'ডিজিটাল' একটা অহেতুক শব্দ এবং এটা আমাদের দেশে বড় করে শোনা যায়, এর চেয়ে বড় হতে পারে 'কম্পিউটারাইজড', মানে সব তথ্য প্রোগ্রামের মাধ্যমে কম্পিউটারের সার্ভারে জমা করবে এবং যার যেটা দরকার দেখবে বা সরকার এমন তথ্য ভান্ডার চালু করবে যাতে প্রতিটা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু সব লেখা থাকবে, থাকবে সব সহায়িকা, আপডেট হবে দিনে দিনে! হা হা হা, আসলে সরকার, সরকারের সব প্রতিষ্ঠান যদি এমন করে কম্পিউটারাইজড হয়ে যায় তবে কিন্তু কেল্লা ফতে! আমাদের এখানে এই 'ডিজিটাল' বলা হলেও আমি ১৯৯১ সালেই মধ্যপ্রাচের অনেক দেশে এমন কম্পিউটারাইজড হতে দেখেছি, ইউরোপ আমেরিকা এর আগেই এত সমস্ত কাজ করে ফেলেছিল, তারা সেই আমলেই অনেক ক্ষেত্রে ভিশন নিয়েছিল পেপারলেস ইনফো! মানে সেই আমলেই আমি দেখেছি আপনার যদি সৌদি আমেরিকি ব্যাংকে একাউন্ট থাকে এবং আপনি যদি আপনার বাসার কাছের সৌদি হলান্ডি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে চান, তুলতে পারবেন, সেটা সেই আমলেই সম্ভব ছিলো! আর এটিএম থেকে টাকা উঠাতে গাড়ি ব্যবহার হত জলের মত, মানে এটিএম মেশিনটা রাস্তার ধারে এমন করে সেই ১৯৯১ সালেই সেট দেখেছি যে, সবাই গাড়িতে বসেই যে কোন ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলে নিত, এখন নিশ্চিত আরো আধুনিক বা আরো সময়োপযোগী হয়েছে!
উপরের কাহিনী বলার প্রয়োজন আলাদা, তবে আপনাদের জানিয়ে গেলাম মাত্র! এটা বলার কারন এই যে, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ দেরীতে হলেও এইসব কাজ করে যাচ্ছে, যা অনেক আগেই করা দরকার ছিলো। যাই হোক, আজ একটা বাস্তব গল্প বলার জন্য এই কথা গুলোর আয়োজন করলাম।
গত দুই দিন আগে আমি মোবাইল রিপেয়ারিং করতে মোতালেব প্লাজায় গিয়েছিলাম। আমার সেট যাকে দিয়েছিলাম, সে আমার কাছে ঘন্টা দুই চেয়েছিল, আমি সেটা দিয়ে অন্যদিকে চলে গিয়েছিলাম। এই দুই ঘন্টা পরে ফিরে এসে দেখি, সেই টেকনিশিয়ান সিটে নেই, আশে পাশে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম তিনি নাকি থানায় গিয়েছেন, তবে ফিরে এসেই আমার কাজ করে দিবেন বলে জানালেন এক সহকর্মী। আমি কিছুটা থতমত খেলেও ব্যাপার না বলে আবারো ঘুরতে বের হয়ে গেলাম এবং আরো ঘন্টা দুই পরে গেলাম এবং তাকে সিটে পেলাম, তিনি আমার সেট রিপেয়ার করছেন। আমাকে পাশে বসতে বলে তিনি জানালেন, একজন সেট রিপেয়ার করে টাকা না দিয়ে চলে গিয়েছিল, তাকে ধরতেই থানায় কেইস করা হয়েছিল এবং আজ থানা থেকে কল আসাতেই তিনি সেখানে গিয়েছেন। পরে আমার ইন্টারেষ্টে ও প্রশ্নে তিনি আমাকে তথ্য জানালেন।
একদিন একজন একটা দামী সেট নিয়ে আসেন, ফন্ট গ্লাস ভাঙ্গা চুরমাচুর। একুশ হাজারে দফারফা হয়ে তিনি কাজ শেষ করলেন, লোকটা সেট দেখি বলে, এদিক ওদিক যেয়েই সেট নিয়ে টাকা না দিয়ে পালিয়ে যায়, এখানে বলে রাখা ভাল, যারাই সেট রিপেয়ার করতে যায়, এই টেকনিশিয়ানেরা তাদের মোবাইল নং টুকে রাখেন, মোবাইল টু মোবাইল কল দেন (এটা হয়ত উনাদের অভিজ্ঞতা)! কিন্তু বিধিবাম, তিনি কল দিতেই দেখেন এই মোবাইল নং আর বাজে না মানে সুইচ অফ! এভাবে কয়েকদিন চেষ্টা করেও তিনি কিছুতেই মোবাইলে পাচ্ছিলেন না, বন্ধ। কি করবেন ভেবে ভেবে দিন যেতেই এক থানার ওসিকে পেলেন, তিনি বললেন এটা কোন ব্যাপার না, নাম্বারটা দাও। ব্যস, এই নাম্বার কার নামে রেজিঃ করা সেটা দেখে তার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য নিয়ে নিলেন এবং সেই গ্রামের বাড়িতে লোক পাঠালেন, এবং চোর ভদ্রলোকের সন্ধান পেয়ে গেলেন! এই প্রতারক চোর চাচাজ্বি হয়ত এতটা ভাবতেই পারেন নাই, ভাবছিলেন মোবাইল বন্ধ করলেই আর তার সন্ধান কেহ পাবে না!
এর পরের কেইস হল, থানা টু থানা যোগাযোগ হল, চোরের বাড়ি থাকা দায় হল! কিছু দিন পরে বুঝতে পারলো এভাবে পালিয়ে থাকা সম্ভব না, ফলে থানায় এসে ধরা দেয় এবং মিমাংসার প্রস্তাব দেয়, যাই হোক, সেই কাজেই টেকনিশিয়ান ভাই থানায় গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি তার টাকা ফেরত পাবেন।
সংক্ষিপ্ত ঘটনা এমন হল মোবাইল নং> আইডি কার্ড> ঠিকানা সংগ্রহ> লোক প্রেরন>লোকাল থানা> স্বীকার!
আলোচ্য বাস্তবের এই গল্প বলার কারন হল, কিজন্য সব কিছুই এখন ডিজিটাল বা কম্পিউটারাইজড হওয়া দরকার এবং এতে জনগনের কি কি সুবিধা হতে পারে! সামান্য একটা মোবাইল নং থেকে কাউকে কত সহজে ধরে ফেলা হল! তবে এখনো এই দেশে বড় বড় চোরেরা এই ডিজিটাল পছন্দ করে না, নিজেরা ধরা খাওয়ার ভয়ে!
জন্ম থেকে বিবাহ, সন্তান থেকে মৃত্যু সব কিছুই ডিজিটাল হয়ে যাক, আমি সরকারকে বলবো, আপনারা আরো আরো ডিজিটাল ডিজিটাল বলে এগিয়ে চলুন! মানুষ নিয়ন্ত্রনে প্রাইমারী বিচারে এই ডিজিটালের বা কম্পিউটারাইজের বিকল্প নেই!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:১৭