প্রায়শই কাকরাইলের জ্যামটা এড়াতে উইলস লিটল ফ্লাওয়ারস স্কুলের গলিটা ব্যাবহার করি।আগে ওই গলিতে কোনদিন বেলি ফুলের সুবাসিত সুগন্ধিটা ওইভাবে পাই নাই তবে আজ সন্ধ্যার সময় শৈশব-কৈশরের অদ্ভুত ভাললাগার সুগন্ধিটায় আমি ঠিক যেন ১৫-২০ বছর আগের সেই দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলাম।আচ্ছা বেলি ফুল তার সুগন্ধিটা শুধু কি সন্ধ্যার সময় ছড়ায়?এই ব্যাপারে অবশ্য আমার কোন ধারণা নেই।
আমার আম্মার বেলি ফুল খুব পছন্দের ছিল।
আব্বা-আম্মার একটা লিজেন্ডারি ছবি ছিল। অনেকটা খ্রিষ্টানদের বিয়েতে যেমন মেয়েরা সাদা শুভ্র পোষাক পড়ে ঠিক সেরকম একটা অসম্ভব সুন্দর পোষাকে আম্মার চুলের খোঁপায় ওই বেলি ফুলের মালাটা দেখেই আম্মার বেলি ফুল প্রীতিটা বোঝা যেত।
সেটা আরো বেশি বোঝা যেত আব্বা মারা যাওয়ার পর। ঘুম থেকে উঠে যখন ওই ছবির ফ্রেমেই প্রতিদিন সকাল বেলা বেলি ফুলের মালা ঝুলানো থাকাটা দেখা যেত।আব্বার প্রতি আম্মার যে অপরিসীম ভালবাসাটা ছিল সেটা তখন ওইভাবে বোঝা সম্ভবপর না হলেও এখন বুঝি।
আমার আম্মার প্রিয় একটা মুভি ছিল। নাম "মাদার ইন্ডিয়া"।
মাদার ইন্ডিয়া মুভিতে নার্গিস এর করা ক্যারেক্টার টিতে আম্মা মনে হয় অনেকটা নিজেকেই খুঁজে ফিরতেন।নার্গিস অসহায় দুই হস্তবিহীন স্বামীর মুখে সিগারেট লাগিয়ে ম্যাচের কাঠির আগুনের মধ্যে ভালবাসাটাকে খুঁজে ফিরতেন।
প্রায় ৭ সদস্যের দুমড়ানো মোচড়ানো সংসারটা একা হাতে চালানো একটা ভিনদেশী বাংলা কথা বলতে না পারা মহিলাটির মধ্যে একটিবারের জন্যেও শোনা যায় নাই ;
তোদের বাপ একটা
অকর্মন্য!
দায়িত্বহীন!
কুড়ে!
অকেজো!
টিলে!
আলসে!
লোক ছিল।
উপরোক্ত ৬ টি শব্দের প্রতিটি শব্দের সমার্থক এক হলেও প্রত্যেকটি শব্দের যে কত যন্ত্রণা আমার আম্মা তার জীবনে পেয়েছেন সেখানে আব্বার জন্যে আম্মা শুধুমাত্র ১ টি শব্দেই সবকিছুর সমাপ্তি ঘঠাতে পারতেন!
"ঘৃনা"!
না!
আম্মা সেটা করেন নি।আব্বা মারা যাওয়ার পরেও প্রতিদিন বেলি ফুলের মালা ওই ছবিটির ফ্রেমে ঝুলিয়ে দিয়ে আব্বার প্রতি আমৃত্যু ভালাবাসাটা দিয়ে গেছেন।
আব্বার রেখে যাওয়া বংশধর দের পরম মমতায় মানুষের মত মানুষ বানিয়ে বেলি ফুলের মত সুগন্ধি ছড়িয়ে গেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:০৩