somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নরকের পথ

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- ভাই এতো ভয় পান কেনো ?
একটু থতমত খেয়ে দেখলাম কথাটা কে বললো । নিশ্চিন্ত হলাম । ভয় পাওয়ার মত কিছু হয় নাই ।
- তারপর কি খবর ? চা খাও । আমি একটু অস্ফুট হেসে বললাম ।
কিন্তু এ ছেলে নাছোড় বান্দা , উত্তরটা দিবেন না ?

ভালো করে আগামাথা একবার চোখ বুলালাম । ছেলের জ্যাকেটের কলারটা উল্টা হয়ে আছে । চুল মনে হয় নতুন করে ব্যাকব্রাশ করেছে । চোখটাও একটু অন্যরকম লাগছে । চোখে কি কাজল দিয়ে আসছে নাকি ! বোধহয় আসছে ।
আমি আর কি বলবো ! বললাম , বসো । আগে বুঝে নেই কী বলতে চাচ্ছো । বুঝিই তো নাই ।
- আপনি পলিটিক্যাল লেখা দেন না ক্যান ?

একটু ভিমরি খাইলাম । এইরকম প্রশ্ন আসবে চিন্তাও করতে পারি নাই । হাইসা দিলাম ।
হাসার অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে । আমার ফেসবুক বয়স সর্বসাকুল্যে দুইমাস [বইলা রাখি , দুইমাস আগে আমি একটা ল্যাপটপ কিনছি ।] আমার অনেক কাছের ফ্রেন্ডরাও জানে না , ফেসবুকে আমার একটা একাউন্ট আছে । তাই এই টপিক নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করাটা বেশ একটা মজারই ব্যাপার ।

ছেলেটা বসলো । ছেলেটাকে দেখলেই ভালো লাগে । বুদ্ধিসুদ্ধি আছে । ফেসবুকে দেখছি ব্যাপক হানাহানি করে বেড়ায় । দম আছে ।
- সবুজ , চার কাপ চা দে । চিল্লানি দিলাম ।
সবুজ হলে চা বানায় । ব্যাপক চা । চিনির সরবতের থেকেও ভালো । আমি সকালবিকাল এই চা খাই ।
- চারকাপ ক্যান ? আমি দুই কাপ খাবো না ভাই ।
আমি হাসলাম , তুমি খাবা এককাপ । আমি খাবো তিনকাপ ।
ছেলে অবাক হইলো , বলেন কি !
মুচকি হাসলাম । তিনকাপ চা আমিও খাবো না । কিন্তু জুনিয়রের হাত থেকে আলোচনার লাগাম নিজের হাতে নেয়ার রাস্তা তৈরী করলাম । ট্রিকস কাজ দিছে । জুনিয়র একটু মোহাচ্ছন্ন । কথা বলার সুযোগ আমি তৈরী করে ফেলেছি ।

একটু ওর দিকে পাশ ফিরে বললাম , কী মনে হয় তোমার ? পলিটিক্যাল ঘৃনা ছড়িয়ে কি লাভ ? সবাই মিলে আমরা দেশটারে শুয়োরের খোয়াড় বানানোর টেন্ডার নিছি নাকি ?
ভদ্র ছেলে । শুয়োর শব্দটা মনে হয় সহ্য করতে পারলোনা । চোখমুখ ফেকাঁসে করে ফেললো । ভদ্র ছেলেদের এই সমস্যা আছে । আবেগটা মুখে চলে আসে । এই ছেলেটাও একই জাতের [যদিও তাকেই আমি ফেসবুকে দেখছি গালাগালির ম্যারাথন চালাইতে] ।

এরই ফাঁকে সবুজ চা দিয়ে গেছে । চায়ের নিচ থেকে চিনির ব্যাপকতা দেখা যাচ্ছে । আনন্দে মনটা ভরে গেলো ।
ভদ্র জুনিয়রও সামলে নিয়েছে , ভাই ! তাই বলে সত্যের পক্ষ নেবেন না ?
আমি নিশ্চিন্তে সবুজের চায়ে চুমুক দিলাম । সরবত ফেল । মনে মনে সবুজকে প্রতিদিনের মতো আরেকবার ধন্যবাদ দিলাম ।

