somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

বিচিত্র পেশাঃ ৪ (বেলাল মিয়ার মুরগীর গিলা কলিজা ভুনা)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[অনেক দিন ধরে ভাবছি, বিচিত্র পেশা নিয়ে সামুতে একটা সিরিজ লিখবো। পথে ঘাটে হাঁটতে গেলে সাধারণত এই ধরনের পেশার মানুষের দেখা মিলে। এই বিচিত্র পেশার মানুষদের সাথে আমি কথা বলে আনন্দ পাই, তাদের ছবি তুলি মোবাইলে। ভাবছি এই মানুষ গুলোকে অনলাইনের পাতায় নিয়ে আসবো। তবে কিছু ভুল করছি, অনেকের নাম, মোবাইল বা ঠিকানা রাখা সম্ভব হলেও তা করতে পারি নাই।]

আজকের বিচিত্র পেশার এই কারিগরের নাম, বেলাল। তিনি আগে সিনেমা হলের চাকুরী করতেন, কিন্তু বর্তমানে সিনেমা হলের ব্যবসা তেমন একটা জমজমাট নয় বলে সব সময়ে বেতন পেতেন না, ফলে একদিন ভেবে চিন্তে এই ব্যবসাতে এসে পড়েন। এখন মোটামুটি ভাল আছেন এবং দিনে যা কামাই করেন তা দিয়ে সংসার ভাল চলে। দৈনিক হাজার বারশ টাকা কামাই করেন লাভ অর্ধেকের মত হয় এবং এতে ভাল করেই সংসার চালাতে পারেন। তবে মাঝে মাঝে ছবি হিট হলে এখনো সিনেমা হলে কাজ করেন এবং কিছু টিকেট রেখে দিয়ে উপরি কিছু কামাই করেন।

বেলালের বিচিত্র ব্যবসা হচ্ছে মুরগীর গিলা কলিজা মাথা পা রান্না করে নিয়ে এসে ফুটপাতে বিক্রি করা। মোটামুটি সুন্দর করে দোকান সাজিয়েছেন, সাথে মুরি মাখানোও রেখেছেন! মুরি মাখানোর সাথে বেলালের কাষ্টমারগন মুরগীর এই গিলা কলিজা মাথা পা খেতে পছন্দ করেন। আমি মাঝে মাঝে অফিসে থেকে নেমে বিচিত্র কারনে রাস্তা ঘাটের গাড়ি মানুষ দেখি। সেই সুত্রে আমি বেলালকে অনেক দিন ধরেই দেখে আসছি। কয়েকদিন আগে বেলালকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করি এবং তার প্রসঙ্গে অনেক তথ্য (উপরের গুলো সহ) জেনে যাই।


প্রতিদিন সকালে বাজার থেকে বেলাল মুরগীর এই অংশ গুলো কিনে নিয়ে বাসায় যায় এবং সেগুলো ভাল করে ধুয়ে যথারীতি নিজে বা তার স্ত্রী রান্না করে দেন। রান্না বিষয়ে আমার আগ্রহ থাকায় তাকে আমি আরো বেশি পেয়ে বসি আসলে বেলাল তেমন রান্না জানেন না, স্ত্রীই রান্না করে দেন তবে আজকাল কিছুটা শিখে ফেলেছেন এবং মশলা পাতির ব্যবহার কিছুটা করতে শিখেছেন! হা হা হা

দুনিয়াতে এত ব্যবসা পাতি থাকতে এই ব্যবসায় কেন জিজ্ঞেস করতে বেলাল জানান, খুব কম পুঁজি ছিল বলে আর অন্য কিছু চিন্তা করতে পারি নাই। তবে এখন ভাল ভ্যান কিনেছি, পরিবেশনের ও রান্নার সব কিছু ভাল মানের কিনেছি। আর এই ব্যবসা কি করে মাথায় এল জানতে চাইলে জানালো, দৈনিক বাংলার মোড়ে সন্ধ্যা হলে এমন অনেক দোকান বসত এবং সেখানে মানুষ ভীড় করে খেত বলে চোখে ব্যবসাটা ধরা দেয় এবং কাজটা খুব কঠিন ছিল না বলে এই লাইনে এসেছে। উপরিউক্ত এই রাস্তায় এমন দোকান আর নাই বলে, একাই ব্যবসা করতে পারেন বলে মনে হয়েছিল।


বিকাল তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বা যতক্ষন মালামাল থাকে ততক্ষন বিক্রি করে বাসায় চলে যান। তবে মাঝে মাঝে পুলিশ বেশি জ্বালাতন করে, রাস্তার ধারে বসতে দেয় না। রাজনৈতিক কারনে এই এলাকায় সব সময়েই কিছুটা আলাদাভাবে পুলিশের চোখে ধরা দেয়, তবে সন্ধ্যার পর পুলিশ ভাইরা তার নিয়মিত কাষ্টমার হয়ে যায়। কেহ ১০ টাকার মুরি মাখানো আর ১০ টাকার গিলা কলিজা খেলে মোটামুটি নাস্তার মত হয়ে যায় বল জানালেন, পানি সব সময়েই ফ্রি থাকে।

জানতে চাইলাম, কাষ্টমার হিসাবে কাদের বেশী চোখে পড়ে! বেলাল জানলো, প্রায় সবাই, সব বয়সি! ধনীরা (প্রশ্নটা আপেক্ষিক হলেও) এই খাবার খায় কি না, জানতে চাইলে বেলাল জানালো, অনেক সময় গাড়ির মালিকরাও নেমে এই খাবার খেয়ে থাকে।

যাই হোক, চলে আসার সময় ছবি তুলতে চাইলাম। হাসি মুখে রাজি হয়ে গেল। অনুমতি চাইলাম, অনলাইনে বা কম্পুটারে এই সকল তথ্য প্রকাশ করবো, বেলাল হেসে জানালো, আপত্তি নেই। এই কাজে বেলাল গর্ব করে, আমাকে জানালো চুরি ডাকাতি তো করি না, নিজে কষ্ট করে, শ্রম দিয়ে উপার্জন করি!

আমি বেলালের আরো আরো সাফল্য কামনা করি।

বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র এই দেশের মানুষ, কত কি বিচিত্র পেশা! তবে সবই জীবিকার টানে!

বিচিত্র পেশাঃ ৩
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১১
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×