somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরুজীবন। ১১। পশ্চাৎদেশে দুই ঠোক্কর

২৪ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে সবচেয়ে বড় যে ভুলগুলো করেছি, তার মধ্যে তৃতীয়টি হচ্ছে দেশ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স না নিয়ে এদেশে আসা। অসম্ভব কষ্ট করতে হয়েছে এখান থেকে লাইসেন্স পেতে। দিতে হয়েছে পাঁচ-পাঁচটি টেষ্ট। জীবনে কোন কিছুতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফেলের রেকর্ড। যে টাকা খরচ হয়েছে তা দিয়ে আস্ত একটা গাড়ীই কিনে ফেলা যেতো। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই কাপালিক সম্বন্ধে স্বজনদের ধারনা ছিলো, সে গাড়ী নিয়ে রাস্তায় বের হলে তার গাড়ীর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাদের বোঝানোই যায় নি যে লাইসেন্সটা পরীক্ষায় সবকিছু ঠিক-ঠাকভাবে করেই পেতে হয়েছে, এমনি এমনি দেয়নি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এখনো দূর্ঘটনার জন্য জরিমানা দিতে না হলেও তাদের কথা সত্য প্রমান করার জন্যই বোধ হয় দূর্ঘটনা ঠিকই কাপালিকের ঘাড়ে (নাকি পশ্চাতে!) এসে পড়েছে।

এদেশে গাড়ী চলে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে। দুইটি রাস্তা যেখান দিয়ে ক্রস করেছে সেখানে থাকে গোলচক্কর। এই গোলচক্করে কোন সিগনাল লাইট থাকে না। বড় রাস্তা হলে অত্যন্ত ভীড়ের সময় পুলিশ থাকে, অন্য সময় থাকে না। গোলচক্কর দিয়ে যাওয়ার নিয়ম হলো, বামদিকে তাকিয়ে সুযোগের সন্ধানে থাকতে হবে কখন সেখানে গাড়ী না থাকে। একটু ফাক পেলেই সুরুত করে চলে যেতে হবে। যতক্ষণ রাস্তা খালি না হবে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। না করলে দূর্ঘটনা নিশ্চিত।

এই রকম এক গোলচক্করে এসে থেমেছি; সামনে থেকে একটা একটা করে গাড়ী যাচ্ছে আর অল্প অল্প করে এগুচ্ছি, হঠাৎ গাড়ীর পেছনে এক ধাক্কা। ইমার্জোন্সি সিগনাল দিয়ে নেমে এসে দেখি পেছন থেকে একটা পিকআপ এসে ধাক্কা মেরে আমার রিয়ার বাম্পারের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে। ড্রাইভার কম বয়সী একটা বাঙ্গালী ছেলে। আমি চলে গিয়েছি ভেবে সে নাকি বামদিকে তাকিয়ে গাড়ী টান দিয়েছে, আমাকে খেয়ালই করেনি। বলি, দিন-দূপুরে কাজটা কি হলো? তার আক্ষেপ, ভাই আমার কপালটাই খারাপ, এই নিয়ে গত দুই বছরে ছয়-সাতবার একই ঘটনা ঘটল। কাল বাড়ী থেকে এসে আজই মাত্র কফিলকে (স্পন্সর) বলে-কয়ে গাড়ী নিয়ে বের হয়েছি, আর হয়ে গেলো এক্সিডেন্ট। এই কারনে জীবনে কিছু করতে পারলাম না। গাড়ীটার ব্রেক কোন সময় কাজ করে, কোন সময় করে না। কালই এটাকে ইস্তেমারার (রুট পারমিট) জন্য গ্যারেজে দেয়ার কথা।

কি আর করা। কাছের পার্কিং-এ গাড়ী পার্ক করে ট্রিপল নাইনে ফোন করে পুলিশ আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। এদেশের আইন হলো পুলিশ না আসা পর্যন্ত দূর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করা যাবে না। কাছের পার্কিং-এ গাড়ী পার্ক করে বসে থাকতে হবে। তারা এসে তদন্ত করে কে দোষী সেটা নির্ধারন করবে। এরপর দু'জন একসাথে মরুরে (পুলিশ ষ্টেশন) গিয়ে পেপার আনতে হবে। সেই পেপার দোষী গাড়ীর ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে নিয়ে গেলে তারা তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন একটি গ্যারেজের ঠিকানা দেবে যেখানে তাদের পেপার দিলে গাড়ী ঠিক করে দেবে। পেপার ছাড়া কোন গ্যারেজে গিয়ে পয়সা দিলেও কেউ গাড়ীর কাজ করবে না - পুলিশের নিষেধ।

