কিছুটা মনঃকষ্ট নিয়ে লিখছি। মনঃকষ্টের কারণ- নিজের নির্বুদ্ধিতা, সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ, মানুষজনের চিন্তাগুলোর মেরুমুখী প্রবণতা, সমালোচনার ভাষা ইত্যাদি। গত কয়েকদিন আগে ডিসেম্বর মাসে আমি একটি ব্লগ লিখি। লেখার বিষয় ছিল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্টান। আমাদের সময় পত্রিকার একটি রিপোর্ট-এর প্রেক্ষিতে কথাগুলো লিখি। ততদিন পর্যন্ত এ সম্পর্কিত আর কোনো নিউজ আমার চোখে পরেনি। ওই রিপোর্ট পরে আমি কিছুটা ধারণা পাই। মোটামুটি ব্লগগুলোতে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক লেখালেখিও হয়।
আমাদের সময় এর রিপোর্টে অনুষ্টানসূচী নিয়ে কিছু তথ্য জানতে পাই। এটা পড়ে আমার মনে হয়েছিল অনুষ্ঠানে ভারতীয় শিল্পী আর সংস্কৃতি প্রাধান্য পাবে। আর আট-দশজন বাংলাদেশির মত আমিও বিষয়টা ভাল চোখে দেখিনি। আর একটা কথা বলে রাখি অন্যদের চেয়ে আমি একটু বেশিই কনসার্নড ছিলাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে। তাই নিউজটা পরে আমি কিছুটা আবেগী হয়ে পরি। যদি সেরকম পরিকল্পণা হয়ে থাকে তবে সেটা হত দুঃখজনক। একধরনের আশংকা করতে থাকি। আর এই আশংকা থেকে প্রতিবাদের চিন্তাও করতে থাকি।
আমি স্বল্পবুদ্ধির একজন নগন্য মানুষ। ফেসবুক আর ব্লগ ছাড়া আমার প্রতিবাদের কোনো উপায় নাই। আর সাতপাঁচ বিচার-বিবেচনা না করে সামহোয়্যার এ লিখে দিলাম। এ সংক্রান্ত দুটি লেখা ব্লগ ও ফেসবুকে বেশ ছড়িয়ে পরে। আমার উদ্দেশ্য অন্তঃত সফল হয়েছিল। কোনো দল বা রাষ্ট্রকে ছোট করার উদ্দেশ্যে তা ছিলনা। আমি যা লিখেছি তা আমার আশংকা থেকেই। আমার ধারণা ছিল যত বেশি মানুষ এটা জানবে তত বেশি মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। হয়েছেও।
Click This Link
আমরা ভাগ্যবান যে আমার ধারণা সঠিক হয়নি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ভালো হয়েছে। আর বাংলাদেশও রিপ্রেজেন্টেড হয়েছে ভালভাবেই। ভালমত না জেনে এরকম লেখার জন্যে আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
কিন্তু তারপর যা হল তার জন্যে আমি মোটেও প্রস্তুত থাকিনি। আমার বন্ধুমহলে (ফেসবুকেরও) আমার ও আমার মত যারা ব্লগ লিখেছেন তাদের মূন্ডুপাত শুরু হল। ‘তোমরা হ্যান বলছ, ত্যান বলছ, কই কিছুই তো হল না।’ সমালোচনার ভাষাটা ছিল এরকম যেন আমাদের আশংকা সত্যি হলে আমরা জিতে যাই আর মিথ্যা হলে হারি। আমরা হেরেছি (ওদের চিন্তানুসারে) ও অনেক বড় ভুল করেছি। কেউ কেউ কোনও সোর্স ছাড়া লেখার জন্যে দূষেছেন। অনেকে আবার ভারতবিদ্বেষীও বলেছে। অনেকে ব্লগার ও ব্লগগুলোরদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলাবলি করেছে। এমনকি কিছু কিছু ব্যাক্তিগত আক্রমণও সইতে হয়েছে।
অথচ ওরা বুঝল না যে আমরা কোনও ব্লগ বা কারও লেখা থেকে নয়, একটি পত্রিকার রিপোর্ট এর প্রেক্ষিতে কথাগুলো লিখেছি। হোক তা যতই পক্ষপাতদুষ্ট পত্রিকা। জাতীয় একটা দৈনিক তো। এমন তো না যে ব্লগ লিখে আমরা পয়সা জোগাই। যা লিখি সতঃস্ফূর্তভাবেই লিখেছি; কিছুটা দায়বদ্ধতা থেকেই লিখেছি। অন্তঃত পরীক্ষার মূল্যবান বন্ধের সময়গুলোতে নিউজটা পড়ার সাথে সাথে তাৎক্ষণিক ভেবে ব্লগ লিখেছি। অন্তঃত নিজস্ব কোন স্বার্থ বা উদ্দেশ্য থেকে তো নয়ই।
আমার আশংকা সত্যি না হতে পারে, তাই বলে চুপ থাকাটা কি সঠিক হত? আর আমি মনে করি এক্ষেত্রে আমার ওরকম ধারণা করার যথেষ্ট কারণও ছিল। এটা হয়তো সবাই স্বীকার করবেন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আর সাংস্কৃতিগত নানা ক্ষেত্রে আমরা ভারত দ্বারা প্রভাবিত। আর সেই প্রভাবটা এতটা কখনো কখনো এত ব্যাপক যে এরকম আশংকা করার যথেষ্ট কারণও ছিল। ক্রিকেটেও তাদের প্রবল প্রতিপত্তি। ফান্ড, মিডিয়া আর লোকবল সবকিছুতেই তাদের প্রাধাণ্য। অন্তঃত স্টার স্পোর্টস খুললে ‘দে ঘুমাকে’ শোনা যায়; কিন্তু ‘মার ঘুরিয়ে’ কিন্তু শোনা যায় না। এটা আমরা অনেক সময় মেনেও নিই। এটাই আমাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বিভিন্ন কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের প্রভাব বিস্তারের আশংকাটাই আমার মনে জেগেছিল। আর তা আমাদের সময় পড়েই হয়েছিল।
তার চেয়েও বড় কথা বিশ্বকাপ রোজ রোজ আসেনা। একটু বাড়তি সতর্কতা কি মস্ত বড় ভুল ছিল? সীমান্তে মানুষ মারা যাবে এবং একদিন হয়তো বন্ধও হবে; কিন্তু ১৭ তারিখ যদি আমরা ওই সু্যোগ কাজে লাগাতে না পারতাম তাহলে কি আমরা আরেকটি ১৭ তারিখ পেতাম।
পত্রিকার তথ্য হয়তো আংশিক বা পুরোটা ভুল হতে পারে। তাই বলে আমাদেরকে এভাবে তুলোধুনো করতে হবে? ব্লগ আর ব্লগারদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে হবে? অনেকে ভুল করতে পারি; কিন্তু সদিচ্ছাগুলোকে গলা টিপে ধরতে হবে? আমি তুলোধুনোই বলব। অন্তঃত এই লেখাটা আমি বাধ্য হয়েই লিখেছি। ক্ষমাপ্রকাশ বা দুঃখপ্রকাশের আগ পর্যন্ত ওরা হয়তো ক্ষান্ত দিবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:০০