ঈদ। শব্দটায় অসম্ভব একটা আনন্দ আনন্দ বিষয় আছে। ছোটবেলা থেকেই এই দিনটার জন্য সবসময় অপেক্ষায় থাকতাম। নতুন জামা, মজার মজার খানাপিনা, আর ঘোরাঘুরি, সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা সময়। সব সময় বাবা, মা, বোন , আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঈদগুলো কাটিয়েছি। কিন্তু "দিনগুলো মর সোনার খাঁচায় রইলো না...."।
পড়াশুনার জন্য পাড়ি জমালাম ভিন দেশে, ইতালি । যখন আমি রোমের মাটিতে পা রাখি তখন summer চলছে। গরম কি জিনিস যে এই সময় ইতালিতে আসবে সে টের পাবে। যাই হোক, আমার ভাগ্য এতই ভালো রোমে পৌছাবার সপ্তাহ খানেকের মাঝেই শুরু হয় রোজা!! Summer এ ইতালিতে রোজা রাখা এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। রাত ১০ টায় থাকত ইফতার। খিদে না লাগলেও গরমে পানি ছাড়া থাকা খুবই কষ্টের ছিল। সারাটাদিন অপেক্ষা করতাম পানি খাবার সময়টার জন্য। পানি যে কি অসাধারণ জিনিস ওই সময় বুঝতে পেরেছি ।
ও মর রমজানের ওই রজার শেষে এলো খুশির ঈদ। এই প্রথম পরিবার পরিজন ফেলে বাইরে ঈদ। কোনো উত্তাপ হীন এক দিন। দেশের বাইরে একটা মজার বিষয় হলো, যদি ঈদের দিন কোনো কর্ম দিবস হয় তাহলে লোকাল বাঙালি বা মুসলমানরা পরের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঈদ উদযাপন করে। দিনটা কর্ম দিবস হওয়ায় নামাজ শেষে সবাই যার যার কাজে চলে যায়। ভালো কথা রোমে প্রচুর বাঙালি থাকে । আমি মজা করে বলি রোমে এক ইতালিয়ান ভাষা না হয় বাংলা ভাষা জানা থাকলে কোনো প্রবলেম নাই। রাস্তা, বাসে, মেট্রো কি অফিস সব জায়গায় একজন হলেও বাঙালি পাওয়া যাবে। যাই হোক আগের সুত্রে ফিরে আসি। বাঙালিরা এলাকা ভিত্তিক বাস করায় নামাজও এলাকা ভিত্তিক হয়। আমার মনে হয়েছে ঈদের নামাজও অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতির বাইরে যেতে পারেনি। আমি নতুন আসায় তেমন কোনো বাঙালির সাথে পরিচয় হয়ে উঠেনি। তাই সারাদিন বাসায় থাকা আর ফোনে দেশে কথা বলে আমার ঈদ উদযাপন হয়েছে।
এবার বলি এ বছরের কথা। এবার আমার ঈদ আর রোজা উদযাপন হলো গ্রিসে, গ্রিসের সুন্দর একটা দ্বীপ Crete এ । আমার summer এর ছুটি চলছে। সাগর, পরবত এর মিলনে সুন্দর একটা দ্বীপ। জায়গা বদলালেও ঈদ উদযাপনের ভাগ্য বদলায়নি। ঘরে বসে আর ফোনে কথা বলে সেই ঈদ উদযাপন। মাঝে মাঝে মনে হয় কেউ যদি মনে না করিয়ে দিত তবে মনে হয় ঈদের কথা ভুলেই যেতাম। ঈদ বা যে কোনো উদযাপনী হোক না কেন বন্ধু, পরিবার, পরিজন ছাড়া পূর্ণতা পায় না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


