ঘটনা ১ঃ
একটা অভিজ্ঞতার কথা না লিখলে চলে না। আমি প্রতিদিন মালিবাগ রেলগেইট থেকে অফিসের পথে রিক্সায় চলি, এখনাকার অনেক রিক্সাচালক আমাকে চিনেন, ফলে ভাড়া বলতেও হয় না, উনারা আমাকে দেখলেই হুডতুলে বলেন, চলেন! মোটামুটি ১০/১২ জনের সাথে এমনি পরিচয় হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহধরে (আমিও সময় আগে পিছে করছি) দেখি এখানে আরো অনেক রিক্সাচালক, পুরানোদের কাউকে না পেলে নূতনদের জিজ্ঞেস করতে হয়। আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, এই নূতন (আমার কাছে) চালকেরা ৪০/৫০টাকা ভাড়া চাইছেন, আমার মনে খটকা লাগে, আমি ৬০টাকাই বলে উঠে ভাড়া দেই, হেসে বলি কম চাইছেন কেন!
পথে গত কয়েকদিনে কয়েকজনের সাথে এভাবে কথা হল, কেন ভাড়া কম চাইছেন? প্রায় উত্তর হচ্ছে, এখন রিক্সা চড়ার লোক পাচ্ছেন না, ঘন্টা ধরে বসে আছেন, ভাড়া নেই, ফলে কম চাইছেন যেন ভাড়া মিস না হয়! আবার গতকয়েক দিনে এমন হয়েছে, অফিসের সামনে নেমে ১০০টাকার নোট দিলে, ৪০টাকা ফেরত দিতে পারছেন না, তখন প্রায় বেলা ১১টা। জানতে চাইলাম, সকাল থেকে ভাড়া পান নাই। গত দুই দুইজন জানালেন, আমিই নাকি তাদের প্রথম যাত্রী, সকাল থেকে আর ভাড়া পান নাই! আজকের জন ১০০টাকার নোট নিয়ে প্রায় ১০জন সামনে পড়া রিক্সাচালকে ভাংতির জন্য জিজ্ঞেস করলেন, কেহ দিতে পারলো না! পরে আমি জানতে চাইলাম, সকালে নাস্তা করেছেন, স্বলাজ হাসিতে বললেন, না! আমি উনাকে বাকী টাকায় নাস্তা করার জন্য বলে অফিসের দিকে চললাম!
গত পরশু বা তারো আগের দিন, পুরানো পরিচিত একজনের সাথে কথা হচ্ছিলো, তিনি জানালেন এখন ১ হাজার টাকা উঠাতে ১২ ঘন্টার বেশী রিক্সা চালাতে হচ্ছে, অনেকদিন তাও হয় না, আরো জানালেন, এত টানা রিক্সা চালানো সহজ নয়, শরীরে সায় দেয় না!
বুঝতে পারছি না, মাথা মাঝে মাঝেই আউলাইয়া যাচ্ছে!
ঘটনা ২
আমাদের টাকা কিভাবে শুন্য হচ্ছে, আসেন আমার নিজের উপর দিয়েই উদাহরণ দেই! ধরেন আমার মাসিক ইনকাম ৭০ হাজার টাকা ছিল বা হত, কিছু সঞ্চয় আছে। গত বছরও ইনকামের টাকা দিয়ে কোনমতে সংসার চালিয়ে পার পেয়ে যেতাম (আহমরি চলা একে বলে), সামান্য লাগলেও এদিক সেদিক থেকে তা ম্যানেজ করে ফেলতাম। এখন আর এই টাকা দিয়ে আগের মত সংসার চালানো সম্ভব না, এখন সব মিলিয়ে ৮০/৯০ হাজার টাকা লাগেই, বিশেষ করে আগের মত বাজার না করেও (হিসাব চাইয়েন না, আগের চেয়ে এখন অনেক কম খরচ করেও তাল পাই না), শিক্ষা খরচ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বাজার দ্বিগুন হয়েছে, এদিকে বরকতও গেছে মনে হয়! আবার মাসে ৫/১০ হাজারের একটা উটকা ঝামেলা আছেই, না বলার উপায় নেই, ঈদচাদ তো আছেই!
এখন বাস্তবতা হচ্ছে মাসে ৫০ হাজারের বেশি ইনকাম হচ্ছে না, কোন মাসে আরো কম (এটা মধ্য মানের ব্যবসাহীরা বুঝতে পারবে), তা হলে বাকী টাকা কোথায় পাচ্ছি! হ্যাঁ, লজ্জায় কাউকে কিছু না বলে সঞ্চয় ভেঙ্গে ফেলছি, ভূর্তুকিটা সঞ্চয় থেকে আসছে, মানে পুঁজি হারাচ্ছি! খরচ বৃদ্ধির জন্য আমাদের মত পরিবার গুলো সঞ্চয় হারিয়ে ফেলছে এবং ভেতরে ভেতরে ভয়ে মরেই যাচ্ছে, এটা দেখার কেহ নাই বা কাউকে বলাও যায় না! আমরা যারা বিশ্বাসী, তারা বিধাতার কাছে হাত তুলে ক্ষমা চাইছি! বিকল্প বা অন্যায় পথে যেহেতু আমাদের পক্ষে রোজগার করা সম্ভব না, ফলে আর কি করা যায়! কিন্তু পরিনাম ভয়াবহ তা বুঝতেই পারছি এক্ষুনি! টাকা শুন্য হতে আর দেরী নেই!
অভ্যন্তরীণ বাজার কিংবা খরচ ব্যবস্থা স্থিতিশীল না হলে কোন ব্যবসাই টিকে থাকতে পারে না!
* কিছু ছালবাল এসে বলতে পারেন, গ্রামে চলে যান, এমন পরামর্শ যারা বলবেন, আমি তাদের বলবো আপনাদের মনধনগান অভিজ্ঞতা কিছুই নাই, দুনিয়াতে এসেছেন মাত্র গরম ভাত সাইজ করতে!