somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যান আমি সামনের পকেটে মানিব্যাগ রাখি ?

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাল ২০০৯ । আমি তখন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । থাকতাম মেসে, ষোলশহর ২নং গেট-এই এলাকায় ।

সেদিন তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল । যাকে কবিতার ভাষায় বলে অঝোর স্রাবণ । সারাদিন কারেন্টের লুকোচুরি খেলার সাথে আমিও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম নিজের সাথে লুকোচুরি খেলায় । ফলস্বরূপ হাতে ১০ দিন সময় পেয়েও অ্যাসাইনমেন্টটা কমপ্লিট করতে পারিনি । এবং সেটা জমা দেওয়ার আগের দিন মনে হল । এক হাতে কলম আর অন্য হাতে জলন্ত সিগারেট নিয়ে শুরু করলাম অসাধ্য সাধন করার । যখন শেষ হল তখন সময় রাত ৪ টা ছুই ছুই করছে । সাহস করে আর বিছানার দিকে তাকালাম না, জানি যে এখন ঘুমিয়ে পরলে দুপুর ১২ টার আগে ঘুম ভাঙ্গবেনা । কিন্তু চেয়ারে হেলান দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম তা এক মাত্র আল্লাহই জানে । কি কারনে যেন ঘুমটা ভেঙ্গে গেল । মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি আর মাত্র ২০ মিনিট আছে সকাল ৮.১৫ টার শাটল ট্রেন ধরতে । নিজেরে একটা গালি দিয়ে ছুটলাম ট্রেন ধরতে । এদিকে বন্ধুরা ক্রমাগত ফোন দিতে লাগল, কিরে হালার পো কই তুই,ট্রেনতো ছাইড়া দিলো ? আইতাছি বলে ফোনটা রেখে দিলাম । দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম ট্রেনটা ছেড়ে দিচ্ছে, তাই কথা পুরোপুরি শেষ না করেই ফোনটা রেখে দিলাম । হাটা বাদ দিয়ে অবশেষে দৌড়াতে শুরু করলাম, কিন্তু তারপরেও ট্রেনটা অল্পের জন্য মিস করে ফেললাম । এই সময়টা আমার কাছে খুব অসহায় লাগে যখন বন্ধুরা ট্রেনে আর আমি ট্রেন মিস করে রেল লাইনের পাশে দাড়িয়ে থাকি ।

নিয়তিকে গালাগাল করে হাটা শুরু করলাম শেষ ভরসা ৩ নং লোকাল বাস ধরার জন্য । রাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখি অনেক ভীড় । আমার মত যেসব হতভাইগ্যা পোলাপান ট্রেন মিস করসে সব খাড়ায়া আছে । চিন্তায় পইরা গেলাম, এমনেই চট্রগ্রামের ৩ নং লোকাল বাস ঢাকার লোকাল বাসের চেয়ে সাইজে ছোট, ঠিক মত বইতেও পারি না তারপরে এই ভীড় ঠেইল্লা উঠমু ক্যামনে ? পর পর ২ টা বাস গেল উঠতে পারলাম না । কিছুক্ষন পর দেখি আরেকটা বাস আসতেছে । এই বাসে না উঠতে পারলে অনেক দেরি হয়ে যাবে । তাই নিয়ত করে ফেললাম যেভাবেই হোক এই বাসে আমাকে উঠতেই হবে । বাস আসতেই নিজের বিশাল ভুঁড়িটাকে রাইফেলের বেয়নেট চার্জের মত ঠেলে ঠুলে, অন্য মাইনষের ঠ্যাং মাড়িয়ে অবশেষে আমি বাসে উঠলাম ।

ওওহফ, কি শান্তি, অবশেষে তাহারে পাইলাম এমন একটা ভাব আমার মনে । বাস জ্যামে আটকাচ্ছে আবার খোলা রাস্তা পেয়ে সাই সাই করে ছুটচ্ছে । আর আমি ? কাচ বিহীন খোলা জানালার পাশে বসে আরামসে বাতাস খাচ্ছি । কিছুক্ষন পর কনডাক্টর এসে ভাড়া চাইলে, আমি ভাড়া দেওয়ার জন্য মানিব্যাগ বের করতে গিয়ে হঠাৎ একটা হার্টবিট মিস করে ফেললাম । প্যান্টের পেছনের পকেটে মানিব্যাগটা নেই । আমার স্পষ্ট মনে আছে, বাসে উঠার আগে একটা সিগারেট ধরিয়ে ছিলাম তখনও মানিব্যাগটা পেছনের পকেটে ছিল । আমি সামনের পকেটে, ব্যাগের ভেতরে, সিটের নিচে আশে পাশে যতদূর চোখ যায় তন্ন তন্ন হয়ে আমার জীবনের প্রথম মানিব্যাগটা খুজচ্ছি, কিন্তু পাচ্ছিনা । কনডাক্টরে কোনমতে বললাম- মামা পরে লও । পায়ের ঘাম মাথায় উঠে যায় যায় অবস্থা । আমার ভার্সিটির আইডি কার্ড, ব্যাংকের ডেবিট কার্ড সব গেল । এক সময় চক্ষু লজ্জা ভুলে পাশের অপরিচিত সহযাত্রীকে সব খুলে বললাম । সে আমার অবস্থা শুনে মামাকে ডেকে আমার ভাড়াটা দিয়ে দিলো । কাধ থেকে মনে হল ৫ টনী বোঝাটা নেমে গেল । বাস থেকে নামার পর আমার পাশের ওই সহযাত্রীকে বললাম- ভাই আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিন, আমি ফ্লেক্সি করে টাকাটা আপনার নাম্বারে পাঠিয়ে দিব । উনি হেসে বললেন- লাগবে না, আসলে আমি নিজে খুশী হয়েছি আপনার এই বিপদে আপনাকে সাহায্য করতে পেরে । ভালো থাকবেন । এই বলে উনি হাটা শুরু করলেন ।

ওই ঘটনার পর অনেক দিন কেটে গেছে । অনেক নতুন মুখের ভীড়ে পুরনো অনেক মুখকে আজ আর মনে করতে পারি না । কিন্তু ওই ভাইকে আজো ভুলিনি । তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, ওই ভাইয়ের নাম কিংবা চেহারা কোনটাই আজ আমার মনে নেই । শুধু তার ঝাপসা একটা প্রতিচ্ছবি আমার চোখে ভাসে ।

এরপর ওই দিন থেকে আমি যেটাতেই উঠি না কেন সেটা হতে পারে বাস কিংবা লেগুনা মানিব্যাগটা সব সময়টা সামনের পকেটে নিয়েই উঠি, বলাতো যায় না আবার কখন মেরে দেয় ।
২৩টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×