আমি ব্যাচেলর মানুষ। জীবন যাপন পদ্ধতি নিয়ে লাখো নালিশ থাকলেও কিছু করার থাকে না।
বাসায় পানি থাকে না। সময়মত বুয়া আসে না। কারেন্ট বিল বেশি হয়। সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট কিনে রাখলে অটোমেটিক শেষ হয়ে যায়। নানামুখী ঝামেলায় জীবন চলছে কোনরকম। ব্যাচেলর যখন হয়েছি এগুলো মেনে নিয়েই চলতে হবে। নালিশ করেও কোন লাভ হবে না।
ব্যাচেলর বাসায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় খাবারদাবার নিয়ে। সবাই ভালোটা খেতে চায়। যে সবার শেষে খাবে সে কপাল পোড়া। সবাই ভালোটা খেয়ে তার জন্য পাতিলের তলায় পাতলা ঝোলের মহাসাগরে ডুবন্ত ভাঙ্গা একটুকরা মাছ বা মাংস রাখে। নরম ভাতগুলো আগেই শেষ হয়ে যায়। তার জন্য যে ভাত অবশিষ্ট থাকে তা কুড়কুড়ে মুড়মুড়ে চানাচুরের মত হয়।
মা ফোন করে প্রতিদিন জানতে চায় বাসায় কি রান্না হয়েছে। যা রান্না হয় আমি তাতে একটু বেশি তেল মশলা দিয়ে ভুনা ভুনা করে মাকে বলি। হয়তো মুরগীর মাংস রান্না হয়েছে। তেল ভাসা ভাসা, লালচে, আধাসিদ্ধ। তিনঘোড়া পাম্প বসিয়ে ঝোল সেঁচে খেতে হবে। আমি মাকে বলি মুরগীর মাংস ভুনা হয়েছে। বললে মা খুশি হন। ভাবেন, ছেলের খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোন সমস্যা হচ্ছে না।
ভুনা মাংস আমার খুব প্রিয়। গরুর মাংস হলে কোন কথা নেই। গলা অবধি না হওয়া পর্যন্ত খাই। পরে হজম করতে দুই তিন দিন যা লাগবে লাগুক। আপাতত খেয়ে কড়াই খালি করা আমার কাজ।
ঈদে বাড়ি থেকে আসার সময় মা গরুর মাংস ভুনা করে দিয়েছেন। মিস্ট্রিয়াস বক্স ভর্তি করে জোর করে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আসার সময় বারবার ফোন করে আমার চেয়ে মাংসের খবর নিয়েছেন বেশি। বারবার হুকুম জারি করেছেন, বাসায় গিয়েই গরম করবি। যতদিন শেষ না হয় অন্য কোন বাজার করবি না।
বুয়ার বদৌলতে সে মাংস দুই দিনও টিকেনি। প্রথম প্রথম আমি সে ভুনা মাংস গরম করে করে তিনবেলা খেয়েছি। ঈদের ছুটি কাটিয়ে যেদিন প্রথম বুয়া এসেছে সেদিনই ওই ভুনা মাংস এক চুটকিতে শেষ। কোন বাজার করা নেই দেখে বুয়া সেই ভুনা গরুর মাংস দ্বিতীয়বারের মত রান্না করে রেখে গেছে। এক হাঁটু ঝোল উইথ আধাপোয়া লবন এন্ড পারমানবিক ঝাল।
বাড়িতে মায়ের হাতে রান্না করা গরুর মাংসের ওভার ডোজে যে কোষ্ঠকাঠিন্যের কালো ছায়া কমোডে পড়েছে সেই ছায়া বুয়ার এক ঝলকানীতে বায়বীয় ত্যাগে বিদায় নিয়েছে। এমনও হয়েছে ঘন্টায় আটচল্লিশ কিলোমিটার বেগে ছুট দিয়ে হাম্মামে গিয়েছি।
শান্তিদান করে ফিরে আসতেই পেটে আবার ঘুটঘুট শব্দে অশান্তি জমেছে।
ওয়াশরুমে আবার গগনবিদারী হুংকারে পেট ক্লিয়ার হয়েছে....
পারমানবিক ঝালের এই চলমান চেইন রিয়েকশান থামিয়েছে মেট্রিল আর এস এম সি'র ওরস্যালাইন!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৪