চায়ের কাপ সামনে রেখে জুনিয়রকে বললাম , শোনো , তোমার কাছে যেটা সত্য , সবার কাছে সেটা নাও হতে পারে । আমরা ৪৭ এ মনে করছিলাম এইটাই শেষ সত্য । শেষ হয় নাই । ৬৯ এও একইরকম ভাবছিলাম , শেষ হয় নাই । ৭১ এও মানুষ ভাবছিলো , এই শেষ । শেষ হইছে ? সময়কে এতোটা বোকা ভেবো না ।

ছেলেটা হালকা বিভ্রান্ত হয়ে গেছে । ওর মুখের উপর একটা মাছি পড়েছে । গুয়ে মাছি বোধহয় । বো বো শব্দ করছে । তবে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আমি বুঝি , বিভ্রান্তি কাটিয়ে ছেলেটা উঠে দাড়াবেই । সে তার মতের পক্ষে কথা বলবেই । এতো সহজেই যদি সবাই সব মেনে নিতো , তাহলে তো অনাদিকাল থেকে পৃথিবীটা ভেরেন্ডাভাজির মতো বিস্বাদ মনে হইতো !

এরই ফাঁকে সবুজের একটা কাপ ফাঁকা হয়ে গেছে । দ্বিতীয় কাপে চুমুক দিয়ে জুনিয়রের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে উসখুস করছে । আমি ওর দিকে ফিরতেই হেসে হেসে বললো , ভাই দ্যান্তের একটা কথা আছে । নরকের সবচে নিচের স্থানে সেই থাকবে , যে সত্য মিথ্যার লড়াইয়ে নিরপেক্ষ থাকে ।
আমি হাসলাম । এই লাইনটা আমি আগেও শুনেছি । ছেলেকে বলাও যাচ্ছে না যে , ” দ্যান্তের রেফারেন্সটা অনেক আগে থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ । “ এরই মধ্যে আরেকটি মাছি এসে ছেলেটার মুখের উপর যোগ দিয়েছে ।

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম , শোনো ইতিহাসের যে সংঘাত , সেটা ভালো আর খারাপের নয় , আদর্শের । সত্য মিথ্যারও নয় , আত্মপরিচয়ের । সময় কখনো বিভেদ থামাতে পারেনি । পারবেও না । ২০১৫ তেও না , ২৫ এও না । তাই হিংসাকে পুজি করে আমি ব্যবসায় নামতে নামবো কেন ?

বুঝতে পারছি , জুনিয়র বুঝতে চাচ্ছে না । নতুন যুক্তি খুজছে । একটা মাছি তার মুখের উপর থেকে উড়ে কানের উপর চলে গেছে । ছেলেটা টেরও পাচ্ছে না । কী অদ্ভুত মানুষের মন আর বিশ্বাস ! মনে মনে হাসলাম ।
দুই কাপ চা শেষ হয়েছে । আমি আর আগাইতে চাই না । কি হবে ! এতে বরং আমাকে ঘৃনা করার আরেকজন লোকই শুধু বাড়বে ।

আমি উঠে দাড়ালাম । ছেলেটা আরেকটা কিছু বলতে চাচ্ছিলো । আমি মাথা নাড়ালাম , আজ না , আরেকদিন । রুমে আইসো ।
কথাটা বলে ছেলের মুখে বসা মাছি দুটাকে উড়িয়ে দিয়ে আমি পা বাড়ালাম । জুনিয়র আর এককাপ চা সবুজের দোকানেই পড়ে রইলো ।

আমাকে এখন রুমে ফিরতে হবে । একটা গোসল দিতে হবে । তারপর কাপড়গুলা ইস্ত্রি করতে হবে । আর সারাজীবন ধরে নরকে যাবার যে পথটা তৈরী করেছি , সেটা আরেকটু গুছিয়ে নিতে হবে ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×