somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপহারের গল্প

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈশা কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করছে , কোনায় বসা স্কুলে নতুন আসা ছেলেটা তাকে ফলো করছে । কিন্তু কোন কথা বলেনা । ঈশার বেশ বিরক্ত লাগছে । এসব ছেলেরা এমনই । ভ্যাবলার মত সারাবছর চেয়ে থাকবে , কিন্তু কিছুই বলবে না । গতকাল স্কুলের গেট ক্রস করার সময় কি যেন একটা ঈশার মাথার উপর এসে পড়লো । পরে খেয়াল করে দেখে একটা দলা পাকাঁনো কাগজ । কে ছুড়লো দেখার জন্য এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকেই পাওয়া গেলোনা । ঈশার ধারনা এই ছেলেটাই হবে ।

- ক্লাস আজ তাড়াতাড়ি ছুটি হবে ক্যাপ্টেন ।

ঈশা তাকিয়ে দেখে জুহি ।

- তাই নাকি ? কে বললো ?

- হেলাল স্যার টিফিনের সময় বলে গেছেন । যাদের গার্জিয়ান এসে নিয়ে যায় , তাদের আগাম অফিসের ফোন থেকে ফোন করে দিতে ।

কথা বলতে বলতে হঠাৎ একটা কাঠের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলো ঈশা । সামলে উঠে দেখে সেই মিচকে বেয়াদব ছেলেটা । আরে ! পা বাড়িয়ে দিয়েছিলো নাকি !

ছেলেটা মিচমিচ করে হাসছে । ঈশা ঘটনা বুঝে গেছে । আরেকটা চিঠি তার হাতে এই ফাঁকে গুজে দেয়া হয়েছে । কিন্তু কোন রিএকশন দেখানো যাবেনা । জুহি বুঝে ফেললে কেলেংকারি হয়ে যাবে ।

দুর থেকে ছেলেটার শয়তানি হাসি দেখা যাচ্ছে । ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো । কাগজটা দলা করে জোরে ছুড়ে ফেলে দিলো । জুহি মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । ঈশা কোন কথা না বলে জোরে হাটা শুরু করলো ।

কিছুদুর যেতেই কি মনে করে পেছনে তাকিয়ে মনে হলো চিঠিটা নিয়ে আসে । কিন্তু ছেলেটার পিত্তিজ্বালানো হাসির কথা মনে করে আর ফিরলো না ।

পরের কাহিনী ঈশা জানে । পরের দিনই রটে গেলো সুমন নামের নতুন ছেলেটা প্রীতি নামে মেয়েটার গায়ে একটা কাগজের দলা ছুড়ে মেরেছে । সেই চিঠি পড়ে প্রীতি হেডস্যারকে দিয়ে এসেছে । সুমনের গার্জিয়ান কল হয়েছে । ঈশার খুশি হওয়া উচিত ছিলো । কিন্তু পারেনি । ঈশার খুব খারাপ লাগছে । চিঠিটা ওভাবে ছুড়ে মারা উচিত হয়নি ।

চিঠিটা পড়তেও অবশ্য খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো । মানুষ সবকিছু আসলে সবসময় বুঝেশুনে করেনা । হঠাৎ করেও অনেক কিছু ঘটে যায় । এখন সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিটলে হয় ।

কিন্তু কিছুই ভালোয় ভালোয় মিটলো না । সুমনের টিসি হয়ে গেলো । ঈশার সাথে সুমনের পরবর্তীতে আর কোনদিনও দেখা হলোনা । ঈশার অবশ্য খুব অপরাধবোধ হতো । মাঝে মাঝে আবার ইচ্ছা হতো , চিঠিটায় কি লেখা ছিলো জানার জন্য । অনেকবার জিজ্ঞেস করি করি করেও প্রীতিকে জিজ্ঞেস করা হয়নি । জীবনে পাওয়া প্রথম চিঠিটাই মিস হয়ে গেলো । চিঠি তো নয় , প্রেমপত্র । খুব বড় একটা মিস । সারাজীবন খচখচানি থেকে যাবে ।

ঈশা একটু গোপনে খোজও করেছিলো । সুমনরা শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলো ।

_____________________

- এটা তোমার জীবনের গল্প ?

আসাদের প্রশ্নটায় মজা পেয়ে গেলো ঈশা ।

- হুম । তো কার জীবনের হবে ? মজার না !

- হুম । অদ্ভুত সাইকোলজি আছে । খুব সহজে কিছু পেয়ে গেলে মানুষ ছেড়ে যেতে চায় । পরে ভুল বুঝে ফেরত আসা যায় না । জীবন আসলে ওয়ান ওয়ে রোড । তুমি আসলেই একটা লাকি শৈশব কাটিয়েছো । আমার এগুলি কিছুই হয় নাই । কেউ চিঠি দেয় নাই । তোমাকে আমার খুব হিংসা হয় ।

আসাদ বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেলো । হয়তো আকাশের দিকে চেয়ে থাকবে । এই বদভ্যাস একবছর ধরেই দেখে আসছে ঈশা । লোকটার কাজকারবার সবগুলোই একা একজন মানুষের মত । কেমন বিষন্ন যেনো ।

চুল মেলে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো ঈশা । মন ভালো হয়ে গেছে । এই ছোট্ট জীবনে উপহার পাওয়া ছোট্ট ছোট্ট সুন্দর ব্যাপারগুলো মিস করতে নেই । এগুলি খুব দামি ।

উপহার আসলে অনেক ধরনের হয় । উপহার দেখতে কখনো কখনো ক্ষুদ্র হয় । কখনো কখনো বড় হয় । উপহার মূর্ত হয় । উপহার বিমূর্ত হয় । উপহার ছোট্ট দলাপাঁকানো চিঠি হয় । উপহার একটা চাবির রিং হয় । উপহার একটা চিনামাটির কচ্ছপের কিউট বাচ্চা হয় , একটা বাঁশের বাঁশি হয় । আবার কখনো কখনো ক্লাস মিস দিয়ে , পরীক্ষার ভয় মাথায় নিয়ে চুপচাপ বসে থাকা সন্ধা হয় ।

তবে সবচেয়ে সুন্দর উপহার হচ্ছে এনিভার্সারির রাতে ভুলোমনের আসামীটাকে একটা মিথ্যা গল্প উপহার দিয়ে চুল এলোমেলো করে শুয়ে থাকা । :)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×