প্রথমে বলে নেয়া ভালো আমি যুদ্ধ কেন্দ্রিক চলচিত্রের ভক্ত কেউ নই। আমার বরং কিছুটা বিরক্তিই লাগে এধরনের চলচ্চিত্র গুলোতে। অনেক ক্ষেত্রেই সুন্দর কোনো কাহিনী খুঁজে পাই না। আমি আবার এও বলছিনা যে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভালো কাহিনীর কোনো মুভি নেই। তাহলে আগুনের পরশমনি, গেরিলা, ওরা এগারজন, হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড এধরেন কিছু অসাধারণ চলচ্চিেত্রর অপমান করা হবে। আসলে ভালো মুভির সংখা কিছুটা কম, অন্তত আমার রুচি অনুযায়ী। বিশেষ করে বিদেশী যুদ্ধ কেন্দ্রিক মুভিগুলো কম দেখা হয় বা কম পছন্দ। যাই হোক কিভাবে কিভাবে যেন এরকম একটা মুভি দেখতে বসে গেলাম। নাম , দা ফ্লাওয়ার অব ওয়ার, যুদ্ধের ফুল।
কাহিনীটা গড়ে উঠেছে ১৯৩৭ সালের চীন জাপান যুদ্ধের পটভূমিতে। চিনের নানজিং শহর জাপানের দখলে চলে গেছে। জাপানি সৈন্যদের নিষ্ঠুরতা থেকে বাঁচতে একদল কলেজ পড়ুয়া মেয়ে আর একদল বারবনিতা আশ্রয় নেয় স্থানীয় এক চার্চে । তাদের সঙ্গে এসে উঠে ভবঘুরে এক স্বার্থপর যুবক যে কিনা কারো আগে পিছে নেই । আর আছে চার্চের দায়িত্বরত স্বল্প বয়সী কিশোর যার বাবা ছিল চার্চের পাদ্রী । বিভিন্ন বিপরীত ধর্মী মানুষের মিলন এই চলচিত্রের মূল উপজীব্য। মুভিতে দেখা যায় সামাজিক অবস্থানের বৈষম্য কিভাবে কলেজ পড়ুয়া মেয়ে আর বারবনিতাদের মুখোমুখি করিয়ে দেয়। আবার ভয়, বিপদ, আতংক তাদেরকে এক করে ফেলে। মুভিতে দেখা যায় স্বার্থপর ভবঘুরে কি নিস্বার্থভাবে নিজেকে অন্যের বিপদে জড়িয়ে ফেলে আবার বেঁচে থাকার অমোঘ সুযোগ পেয়েও কি অসীম সাহসিকতা আর আত্মবিসর্জনের মাধ্যমে ওই বারবনিতারা ওই কলেজ পড়ুয়া মেয়েদেরকে জাপানি সৈন্যদের নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা করে, তা এক কথায় অসাধারণ। বার বার এক বারবনিতার একটা কথা আমার খুব কানে বাজচ্ছে, "লোককথা , কাহিনী, গল্প, গানে আমাদেরকে সবসময় নিচ দেখানো হয়, আজকে সে সময় এসেছে যে সেই লোকগাথা , কাহিনী আবার নতুন করে লেখার । "
আমি যতক্ষণ এই মুভিটা দেখছিলাম বার বার আমার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পরছিল। কত মানুষের আত্মতাগের আমাদের এই স্বাধীনতা। মুভিটা দেখার সময় বার বার মনে হচ্ছিল কেন শুধু অস্ত্র নিয়ে প্রতিবাদ জানালেই মুক্তিযোদ্ধা হয় না। আমার কাছে ওই বারবনিতা গুলোও অসাধারণ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা ওই ভবঘুরে বা চার্চের সেই স্বল্প বয়সী ছেলেটাও। হয়ত আমাদের এরকম অনেক অনেক মুক্তিযুদ্ধের গল্প অজানা রয়ে গেছে, হয়ত অনেক মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আমাদের চেনা হয়ে উঠেনি এখনো। আমি অপেক্ষায় রইলাম সেইসব গল্পগুলোর জন্য, সেইসব মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়ের জন্য।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


