ঈশা কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করছে , কোনায় বসা স্কুলে নতুন আসা ছেলেটা তাকে ফলো করছে । কিন্তু কোন কথা বলেনা । ঈশার বেশ বিরক্ত লাগছে । এসব ছেলেরা এমনই । ভ্যাবলার মত সারাবছর চেয়ে থাকবে , কিন্তু কিছুই বলবে না । গতকাল স্কুলের গেট ক্রস করার সময় কি যেন একটা ঈশার মাথার উপর এসে পড়লো । পরে খেয়াল করে দেখে একটা দলা পাকাঁনো কাগজ । কে ছুড়লো দেখার জন্য এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকেই পাওয়া গেলোনা । ঈশার ধারনা এই ছেলেটাই হবে ।
- ক্লাস আজ তাড়াতাড়ি ছুটি হবে ক্যাপ্টেন ।
ঈশা তাকিয়ে দেখে জুহি ।
- তাই নাকি ? কে বললো ?
- হেলাল স্যার টিফিনের সময় বলে গেছেন । যাদের গার্জিয়ান এসে নিয়ে যায় , তাদের আগাম অফিসের ফোন থেকে ফোন করে দিতে ।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ একটা কাঠের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলো ঈশা । সামলে উঠে দেখে সেই মিচকে বেয়াদব ছেলেটা । আরে ! পা বাড়িয়ে দিয়েছিলো নাকি !
ছেলেটা মিচমিচ করে হাসছে । ঈশা ঘটনা বুঝে গেছে । আরেকটা চিঠি তার হাতে এই ফাঁকে গুজে দেয়া হয়েছে । কিন্তু কোন রিএকশন দেখানো যাবেনা । জুহি বুঝে ফেললে কেলেংকারি হয়ে যাবে ।
দুর থেকে ছেলেটার শয়তানি হাসি দেখা যাচ্ছে । ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো । কাগজটা দলা করে জোরে ছুড়ে ফেলে দিলো । জুহি মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । ঈশা কোন কথা না বলে জোরে হাটা শুরু করলো ।
কিছুদুর যেতেই কি মনে করে পেছনে তাকিয়ে মনে হলো চিঠিটা নিয়ে আসে । কিন্তু ছেলেটার পিত্তিজ্বালানো হাসির কথা মনে করে আর ফিরলো না ।
পরের কাহিনী ঈশা জানে । পরের দিনই রটে গেলো সুমন নামের নতুন ছেলেটা প্রীতি নামে মেয়েটার গায়ে একটা কাগজের দলা ছুড়ে মেরেছে । সেই চিঠি পড়ে প্রীতি হেডস্যারকে দিয়ে এসেছে । সুমনের গার্জিয়ান কল হয়েছে । ঈশার খুশি হওয়া উচিত ছিলো । কিন্তু পারেনি । ঈশার খুব খারাপ লাগছে । চিঠিটা ওভাবে ছুড়ে মারা উচিত হয়নি ।
চিঠিটা পড়তেও অবশ্য খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো । মানুষ সবকিছু আসলে সবসময় বুঝেশুনে করেনা । হঠাৎ করেও অনেক কিছু ঘটে যায় । এখন সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিটলে হয় ।
কিন্তু কিছুই ভালোয় ভালোয় মিটলো না । সুমনের টিসি হয়ে গেলো । ঈশার সাথে সুমনের পরবর্তীতে আর কোনদিনও দেখা হলোনা । ঈশার অবশ্য খুব অপরাধবোধ হতো । মাঝে মাঝে আবার ইচ্ছা হতো , চিঠিটায় কি লেখা ছিলো জানার জন্য । অনেকবার জিজ্ঞেস করি করি করেও প্রীতিকে জিজ্ঞেস করা হয়নি । জীবনে পাওয়া প্রথম চিঠিটাই মিস হয়ে গেলো । চিঠি তো নয় , প্রেমপত্র । খুব বড় একটা মিস । সারাজীবন খচখচানি থেকে যাবে ।
ঈশা একটু গোপনে খোজও করেছিলো । সুমনরা শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলো ।
_____________________
- এটা তোমার জীবনের গল্প ?
আসাদের প্রশ্নটায় মজা পেয়ে গেলো ঈশা ।
- হুম । তো কার জীবনের হবে ? মজার না !
- হুম । অদ্ভুত সাইকোলজি আছে । খুব সহজে কিছু পেয়ে গেলে মানুষ ছেড়ে যেতে চায় । পরে ভুল বুঝে ফেরত আসা যায় না । জীবন আসলে ওয়ান ওয়ে রোড । তুমি আসলেই একটা লাকি শৈশব কাটিয়েছো । আমার এগুলি কিছুই হয় নাই । কেউ চিঠি দেয় নাই । তোমাকে আমার খুব হিংসা হয় ।
আসাদ বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেলো । হয়তো আকাশের দিকে চেয়ে থাকবে । এই বদভ্যাস একবছর ধরেই দেখে আসছে ঈশা । লোকটার কাজকারবার সবগুলোই একা একজন মানুষের মত । কেমন বিষন্ন যেনো ।
চুল মেলে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো ঈশা । মন ভালো হয়ে গেছে । এই ছোট্ট জীবনে উপহার পাওয়া ছোট্ট ছোট্ট সুন্দর ব্যাপারগুলো মিস করতে নেই । এগুলি খুব দামি ।
উপহার আসলে অনেক ধরনের হয় । উপহার দেখতে কখনো কখনো ক্ষুদ্র হয় । কখনো কখনো বড় হয় । উপহার মূর্ত হয় । উপহার বিমূর্ত হয় । উপহার ছোট্ট দলাপাঁকানো চিঠি হয় । উপহার একটা চাবির রিং হয় । উপহার একটা চিনামাটির কচ্ছপের কিউট বাচ্চা হয় , একটা বাঁশের বাঁশি হয় । আবার কখনো কখনো ক্লাস মিস দিয়ে , পরীক্ষার ভয় মাথায় নিয়ে চুপচাপ বসে থাকা সন্ধা হয় ।
তবে সবচেয়ে সুন্দর উপহার হচ্ছে এনিভার্সারির রাতে ভুলোমনের আসামীটাকে একটা মিথ্যা গল্প উপহার দিয়ে চুল এলোমেলো করে শুয়ে থাকা ।