somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিক বিশ্বে কি ইসলামী শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব?

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শরিয়াহ হল এমন একটি আইন যার মূলনীতি কখনো পরিবর্তিত হয় না। কোন রাষ্ট্রে শরিয়াহ আইন প্রয়োগ করার অর্থ হল সেখানে এমন কিছু নিয়মনীতির প্রয়োগ ঘটানো যা চিরন্তন ও শাশ্বত। সুতরাং যে রাষ্ট্রে শরিয়াহ আইন প্রয়োগ করা হবে সেখানে শরিয়াহ আইনের উপর অন্য কোন আইন থাকতে পারবে না। আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা চিরন্তনভাবে হালাল এবং যা হারাম করেছেন তা চিরন্তনভাবে হারাম। আল্লাহর আইনকে পরিবর্তন করা হল শিরক। সূরা তাওবার ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন –
“তারা তাদের র‍্যাবাইদেরকে ও পাদ্রীদেরকে পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতীত এবং মরিয়মের পুত্রকেও। অথচ তাদের আদেশ করা হয়েছিল একমাত্র মাবুদের এবাদতের জন্য। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারা তাঁর সাথে যে শরীক সাব্যস্ত করে, তার থেকে তিনি পবিত্র।”
আদি ইবনে হাতিম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে এ বিষয়ে বললেন, “হে রাসূল! ওরা তো ওদের পাদ্রী-পণ্ডিতদের ইবাদত করেনি?” উত্তরে তিনি (সঃ) বলেন – “এসকল আলেম-দরবেশ তাদের জন্য অনেক বিষয় হালাল করে দিতো। তখন তারা তা হালাল বলে গ্রহন করতো। অনুরূপভাবে অনেক বিষয় তারা হারাম করে দিতো, তখন তারা তা হারাম বলে গ্রহন করতো। এভাবেই তারা তাদের ইবাদাত করেছে।” (তিরমিযিী)

তাহলে বর্তমান বিশ্বে কি এমন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যার কারণে শরিয়াহ আইনকে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না? সর্বপ্রথম প্রতিবন্ধকতা হল একটি বিশ্বসংস্থা যার নাম জাতিসংঘ। জাতিসংঘের রয়েছে একটি চার্টার। সেই চার্টার অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, শান্তি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপারে জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিল হল চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। জাতিসংঘের সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রই এই চার্টার মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ফলে কোরআনে আল্লাহ যদি কোন হুকুম দিয়ে থাকেন এবং জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিল কোন বিপরীত হুকুম দিয়ে থাকে তবে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই জাতিসংঘের হুকুম মানতে বাধ্য থাকতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আইন শরিয়াহ আইনের উপরে অবস্থান করছে ততক্ষণ পর্যন্ত শরিয়াহ আইন প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।

দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতাটি অর্থনৈতিক। শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund) থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ফিরিয়ে আনতে হবে। আইএমএফ এর আর্টিকেলস অব অ্যাগরিমেন্টে স্বর্ণকে অর্থ হিসাবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দীনার ও দিরহাম কোরআনে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও তাঁর সাহাবীগণ এই মুদ্রাই ব্যবহার করেছেন, তাই এটা সুন্নাহ। স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার মূল্য সময়ের সাথে পতন হয় না, কারণ মুদ্রার মূল্য মুদ্রার মধ্যেই নিহিত। কাগজের মুদ্রার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে আইএমএফ এবং একে তারা অর্থনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। কোন দেশ ওয়ার্ল্ড গভার্নমেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল ল কে অমান্য করে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে আইএমএফ সেই দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধ্বস নামিয়ে দেবে। এছাড়া সম্পূর্ণ শরীয়তসিদ্ধ হতে গেলে আইএমএফ এর কাছ থেকে সুদে ঋণ নেওয়াও বন্ধ করতে হবে। আইএমএফ ছাড়া আরো রয়েছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেটা বন্ধ না করলে যায়োনিস্ট আক্রমণের হাত থেকে কখনোই বাঁচা যাবে না। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সমস্ত ব্যাংকের মরণ থাবা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মোটকথা, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি রাষ্ট্র আধুনিক গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে এবং জাতিসংঘ, আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সদস্য হিসাবে বিদ্যমান থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেখানে শরিয়াহ আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) সাথে তামাশা করা ছাড়া আর কিছুই না।

অর্থাৎ শরিয়াহ আইনকে প্রয়োগ করতে হলে এমন একটি ভূখণ্ড প্রয়োজন যেখানে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। ফলে সেই ভূখণ্ডে তাঁর আইনই হবে সর্বোচ্চ আইন, তাঁর কর্তৃত্বই চূড়ান্ত কর্তৃত্ব। একে বলা হয় দারুল ইসলাম। দারুল ইসলাম তখনই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে যখন ইসলামী খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:১৭
১৪টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন-হাদিস অনুযায়ী তারা পাকিস্তান এবং অন্যরা অন্যদেশ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২১



সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×