লন্ডন শহর তখনও জেগে ওঠেনি।বেকার রোডের পাশ দিয়ে কিছু ভোরজাগা মানুষ মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছে। হঠাৎ তাদের নজরে পড়ল একটা খ্যাপা ধরণের লোক শার্লক হোমসের উঁচু ষ্ট্যচুটি ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। লোকগুলি হেঁই হেঁই করে খ্যাপা লোকটার দিকে ছুটে গেল।###করছ কি করছ কি? তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে ?###লোকটি তার হাতের হাতুড়ি থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে একবার পথচারীদের দিকে তাকাল তারপর আবার ষ্ট্যাচু ভাঙ্গার কাজে মনযোগ দিল। পথচারীরা এবার কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে খ্যাপা লোকটিকে ধরে ফেলল। কিন্তু লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের হাত শীথিল হয়ে গেল।আশ্চর্য রকম চেনা চেনা লাগছে বড় গোঁপ ওয়ালা মুখটাকে।###কে তুমি ? খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে ?###লোকটি নির্বিকার ভাবে বলল-আমাকে তোমরা দেখনি তবে আমার ছবি দেখে থাকবে। আমি আর্থার কোনান ###ডায়েল।###লোকগুলির মুখ বিশ্ময়ে হাঁ হয়ে গেল। স্যার আর্থার কোনান ডায়েল ! কিন্তু আপনিতো অনেক আগেই গত হয়েছেন স্যার।###হুঁ।১৯৩০ সালের জুলাই মাসের এক বিষন্ন দুপুরে। কবরে বেশ শান্তিতেই ঘুমিয়ে ছিলাম।স্যার কোনান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন। কিন্তু আর থাকতে পারলামনা।ঐ ষ্ট্যাচুটা না ভাঙ্গা পর্যন্ত আমার আর ঘুম আসবেনা মনে হচ্ছে।###কিন্তু কেন ? লোকগুলি এবার সমস্বরে আর্তনাদ করে উঠল। লন্ডনের মানুষ আপনার অমর সৃষ্টিকে স্মরণীয় করে রাখতে এই ষ্ট্যাচু বানিয়েছে তাকে কেন আপনি ভেঙ্গে ফেলতে চাইছেন ?###অপরাধ বোধ থেকে মুক্তি পেতে। স্যার আর্থারের গলায় অতল হতাশা। আমার মনে হচ্ছে এক মাথা মোটা গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টি করে গোটা পৃথিবীর মানুষকে এতদিন আমি ধোঁকা দিয়ে এসেছি।###ধোঁকা দিয়ে এসেছেন ?###নয়তো কী ? তোমরাকি জান একটা অপরাধের জট খুলতে গিয়ে এই গর্দভটা কত ছটাক ঘিলু কত কিলো চর্বি আর কত লিটার ঘাম ব্যয় করতো ? এক সময় মনে হতো এটা খুব বুদ্ধি চর্চার কাজ হচ্ছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নিরেট অপদার্থের মতো শার্লককে দিয়ে আমি কেবল ভুতের বেগারীই করিয়েছি।###লোকগুলি স্যার আর্থারের কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারেনা। তারা কৌতুহলে একে অপরের দিকে তাকাতে থাকে। স্যার আর্থারই এবার তাদের কৌতুহল থেকে মুক্তি দেন।###শোন, এই গ্রহেই কিছু মেধাবী গোয়েন্দার আবির্ভাব হয়েছে যারা এমনই প্রতিভাধর যে অপরাধীকে ধরতে এদের কোন চিন্তা ভাবনা বা কোনো রকম পরিশ্রমই করতে হয়না। স্রেফ ইনটিউশন পাওয়ার প্রয়োগ করে এরা অপরাধীকে সনাক্ত করতে পারে তারপর তাকে ধরে জামাই আদরে আপ্যায়ন করে সোফায় বসিয়ে জিগ্যেস করা মাত্রই অপরাধী হাসতে হাসতে অপরাধের বিশদ বর্ণনা দিয়ে ফেলে।কি বিষ্ময়কর ক্ষমতা আর কৌশল। আমিতো একেবারে বিমুগ্ধ। ###বলেন কি স্যার আর্থার কোনান ? লোকগুলির বিষ্ময়ের মাত্রা দ্বিগুণ হয়। কোথাকার গোয়েন্দা এরা, স্যার ?###স্যার আর্থার বিষন্ন গলায় বলেন-বৃটেনের বলতে পারলেই আমি গর্ব বোধ করতাম কিন্তু দুঃখের বিষয় বৃটেন আজও এমন প্রতিভার জন্ম দিতে পারেনি।আর্থার স্বগতস্বরে গুণ গুণ করে বলেন- স্রেফ ভাত খেয়ে লোকগুলি এমন অসাধ্য বিদ্যা কি করে আয়ত্ব করল তাই বোধ হয় এসময়ের বড় গবেষণার বিষয় হয়ে যাবে। বিষ্মিত লোকগুলিকে আর গোলকধাঁধায় না রেখে বড় একটা শ্বাস টেনে স্যার আর্থার বললেন-এরা সবাই বাংলাদেশী গোয়েন্দা।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই শার্লক গাধার মূর্তিটা ভেঙ্গে আগামী কালই প্লেনের টিকিট কেটে বাংলাদেশ চলে যাব তারপর সেই বিরল প্রতিভাধরদের হাতে পায়ে ধরে নাহয় সেদেশের আশ্চর্য টোটকার সদব্যবহার করেও তাদের সেই ইলিম নিয়ে এসে নতুন করে শার্লক হোমস লেখা শুরু করব। সেদিন নাহয় তোমরা আরেকটি মূর্তি বানিয়ে লন্ডনের রাস্তায় বসিয়ে দিও।নতুন যুগের নতুন শার্লক।###কৌতুহলী মানুষের মাঝখান থেকে একজন প্রশ্ন করল-কিন্তু টোটকা না কি একটার কথা যেন বলছিলেন সেটাতো বুঝা গেলনা।###স্যার আর্থার কোনান ডায়েলের বিশাল গুঁপো ঠোঁটে এবার বিস্তৃত হাসির রোদ উঠল।বিশাল হাসি মাখা মুখেই তিনি বললেন-ঘুষ হলো সেদেশের সবচেয়ে কার্যকরী টোটকা।এ টোটকায় বাঘের দুধ মেলে।এর বলে সত্য মিথ্যা হয়ে যায় মিথ্যা হয় সত্য।জ্ঞাণী হয় অজ্ঞাণ আর অজ্ঞান পেয়ে যায় মহাজ্ঞাণীর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। এর আশ্চর্য ঔষদিগুণে যে সেদেশের ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বার হওয়ারও যোগ্যতা রাখেনা সে বসে যায় রাষ্ট্রের মাথায় আর মাথা হওয়ার যোগ্যতা যার আছে তাকে পাঠানো হয় নির্বাসনে।এবার দয়া করে ভাগো তোমরা। আমাকে কাজ করতে দাও। ###কথা শেষ করেই স্যার আর্থার কোনান ডায়েল হাতুড়ি পেটায় মনযোগ দেন। ভোরের নিঃশব্দ বেকার রোডের এই এলাকাটি যেন হাতুড়ির শব্দে আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে ওঠে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