ইচ্ছা ছিল পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে দুচোখ ভরে আকাশের নীলাভ ভাষা কে বোঝার চেষ্টা করবো, মেঘের সঙ্গে গা এলিয়ে বসে থাকবো, রংধনুর রঙে জীবনের সাদাকালো পাতাগুলো রঙিন করে নিবো। একটানা এই গদবাধা জীবনে হঠাৎ প্রিয়জনদের সাথে সেই সময় টা চলে এলো।
সবেই নীলাচলের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছাড়লো, প্রথমে ভয় ভয় করছিলো।আকাবাকা পাহাড়ি পথ।
যতই উপড়ে উঠছি আর সীমাহীনতা ছাড়াচ্ছি, দেখছি দুপাশের পাহাড়ি ঘরগুলু, আর অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকা মানুষগুলু। অনেকটা উপড়ে চলে আসার পর দেখতে পেলাম আকাশের না দেখা সৌন্দর্য। আবিষ্কার করলাম এক নতুন দৃষ্টি, এক অদ্ভুত ভালো লাগা।
শেষমেষ পৌছলাম নীলাচল। এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে জায়গা টা কে, যে মুগ্ধ হয়েগেলাম। কিছুক্ষন পরেই বৃষ্টি শুরু হলো, শুনেছিলাম বৃষ্টির পর পাহাড় দেখতে অন্যরকম। আসলেই নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। হঠাত করেই দেখলাম চারপাশটা কেমন যেন বদলে গেলো। চশমাটা ভালো করে পরে নিলাম। ওমা!একি দেখছি আমি??!!দুই দুইটা রংধনূ একসাথে। কি যে ভালোলাগা।। ভাষা হারিয়ে ফেললাম। মেঘমালা যাচ্ছে অনেক নিচে দিয়ে। ইচ্ছা করছিলো যাই এক দৌড়ে ওই মেঘমালাতে একটা ঝাপ দেই।
তারপর দিন নীলগিরি।। এই জায়গাটা তুলে রেখেছিলাম সযতনে, মনের কোনে, স্বপ্নছিলো কেউ পাশে থাকবে, হাতে হাত থাকবে, শুধু আমার চোখে নয় আমি তার চোখে প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গ্য দেখবো।
আমাদের জীপ গাড়িটা তে দাঁড়ানো যেতো। আগের দিন নিলাচলে যেতে দাড়ানোর সাহস পাই নি। অল্প একটু দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়েছিলাম, মামা যদি বকা দেয়। কিন্তু আজ আর না। সাহস বেড়ে গেছে না!!
তাই কাজিনরা মিলে গেলাম দাঁড়িয়ে, আহা!!! কি মজা!! আকাবাকা সরু রাস্তা, ভয়ঙ্কর গাড়ির গতি। আরে কিসের ভয়,শুরু করলাম সবাই মিলে গান...... চলো না ঘুড়ে আসি আজানাতে, যেখানে পাহাড় এসে থমকে গেছে (কিঞ্চিত পরিবর্তিত নিজেদের যাত্রার স্বার্থে)
রাস্তা তো যেনো আর ফুরায় না। উপড় থেকে নিচের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলাম বিশার সবুজের বিস্তরণ। কোথায় রোদ আর কোথাউ মেঘের খেলা। বিস্মিত হচ্ছি সবাই মিলে প্রতিক্ষনে।আড়াই ঘন্টার মত লাগলো পৌছাতে। ওফ!! চিল্লাচিল্লিতে মোটামোটি টায়ার্ড।
নীলগিরির চারিপাশের আবহাওয়াটাখুব মিষ্টি। রোদ তখন ঝলমল করছে, সূর্য খুব রেগে আছে মনে হলো। একটা দিক বেছে একদম কিনারে গিয়ে দাড়ালাম, মনে পড়লো আগের দিনের প্রেমের কথা। মুভিতে দেখেছি প্রেমিক-প্রেমিকারা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দুজন দুজনের নাম ধরে ডাকে, যার শব্দ বেশি দূরপর্যন্ত প্রতিধ্বনি হবে তার ভালোবাসা নাকি তত গভীর হবে। তাই আমিও ওমন একটা পার্ট নিতে গিয়েও পারলাম না, খালাতো ভাইটা এসে পড়লো।।
অন্য পাশে যেতেই খেয়াল করলাম পাশেই রয়েছে বিশাল বড় আরেকটা পাহাড়। আর মজার বিষয় এই মূহূর্তটা তে আমাদের পাহাড়ের উপড় মেঘ জড় হয়েছে, কিন্তু কাছের ওই পাহাড়টা তে রোদ পড়েছে, দেখতে কি যে সুন্দর লাগছে, মনে হচ্ছে এই মাত্র কেউ পাহাড়টার গায়ে সোনালী রঙ ঢেলে দিয়েছে।
বাতাস বইতে শুরু করেছে,মিষ্টি বাতাস। যত পারছি এই দুচোখের ফ্রেমে নীলগিরির অব্যক্ত সৌন্দর্য্য ভরে নেয়ার চেষ্টা করছি। জানি না আবার কবে আসবো, আদৌ আসবো কিনা, অথবা আপন মনে এই সৌন্দর্যে আর কখনো হারাতে পারবো কিনা। চলে যেতে মন চাচ্ছিলো না। ইচ্ছে করছিলো যদি একরাতের চাঁদ দেখতে পারতাম পাহাড়ের কোলে বসে, যদি মেঘগুলু কে ছুয়ে যেতে পারতাম নিমিষেই, যদিসত্যি এমন হতো জোছনার আলো ভেদ করে রুপকথার রাজকুমার কে দেখা যেত ওই আকাশে পঙ্কখীরাজে করে আসছে, তবে সত্যি আমি বসে থাকতাম অনন্তকাল সেই এক ঝলকের আশায়......