এক ঘণ্টা পার করেও যখন পুলিশের দেখা নেই, তখন আবার ফোন করি ট্রিপল নাইনে - পুলিশ নাকি রাস্তায়। এরপর দুইঘণ্টা পার করেও যখন পুলিশের দেখা নেই, তখন দু'জনে ঠিক করি মরুরে চলে যাব সরাসরি। পুলিশের কাছে একজন দোষ স্বীকার করলেই ঝামেলা শেষ। মরুরে এসে ঘটনা বলতেই এক অফিসার বাইরে এসে দুই গাড়ী চেক করে পেপার দিয়ে দেয়। পরদিন এই পেপার নিয়ে ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে গেলে তারা গাড়ীর ছবি তুলে নিয়ে সানাইয়ায় (ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এরিয়া) একটা গ্যারেজের ঠিকানা আর পেপার দিয়ে দেয়। পরদিন সকাল-সকাল গ্যারেজে গিয়ে পেপাল দেখালে মালবারী মালিক ঘণ্টা-দেড়েকের মধ্যে নতুন একটা বাম্পার লাগিয়ে ছেড়ে দেয়। পুরো ব্যাপারটার জন্য একটা পয়সাও খরচ করতে হয় নি। শুধু মরুরে রেভেনিউ ষ্ট্যাম্পের জন্য চব্বিশ রিয়েল দিতে হয়েছে, যদিও তারা ষ্ট্যাম্প লাগিয়েছে বিশ রিয়েলের। রেভেনিউ ষ্ট্যাম্পের জন্য পয়সা বেশী নেয়ার সিস্টেমটা বোধ হয় সব দেশে একই রকম।

সপ্তাহ-দুয়েক না যেতে আবারো ঠোক্কর। এবারো গোল-চক্করের জ্যামের মধ্যে। ভোর পাঁচটায় বেরিয়ে বিকেল পাঁচটায় বিধ্বস্ত অবস্থায় ফিরছি সাইট থেকে, তাও ঘরে না - অফিসে, আরো কিছু কাজ বাকী। জ্যামের মধ্যে একটু একটু করে আগাচ্ছি। পেছন থেকে ধুরুম করে ধাক্কা। এবারের ড্রাইভার এক আরবের ছেলে। একেবারেই অল্পবয়স। বোধ হয় লাইসেন্সই নেই। অভ্যাসমতো ফোনে বকবক করছে আর গাড়ী চালাচ্ছে। নেমে এসে বলে, কিছু হয়নি, চলে যাও। বলি, আগে পুলিশ আসুক, তারাপরতো যাওয়া-যাওই। বলে, পুলিশে ফোন করলে খামাখা সময় নষ্ট, তারচেয়ে একঘন্টা পর মরুরে চলে আস, আমি আসছি। গাড়ীর নাম্বার আর তার ফোন নাম্বার নিয়ে মরুরে চলে আসি। কিন্তু তার আসার খবর নেই। ফোন করি, তাও রিসিভ করে না। কি যন্ত্রনা!

পুলিশকে গিয়ে ঘটনা খুলে বলে গাড়ীর নাম্বার আর তার ফোন নাম্বার দেই। গাড়ীর বর্ণনা ঠিক আছে চেক করে বলে, তার গাড়ীর ইন্সুরেন্সের মেয়াদ নেই। তিনটা গ্যারেজ থেকে কোটেশন নিয়ে আরেকদিন আস। কথামতো কোটেশন নিয়ে গেলে পুলিশ নিজে তাকে ফোন করে। আধা ঘণ্টার মধ্যে তার বাবা এসে সর্বনিম্ন কোটেশন অনুযায়ী টাকা দিয়ে যায় ক্যাশ। সাইন করে টাকা নিয়ে চলে আসি। পরদিন সকালে একই গ্যারেজে গিয়ে আবার লাগাই একটা নতুন বাম্পার। এবারেরটার মেয়াদ কয়দিন আল্লাহই জানে।
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×