[অনেক দিন ধরে ভাবছি, বিচিত্র পেশা নিয়ে সামুতে একটা সিরিজ লিখবো। পথে ঘাটে হাঁটতে গেলে সাধারণত এই ধরনের পেশার মানুষের দেখা মিলে। এই বিচিত্র পেশার মানুষদের সাথে আমি কথা বলে আনন্দ পাই, তাদের ছবি তুলি মোবাইলে। ভাবছি এই মানুষ গুলোকে অনলাইনের পাতায় নিয়ে আসবো। তবে কিছু ভুল করছি, অনেকের নাম, মোবাইল বা ঠিকানা রাখা সম্ভব হলেও তা করতে পারি নাই।]
আজকের বিচিত্র পেশার এই কারিগরের নাম, বেলাল। তিনি আগে সিনেমা হলের চাকুরী করতেন, কিন্তু বর্তমানে সিনেমা হলের ব্যবসা তেমন একটা জমজমাট নয় বলে সব সময়ে বেতন পেতেন না, ফলে একদিন ভেবে চিন্তে এই ব্যবসাতে এসে পড়েন। এখন মোটামুটি ভাল আছেন এবং দিনে যা কামাই করেন তা দিয়ে সংসার ভাল চলে। দৈনিক হাজার বারশ টাকা কামাই করেন লাভ অর্ধেকের মত হয় এবং এতে ভাল করেই সংসার চালাতে পারেন। তবে মাঝে মাঝে ছবি হিট হলে এখনো সিনেমা হলে কাজ করেন এবং কিছু টিকেট রেখে দিয়ে উপরি কিছু কামাই করেন।
বেলালের বিচিত্র ব্যবসা হচ্ছে মুরগীর গিলা কলিজা মাথা পা রান্না করে নিয়ে এসে ফুটপাতে বিক্রি করা। মোটামুটি সুন্দর করে দোকান সাজিয়েছেন, সাথে মুরি মাখানোও রেখেছেন! মুরি মাখানোর সাথে বেলালের কাষ্টমারগন মুরগীর এই গিলা কলিজা মাথা পা খেতে পছন্দ করেন। আমি মাঝে মাঝে অফিসে থেকে নেমে বিচিত্র কারনে রাস্তা ঘাটের গাড়ি মানুষ দেখি। সেই সুত্রে আমি বেলালকে অনেক দিন ধরেই দেখে আসছি। কয়েকদিন আগে বেলালকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করি এবং তার প্রসঙ্গে অনেক তথ্য (উপরের গুলো সহ) জেনে যাই।
প্রতিদিন সকালে বাজার থেকে বেলাল মুরগীর এই অংশ গুলো কিনে নিয়ে বাসায় যায় এবং সেগুলো ভাল করে ধুয়ে যথারীতি নিজে বা তার স্ত্রী রান্না করে দেন। রান্না বিষয়ে আমার আগ্রহ থাকায় তাকে আমি আরো বেশি পেয়ে বসি আসলে বেলাল তেমন রান্না জানেন না, স্ত্রীই রান্না করে দেন তবে আজকাল কিছুটা শিখে ফেলেছেন এবং মশলা পাতির ব্যবহার কিছুটা করতে শিখেছেন! হা হা হা
দুনিয়াতে এত ব্যবসা পাতি থাকতে এই ব্যবসায় কেন জিজ্ঞেস করতে বেলাল জানান, খুব কম পুঁজি ছিল বলে আর অন্য কিছু চিন্তা করতে পারি নাই। তবে এখন ভাল ভ্যান কিনেছি, পরিবেশনের ও রান্নার সব কিছু ভাল মানের কিনেছি। আর এই ব্যবসা কি করে মাথায় এল জানতে চাইলে জানালো, দৈনিক বাংলার মোড়ে সন্ধ্যা হলে এমন অনেক দোকান বসত এবং সেখানে মানুষ ভীড় করে খেত বলে চোখে ব্যবসাটা ধরা দেয় এবং কাজটা খুব কঠিন ছিল না বলে এই লাইনে এসেছে। উপরিউক্ত এই রাস্তায় এমন দোকান আর নাই বলে, একাই ব্যবসা করতে পারেন বলে মনে হয়েছিল।
বিকাল তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বা যতক্ষন মালামাল থাকে ততক্ষন বিক্রি করে বাসায় চলে যান। তবে মাঝে মাঝে পুলিশ বেশি জ্বালাতন করে, রাস্তার ধারে বসতে দেয় না। রাজনৈতিক কারনে এই এলাকায় সব সময়েই কিছুটা আলাদাভাবে পুলিশের চোখে ধরা দেয়, তবে সন্ধ্যার পর পুলিশ ভাইরা তার নিয়মিত কাষ্টমার হয়ে যায়। কেহ ১০ টাকার মুরি মাখানো আর ১০ টাকার গিলা কলিজা খেলে মোটামুটি নাস্তার মত হয়ে যায় বল জানালেন, পানি সব সময়েই ফ্রি থাকে।
জানতে চাইলাম, কাষ্টমার হিসাবে কাদের বেশী চোখে পড়ে! বেলাল জানলো, প্রায় সবাই, সব বয়সি! ধনীরা (প্রশ্নটা আপেক্ষিক হলেও) এই খাবার খায় কি না, জানতে চাইলে বেলাল জানালো, অনেক সময় গাড়ির মালিকরাও নেমে এই খাবার খেয়ে থাকে।
যাই হোক, চলে আসার সময় ছবি তুলতে চাইলাম। হাসি মুখে রাজি হয়ে গেল। অনুমতি চাইলাম, অনলাইনে বা কম্পুটারে এই সকল তথ্য প্রকাশ করবো, বেলাল হেসে জানালো, আপত্তি নেই। এই কাজে বেলাল গর্ব করে, আমাকে জানালো চুরি ডাকাতি তো করি না, নিজে কষ্ট করে, শ্রম দিয়ে উপার্জন করি!
আমি বেলালের আরো আরো সাফল্য কামনা করি।
বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র এই দেশের মানুষ, কত কি বিচিত্র পেশা! তবে সবই জীবিকার টানে!
বিচিত্র পেশাঃ ৩
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১১