somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের দৃশ্যপটঃ অপরিবর্তিত ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবকাঠামো

২৪ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অর্থনীতি একটি দেশের মূল ভিত্তি । যে দেশের অর্থনীতির ভিত্তি যতটা মজবুত সে দেশ ততটা উন্নত । একটি দেশের মূল কাঠামো উন্নত অর্থনীতি ব্যাতিত চিন্তা করা যায় না । আর তাই প্রতিটি দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে সুষ্ঠু অর্থনীতির মাধ্যমে । অর্থনৈতিক অবস্থার বিচারে বিভিন্ন দেশকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
১. উন্নত দেশ
২. অনুন্নত দেশ
৩. উন্নয়নশীল দেশ
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ । এদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে কৃষির উপর । চাল, ডাল, গম, আলু, ভূট্টা ইত্যাদি কৃষিজ ফসল উৎপাদিত হয় বাংলাদেশের মাটিতে । তবে বর্তমানে শিল্প ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ কিছুটা উন্নয়নের পথে যাত্রা করেছে । বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশে । এসব বিচারেই বোধয় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ । বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ আর অতীতে ছিল অনুন্নত দেশ । অতীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল শুধুমাত্র কৃষি নির্ভর । তখন দেশে উৎপাদিত হত দেশীয় ফসল । যেগুলোর বেশিরভাগ নাম আমরা বর্তমান প্রজন্ম জানি-ই না । আমাদের দেশে উৎপাদিত হত সোনালী আঁশ পাট । পাট এবং পাটজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে আয় হত হাজার হাজার কোটি টাকা । অতীতের কৃষির কথা চিন্তা করলে বর্তমানে কৃষির অবস্থা আরো উন্নত হওয়া উচিত বলে মনে হয় । বর্তমানে উৎপাদিত উন্নত জাতের ফসলের পাশাপাশি আমাদের দেশী ফসলের অব্যাহত উৎপাদন বজায় থাকলে দেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি আরো উন্নত থাকত । কিন্তু বিদেশী হাইব্রিড বীজের ভীড়ে আমাদের দেশী ফসল (বীজ) বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে । ব্যাবহৃত হচ্ছে সার, কিটনাশক । যার ফলে নদী-নালায় উৎপাদিত হচ্ছে না পর্যাপ্ত মাছ । কমে যাচ্ছে উর্বরতা । হারিয়ে যাচ্ছে নদীর নাব্যতা । সবকিছু মিলিয়ে আমাদের দেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতির উন্নয়ন মৃতপ্রায় । বাইরের দেশ থেকে বিপুল পরিমান ভর্তুকী দিয়ে খাদ্য আমদানী করতে হচ্ছে ।
প্রায় প্রতিবছর ঘাটতি বাজেট নিয়ে ধুকে ধুকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ । আর সকল সমস্যার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ । বেড়েই চলেছে বেকারত্ব । পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন নেই । দেশের সামগ্রিক সমস্যা নিয়ে বড় বড় গোল টেবিল বৈঠক হয় কিন্তু প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়ন হয় না তেমন কিছুরই । রাস্তা, ব্রিজ, কালর্ভাট , বিদ্যালয় অবকাঠামোর সংস্করণ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে বছরের পর বছর । এসব গোল টেবিল বৈঠকে যে অর্থসমূহ ব্যয় হয় সে অর্থ হিসেব করলে নেহায়েত কম হবে না । চাল, আলু , তেলসহ বিভিন্ন পণ্য গুদামজাত করে ব্যবসায়ীরা বাজারে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ কর ফাঁকি দিচ্ছে, এসব দিকে নজর না দিলে অভাবের কালো মেঘ কাটানো যাবে না ।
স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পার হয়েও এদেশের দৃশ্যপট বদলায়নি । রাস্তায় জীর্ণ মানুষের বাড়ানো ভিক্ষের হাত তো এদেশের-ই প্রতিকী চিত্র । দেশের মানুষ ভাত পায় না , রাস্তায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভিক্ষুক , ছিনতাই-ডাকাতি । দেশের মানুষ চিকিৎসা পায় না । হাসপাতালের বারান্দায় কারো কারো জায়গা হয় কি হয় না । অথচ কর্তাব্যক্তিদের অসুস্থতায় প্রাথমিকভাবে বড় কোন হাসপাতাল কিংবা বিদেশ বিভূই...

