somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাস দুয়েক আগে বিশ্বায়ন নিয়ে লেখা দিয়েছিলাম, সুমন, হিমু বেশ কিছু চমত্কার মন্তব্য রেখেছিলেন। ওই আলোচনার সূত্র ধরে আজকে লিখতে বসেছি। সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা আর সভ্যতার অগ্রগতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, আর্ট আর সিভিলাইজেশন নিয়ে আরেকদিন ভালোভাবে লেখার ইচ্ছা আছে। মিশরীয়, ব্যবিলনীয় সভ্যতা থেকে শুরু করে গ্রীক, রোমান, ভারতীয়, চৈনিক, কিংবা আমেরিকার মায়া, ইনকা সভ্যতার প্রত্যেকেই তাদের সাংস্কৃতিক সাফল্যের চিহ্ন রেখে গেছে। সবার ক্ষেত্রেই টেকনোলজিকাল এবং অর্থনৈতিক প্রগতির সাথে সাথে তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক প্রগতিও হয়েছে। ভালোমতো খেয়াল করলে দেখব আজকের যুগেও ঘুরে ফিরে একই অবস্থা চলছে। আমরা পশ্চিম ইউরোপীয়-মার্কিন পপ গান শুনি, দেশীয় ব্যান্ডগুলো ঘুরে ফিরে ওদের সুর, ভাব ভঙ্গি নকল করে, পোশাকে পড়ি জিন্স, স্কার্ট, এক প্যারা বাংলা লিখতে কয়েক ডজন ইংলিশ শব্দ ব্যবহার করি ইত্যাদি ইত্যাদি এরকম হাজারো উদাহরণ আছে। হয়ত স্বীকার করতে চাইব না, তবে আসলে কিন্তু এখন মার্কিন সভ্যতা চলছে। আর বাইরের পৃথিবী মোটের ওপর ভোক্তার ভুমিকা নিচ্ছে।

মার্কিন সংস্কৃতির এই ব্যপকতা আসলে বিশ্বায়নের ফসল। দুই হাজার বছর আগে প্রযুক্তি আর যোগাযোগ ব্যবস্থা এত ভালো ছিল না, এ কারনে গ্রীক-রোমান সংস্কৃতি বেশী দুরে ছড়ায়নি, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আজকে ব্রিটনী স্পিয়ার্স নতুন গান বের করলে কালকেই এমটিভিতে বাকী দুনিয়ার সবাই দেখতে পাব, বহু হলিউডি মুভি এখন সারা পৃথিবীতে একসাথে মুক্তি দেয়া হয়। আসলে সংস্কৃতি একটা পন্য, ঠিক যেমন গার্মেন্টস এর কাপড়, কম্পিউটার চিপ বা ব্রাজিলের চিনি। যার দাম কম, মানে ভালো হবে ভোক্তা সেটাই ভোগ করবে। শাকিরার মিউজিক ভিডিও যে কোন দেশী তিশমার ভিডিওর চেয়ে অনেক প্রফেশনালী বানানো, দেখেও বেশী তৃপ্তি আসে, সুতরাং না দেখে উপায় নেই। ঢালিউডি-বলিউডি সিনেমা হলিউডের কাছে মানের দিক থেকে পাত্তা পাওয়া কঠিন, বিশেষ করে এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যাল্যু চিন্তা করলে। আমরা বেশীরভাগই সচেতনভাবে এই সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নে অংশগ্রহন করছি এবং না করার কোন কারণও নেই।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এই বিশ্বায়ন ভালো না খারাপ। সমস্যা হচ্ছে ভালো-খারাপ অনেক ক্ষেত্রেই আপেক্ষিক, কিসের ওপর ভিত্তি করে মুল্যায়ন করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে। সভ্যতার প্রগতি যদি মাপকাঠি হয় তাহলে এমন সাংস্কৃতিক পরিবর্তন যেখানে যার কোয়ালিটি ভাল সে বেশী সুবিধা পাচ্ছে আর নিম্নমানেরগুলো প্রতিযোগীতায় টিকতে না পারে বাদ পড়ে যাচ্ছে এমন পরিবর্তন অবশ্যই ভালো। আসলে এরকম বহুযুগ ধরেই হয়েছে, সংস্কৃতি আগাগোড়া পরিবর্তনশীলই ছিল। পুরোনো সংস্কার সরে দাড়িয়েছে নতুনকে জায়গা দেয়ার জন্য। এমনকি এক হাজার বছর আগে আমাদের বাংলা ভাষাও ছিল না, চর্যাপদের ভাষার সাথে এখনকার ভাষা একটু তুলনা করলেই বোঝা যাবে কতটা পরিবর্তন হয়েছে। আসলে এখন যে বিশ্বায়ন হচ্ছে তাকে আটকানোর কোন রাস্তাও নেই। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের একটা চমত্কার পরিণতি হচ্ছে ক্রমশ আমরা সবাই একটা অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চলে আসছি। আজকে বাংলাদেশের একজন কিশোর, আর একজন মার্কিন কিশোর একই গান শোনে, একই সিনেমা দেখে, ঘুরে ফিরে অনেকটা কাছাকাছি চিন্তাভাবনা করে, অন্য যে কেনো দেশের কিশোর কিশোরীরাও এক দশক আগের চেয়ে অনেক কাছাকাছি, এক শতক আগের চেয়ে তো অবশ্যই। মানুষে মানুষে পার্থক্য ঘুচিয়ে একিভূত বিশ্ব যা রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতারা পারেন নি (অথবা ঠিক করে বললে উল্টোটাই করেছেন) প্রযুক্তির কারনে অবশেষে তা সম্ভব হচ্ছে। সুতরাং সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নকে বাধা দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

কিন্তু তাহলে আমাদের বাংলা ভাষার, বাঙালী সংস্কৃতির কি হবে। আমরা কি বিশ্বায়নের কাছে আত্মসমর্পন করে হারিয়ে যাবো? হারিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। হিন্দী সিরিয়াল, হিন্দি মুভি বহুদিন ধরেই আমাদের ড্রইংরুম দখল করে আছে, পোশাকে ফ্যশনেও তাই। ভালোমতো খেয়াল করলে দেখব হিন্দী নিজেও কিন্তু আবার আমেরিকান আগ্রাসনে আক্রান্ত। আসলে এই সমস্যার সমাধানও বিশ্বায়নের মধ্যেই আছে। বিশ্বায়ন যেহেতু একটা বিশাল মেল্টিং পট, সুতরাং আমাদের যদি সত্যিই এমন কিছু থাকে যা টিকে থাকার দাবী করে (যেমন হয়তো রবীন্দ্র সঙ্গীত) তাহলে আমাদের উচিত তাদের গ্লোবালাইজ করা। যদি গ্লোবালাইজ না করতে পারি, এবং বিশ্বায়নের ধাক্কায় বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে দোষ কিন্তু আমাদেরই। ওইদিন টিভিতে ইউটিউবের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাইরাল ভিডিওগুলোর একটা তালিকা দেখাচ্ছিল, হঠাত্ খেয়াল করলাম এর মধ্যে তালিকার প্রথম দিকের একটা হচ্ছে [link|http://www.youtube.com/watch?v=-GN8Oirkvjs|iRwbKv
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ ভোর ৪:১৪
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×