এই দাজ্জালী কুশিক্ষারই ফল। বাবা মায়েরা সন্তানদের শিক্ষাজীবনের ভিত্তি ইসলামের উপর তৈরি না করে আগেই তাদেরকে অমুক তমুক পড়তে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়। ফলে এত বড় বড় ডিগ্রিধারী সন্তানরা হয় মাদকাসক্ত, ব্যাভিচারী, সমকামী ও নাস্তিক। আর এখন তো হারাম নাচ গান ও নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কমন ব্যাপার। তাই শিক্ষার জোয়ার খুব ভালোভাবেই এগোচ্ছে।

মানুষের অন্তর্দৃষ্টিকে ধ্বংস করার এই ক্রাইসিসকে আরো শক্তিশালী করছে আধুনিক বায়বীয় কালচার। পর্ণোগ্রাফি দেখা মানে নিজের রুহানিয়াতের উপর এসিড ঢেলে দেওয়া। এর সাথে অশ্লীল মুভি, গেমস, নাটক, গান ও টিভি সিরিয়াল তো থাকছেই। তৈরি হচ্ছে দাজ্জালের অন্তর্দৃষ্টিহীন একচক্ষু ফুলসোলজারস্ যারা জম্বির মত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে ফিতনা ছড়াচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১১
২৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন-হাদিস অনুযায়ী তারা পাকিস্তান এবং অন্যরা অন্যদেশ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২১



সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×