somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ "বৃষ্টির জল" (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
গত দেড় বছর ধরে অর্থীকে ভালোবাসি । ও আমার অনেক ভালো ফ্রেন্ড হওয়ার কারণে কখনোই ভালোবাসার কথাটা বলা হয়নি । কিন্তু , কথায় আছে , প্রেম মানেনা বাঁধা । ওর প্রতি আমার আবেগটা নিয়ন্ত্রণ করা দিনে দিনে কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো । অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম যে অর্থীকে সব কিছু খুলে বলবো । যেই ভাবা সেই কাজ । সব কিছু খুলে বলার জন্য একটা তারিখও ঠিক করে ফেললাম । প্রেমে পড়লে যে মানুষের সাহস বেড়ে যায় তা ভালোই বুঝতে পারছিলাম নিজের এই সাহস দেখে ।
২।
দেখতে দেখতে আমার ঠিক করা সেই তারিখ এসে গেলো । সকাল থেকেই মানসিকভাবে অনেক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম । তবুও অনেক নার্ভাস লাগছিলো । ভার্সিটিতে গিয়ে যখন অর্থীর সাথে দেখা হল তখন নার্ভাসনেসটা আরও বেড়ে গেলো । ওকে কিছু বলতে গিয়েও সাহস হল না । দুপুর পর্যন্ত ক্লাস করলাম । কিন্তু , কিছুই বলা হল না । মনে অনেক সাহস এনে শেষপর্যন্ত অর্থীকে ডাক দিলাম ।
-তুই , আজ বিকালে একটু ভার্সিটিতে আসতে পারবি ?
-কেন ?
-তোর সাথে একটা জরুরী কথা ছিল ।
-এখন বল ।
-এখন বলতে পারবো না । আসতে পারবি কিনা সেটা বল ?
-আচ্ছা , ঠিক আছে । আসবো ।
সাহস করে তো বিকালে আসতে বলে ফেললাম । কিন্তু , আসল কথাটা বলতে পারবো তো । এটা নিয়ে মনে আবার চিন্তার উদয় হল ।
৩।
বিকাল ৫.০৫ । ডিপার্টমেন্টের সামনে সিঁড়িতে বসে আছি । অর্থীকে দেখলাম হনহন করে হেঁটে আসছে । দেখেই হার্টবিট বেড়ে গেলো ।
-এখন তাড়াতাড়ি তোর জরুরী কথা বল । আমাকে সন্ধার আগেই বাসায় ফিরতে হবে ।
-একটু সময় দিবি তো । এসেই সরাসরি জরুরী কথা শুনতে চাচ্ছিশ ।
-আচ্ছা , ঠিক আছে । ধীরেসুস্থেই বল । (একটা মিষ্টি হাসি)
মনে মনে চিন্তা করলাম , আমি আমার ভালোবাসার কথাটা বলার পর এই হাসিটা অর্থীর মুখে থাকবে তো ?
-ওই , কি চিন্তা করিস ?
-না । কিছু না ।
-এখন কথাটা বলবি নাকি এভাবে দাঁড়িয়েই থাকবি ?
-কথাটা বলবো । কিন্তু , কয়েকটা কন্ডিশন আছে ।
-কি এমন কথা বলবি যে কন্ডিশন মানতে হবে ? আমার তো এখন ভয় লাগতেসে । (আবার একটা মিষ্টি হাসি)
-আগে বল কন্ডিশনগুলো মানতে পারবি কিনা ? না হলে বলবো না ।
-আচ্ছা , বল । কি কি কন্ডিশন ?
-প্রথমত , আমি তোকে যে কথাটা বলবো সেটা আর কারও সাথে শেয়ার করতে পারবি না ।
দ্বিতীয়ত , কথাটা শুনে আমার উপর মেজাজ খারাপ করতে পারবি না ।
তৃতীয়ত , কথাটা শোনার পর যদি মেজাজ খারাপ হয়েই যায় তাহলে তা নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং আমাদের বন্ধুত্তের মাঝে কোন প্রকার ব্যাঘাত সৃষ্টি করা যাবে না ।
-বাপরে বাপ । এত কন্ডিশন । আচ্ছা , ঠিক আছে । কন্ডিশনগুলো মানবো । এখন তাড়াতাড়ি কথাটা বলে ফেল ।
-রাগ করবি না তো ?
-আরে বাবা , বললাম তো রাগ করবো না । নির্ভয়ে বলতে পারিস ।
- অর্থী , আমি না গত দেড় বছর ধরে .........