প্রধানমন্ত্রী কিংবা অন্য কোন বিশেষ ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যাবেন ।এক্ষেত্রেও সাধারণ জনগণকে হতে বলির শিকার হতে । ওই রাস্তা দিয়ে শ্রদ্ধেয়রা গমন না করা অবধি কারো চলাচলের অনুমতি নেই । এর জন্য হয়ত কতজনেরই অফিসে দেরিতে পৌঁছাতে হচ্ছে কিংবা অন্য কোন সমস্যায় অবতির্ণ হতে হচ্ছে । কে রাখে এসব খোঁজ ! যখন যে দল বিরোধী দলে থাকে তারাই তখন হরতাল ডেকে অর্থনীতির অবকাঠামোকে করছে ভয়াবহ । কেউ জনগণের কথা ভাবে না , সবাই ক্ষমতালোভী ।

অবান্তর খরচ করে যে টাকা নষ্ট করা হয় সে টাকা গঠনমূলক কাজে ব্যয় করতে সমস্যাটা কোথায় ? বিশেষ কোন তোরণ , সদর দরজা বানাতে লাখ টাকা ব্যয় করা আমাদের মানায় না । কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তায় রাস্তায় ভাষ্কর্য , স্বাধীনতার স্মৃতি স্তম্ভ বানালে কি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে ? গরীব গরীব-ই থাকবে ।সারা দেশে অসংখ্য ভাঙা...আধমরা রাস্তা-ঘাট । ধুকে ধুকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ । প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-আহততের করুন ছবি । এভাবে আর কতদিন চলবে কেউ জানে না !

ইচ্ছে করলেই একটুখানি স্বদিচ্ছায় এদেশের সুফল সম্ভব । বিশ্বযুদ্ধের পর যদি জাপান মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে , বাংলাদেশ পারবে না কেন ? যারাই দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকে তারাই অভিনব পদ্ধতি তে লুটপাট করে । আর সর্বদিক থেকে ভুক্তভোগী হয় হতভাগা মানুষগুলো ।

গ্যাস , বিদ্যুৎ , পানির অভাবতো নিত্যনৈমিত্তক ব্যপার । কিন্তু যারা দেশের হর্তা-কর্তা তারা এ সকল সমস্যার আঁচ কখনো অনুভব করে না । কারণ তাদের আাবাস কিংবা কর্মস্থলে কখনোই বিদ্যুতের ঘাটতি হয় না । একবার এক সরকারী অফিসে গিয়ে দেখলাম কর্মকর্তা অফিসে তখনও এসে পৌঁছাননি কিন্তু তার কক্ষের প্রতিটি বৈদ্যুতিক পাখা আর লাইট নির্বিঘ্নে চলছে/জ্বলছে । অথচ বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় দেখেছি আমার এলাকায় লোডশেডিং । তখন মনে হলো, এই আমরাই পাখার হাওয়া আর লাইটের আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে ওই সব কর্তাব্যক্তিদের জন্য আলো-হাওয়ার যোগান দিচ্ছি । এই সমস্যা নিরসনের জন্য সরিষা থেকে ভুত তাড়াতে হবে অর্থাৎ সরকারী অফিসসমূহে ব্যবহৃত বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে হবে ।

আমাদের অর্থনীতি কে স্বয়ং সম্পূর্ণ করতে হলে বাস্তব পদক্ষেপ জরুরি । সমু্দ্রে ঝড়ের সংকেত দিলেই শুধু হবে না ,মানুষ কে নিরাপদে সরিয়ে নিতে হবে । বাংলাদেশ গড়ার জন্য গোল টেবিল বৈঠক আমাদের কাম্য নয় । আমরা হরতাল চাই না । আমরা চাই চলমান উন্নয়নশীল অর্থনীতি, চাই গুদামে যেন চাল, আলু পঁচে না যায় । নদীতে সময় মত পানি এবং মাছ আমাদের কাম্য । এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলোর প্রতি যদি রাষ্ট্র পরিচালকেরা নজর দেন তাহলে বছরে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি গুনতে হবে না খাদ্য, জ্বালানী এবং অন্যান্য খাতে । আর এভাবেই হয়ত আমাদের দেশ নিজস্ব সম্পত্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে উন্নত হতে পারবে । বহুজাতিক কোম্পানীগুলোও বিনিয়োগের নাম করে আমাদের কে স্বস্তা শ্রমিকে রূপান্তর করতে পারবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৫৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×