somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিক্তকথন

০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হলে এসে প্রথম প্রথম খুব একা লাগতো । মায়ের মোবাইলের ভয়েস রেকর্ড করে রাখতাম । সারারাত ধরে ওটাই শুনতাম । দশ দিন পর পর বাসায় চলে যেতাম । যখন খুব মন খারাপ হতো , বন্ধু শুভ্রর সাথে ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাটতে থাকতাম । এক পর্যায়ে শুভ্র বলতো , চলো খুলনা যাই । আমি মাথা নাড়তাম । নাহ , কদিন আগেই না আসলাম ! ও টিকিট কেটে আসতো । আমি কোন রকমেই না যাবার পক্ষে । আর বাস ছাড়ার ঠিক আগে আগে আমার ব্যাগও গোছানো হয়ে যেতো । :D

কিছুদিন যেতেই এই সমস্যাটা কেটে গেলো । আমাদের আরেক বন্ধু রনির ঢাকায় আগমন ঘটলো । ওর মোবাইলটা আমাদের জন্য মহা আশির্বাদে পরিনত হলো । সারারাত মোবাইল দিয়ে কি কি করা যায় সেগুলির পাঠ নিতাম আমরা । দিনরাত ওটা নিয়েই থাকতাম । মলি জলি পলি......

আমাদের দেশের পাবলিক ভার্সিটির হলগুলিতে সাধারনত স্থানীয় ছেলেরা কমই থাকে । বেশিরভাগকেই আসতে হয় দুর শহর থেকে । বাবাকে ছেড়ে , মাকে ছেড়ে , বন্ধুদের ছেড়ে একরকম শিকড় ছিড়ে চলে আসতে হয় । এরপর একে অপরের উপর ঠেস দিয়ে খুব কষ্টের কিছু দিন , কিছু মাস কাটে । প্রথম প্রথম হলের বেডে শুয়ে সারা রাত কান্না আসে । পনেরো দিন পরেই অটো নিয়ে বাড়ি চলে যেতে হয় । বাড়ি যাওয়ার সময় কি আনন্দ ! ফেরার সময় সারাটা রাস্তা মায়ের মুখ মনে পড়তে থাকে । রাস্তার প্রতিটা পায়ের ধাপকে বিষন্ন লাগে ।.....এ রকম একটা সময় , ভার্সিটি জীবনে পা রাখা সকল হলের ছেলেদের জন্যই কম বেশি একই ।

এর মধ্যে মধ্যে আবার থাকে আরেক বিপত্তি । ছেলেটার অভিযোজন শুরু হবার আগেই শুরু হয় টিকে থাকার নতুন লড়াই । শুরু হয় বিভিন্ন অস্বাভাবিক হলভিত্তিক কর্মকান্ড ( গেস্ট রুম সিস্টেম একটি ) । অনেকেই বিব্রত হয়ে প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত ত্যাগ করে । অনেকের উপায় না থাকায় চুপচাপ কয়েক রাত চোখের জল ঝরায় , সহ্য করে যায় ।

অনেক সুশীল আবার আগ বাড়িয়ে উল্লেখ করে থাকেন , যাতে কেউ বেয়াদবি না করে তার জন্য আগাম কিছু ব্যাবস্থা এভাবে নেয়া হয় । আগাম টাইট দেয়া হয় । কিন্তু নিজের উপলব্ধি থেকে মনে হয় , যে ছেলে অনেক দুর থেকে নতুন শহরে পা রাখে , হল থেকে ক্লাসের রাস্তাটা ভালভাবে চেনে না , হলের সবগুলো ডাইনিং ভালোভাবে চেনে না , তার জন্য বেয়াদবি করাটা তো তখন অনেকটা ঐতিহাসিক ব্যাপারের মত !

আমার ঢাকায় আসার প্রায় দুই বছর পরে খুলনা থেকে আসা এক ছেলের সাথে ডিএমসির ফজলে রাব্বী হলের মেইন বিল্ডিংয়ের গেটে দাড়িয়ে পরিচয় হলো । এসেছে এখানে আমাদের দুই ব্যাচ জুনিয়র হিসেবে । খুব আগ্রহ নিয়ে কথা বলছিলো । বুঝলাম , এলাকার মানুষ পেয়ে কথার ভুত চেপেছে ।

ছেলেটার সাথে দেখা হওয়ার দুদিনের মাথায় সে আমাকে কিছু সমস্যার কথা খুলে বলে । সে মানিয়ে উঠতে পারছে না । একটু নরম প্রকৃতির হওয়ায় হলে উঠে খাবারের সমস্যা , বাসার জন্য খারাপ লাগা , পড়াশুনার প্রেশার সব মিলিয়ে এলেবেলে অবস্থা । এর সাথে সরকারি ভার্সিটির হলে ফার্স্ট ইয়ারের কম বেশি যেসব সমস্যা থাকে , সেসবে তার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে । এখান থেকে সে মাইগ্রেশন করতে চায় ।

শুনে আমার খারাপ লেগেছিলো । টানা একমাসের চেষ্টায় এক পর্যায়ে ছেলেটাকে আমি ঢাকায় থেকে যাওয়ার ব্যাপারে রাজি করাতে পারলেও দুঃখজনক এক পরিস্থিতির কারনে সে ঢাকা মেডিকেল থেকে শেষ পর্যন্ত হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায় । পরে ওদের ক্লাসমেটদের কাছ থেকে এক সময় জানতে পারি ছেলেটা খুলনা মেডিকেলে মাইগ্রেশন নিয়ে চলে গেছে । এর পেছনে কিছু বড় ভাইয়ের অবদান ছিলো ।

শিক্ষার জন্য ভুতগ্রাম থেকে উঠে আসা একটা ছেলে এই উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এসে rag এর মাধ্যমে আসলেই কি কিছু শেখে ? যুক্তি দেয়া হয় , সিনিয়রদের কাছে ভদ্রতার বিধান শেখে । সম্পর্ক ভাল হয় । বিতর্কের জায়গাটা এখানেই । ভদ্রতা শেখানোর এ কি পদ্ধতি ! কান ধরে উঠাবসা , বিভিন্ন অশ্লীল কাজ , গালাগাল যদি ভদ্রতা শেখানোর মাধ্যম হয় , তবে আমার ধারনা আমাদের কেউই বাবা মা এবং পরিবারের কাছ থেকে কোন ভদ্রতাই শিখতে পারি নি । আমার বাবা মা তো আমাকে এভাবে ভদ্রতা শেখান নি !

ছোট ভাই বানাতে গিয়ে পরের ছেলেকে যেসব কথা বলা হয় , নিজের ভাইকে কি সেটা বলা সম্ভব ? নিজের ভাই জুনিয়র হয়ে আপনার হলে আসলে যেভাবে শেখাতেন , সেভাবে শেখানো কি অসম্ভব !

আমেরিকান এক বিখ্যাত সিরিয়াল কিলারকে তার সাক্ষাতকার নেয়ার সময় একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো , কেন এগুলি করলেন ? তিনি বলেছিলেন , পৃথিবী আমার উপর অন্যায় করেছে ।
আমি অবাক হয়ে চিন্তা করেছিলাম , প্রত্যেকটা মানুষই কি নিজের কাজের জাস্টিফিকেশন খুজে নেয় ! একজন সিরিয়াল কিলারেরও তাহলে বলার কিছু থাকে !

আসলেই তাই । নিজের পক্ষে দাড়ানোর জন্য যুক্তি খুনিরও থাকে , মুনিরও থাকে ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×