-কি হল আবার ? আঁটকে গেলি কেন ? গত দেড় বছর ধরে ......... তারপর কি ?
-বলতে ভয় লাগছে ।
-ধুর , আমি গেলাম । একটা কথা বলতে এত সময় লাগে ?
-দাড়া । বলছি তো ।
-এখন বললে একবারে বলবি । আমি আর দেরি করতে পারবো না ।
- অর্থী, আমি না গত দেড় বছর ধরে তোকে ভালোবাসি ।
-মানে ?????
-সরি । আমি আসলে ......
অর্থী আর কিছু শোনার অপেক্ষা না করে দ্রুত হেঁটে চলে যেতে লাগলো ।
আমি হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম । কি করা উচিত , কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ।
৪।
রাতেরবেলা অর্থী ফোন করলো । ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম ।
-সার্থক , তোকে কয়েকটা কথা বলি ।
-হুম , বল ।
-তুই আমার অনেক ভালো একটা বন্ধু । তোকে আমি অনেক পছন্দ করি । কিন্তু , সেটা বন্ধু হিসেবে । তুই একটু ভালো করে চিন্তা করে দেখ , বন্ধুত্বটা প্রেমের চেয়েও অনেক উপরে । আমরা মনে হয় বন্ধু হিসেবেই অনেক ভালো থাকবো । এর মাঝে অন্য কিছু চিন্তা করাটা হয়তো উচিত হবে না । আমি আসলে সত্যিই অনেক সরি যে এই কঠিন কথাগুলো তোকে বলতে হচ্ছে । কিন্তু , তুই কষ্ট পেলেও আমার কিছুই করার নেই । কারণ , আমি তোকে কখনোই বন্ধু ছাড়া অন্য কোনভাবে চিন্তা করতে পারবো না ।
কথাগুলো শেষ হবার পর অর্থী লাইনটা কেটে দিল ।
৫।
ক্লাস শেষ হওয়ার পর ডিপার্টমেন্টের সামনের সিঁড়িতে বসে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম । অর্থীকে দেখলাম একটু দূরে একা একা বসে আছে । ওইদিনের কথাটা বলার পর থেকে ওর সাথে আমার কেমন জানি একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়ে গেছে । ও আমার সাথে কথা বলা একবারেই কমিয়ে দিয়েছে । কিন্তু , এখন আর কি করার আছে ...... ভুল যা করার তা তো করেই ফেলেছি । এখন নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকা ছাড়া করার কিছুই নেই ।
হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি আরম্ভ হল । বন্ধুরা সবাই বৃষ্টিতে ভিজতে নেমে গেলো । কিছুক্ষন পর সবাই মিলে আমাকেও টেনে নামিয়ে আনল ।
বৃষ্টিতে ভিজছি এমন সময় মনে হল কে যেন আমার কাঁধে হাত রেখেছে । তাকিয়ে দেখি অর্থী দাঁড়িয়ে আছে ।
-সার্থক , আমার হাতটা একটু ধরবি ?
-মানে ?
-বলছি , আমার হাতটা ধরার জন্য ।
অর্থীর বাড়িয়ে রাখা হাতটা ধরলাম ।
-কথা দে , এই হাতটা কখনোই ছাড়বি না .........
-কথা দিলাম ।
মনে হচ্ছিলো , বৃষ্টি যেন তার সকল ভালোবাসার রঙ নিয়ে ঝরে পড়ছিল আমাদের উপর ।
.
কিন্তু , সেই ভালোবাসার রঙ্গিন বৃষ্টি মুহূর্তেই সাদাকালো হয়ে গেলো যখন বুঝতে পারলাম যে আমি স্বপ্ন দেখছি । ঘুম ভাঙার পর দেখলাম , বাইরে আসলেই ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে । কিন্তু , এই বৃষ্টিটা স্বপ্নের বৃষ্টির মতো রঙ্গিন নয় । কারণ , এই বৃষ্টিতে কেউ আমার হাতটা ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে না ।
কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে । মনে হচ্ছে , কাঁদলে আমার চোখের জল বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে ঝরে পড়বে অর্থীর গায়ের উপর ...........
.
.
আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনে লেখা । অনেক আবেগ নিয়ে বলেছিলো ওর ভালবাসার ঘটনা টা । জানি না কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি । বন্ধুটা আজ প্রাবসে , অনেকদিন কথা হয় না । ভাল থাকিস দোস্ত ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১৩
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×