কবি জামাইয়ের বই প্রকাশের খবর শুনে, তিনি নাখোশ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং স্বভাবসুলভ গম্ভীর মুখে বসে ছিলেন। তারপর তার স্ত্রী, যাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন ২য় স্ত্রীর মৃত্যুর পর এবং তার একমাত্র মেয়েটি যার ঔরসেই জন্মেছিল, বলেছিল, “পালিয়ে বিয়ে করেছে তো কী হয়েছে? খারাপ ছেলের হাতে তো পড়ে নাই। বই প্রকাশ করেছে। কয়জনের বই প্রকাশ পায়?”
তিনি জবাব দিতে পারেন নাই, ইচ্ছাও ছিল না। তিনিও ভেবেছিলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী শরিফুল আবেদ, যার কাছে তিনি বরাবরই হেরে আসছেন, তার জামাই সরকারি চাকরি করে, যা নিয়ে শরিফুল আবেদের গৌরবের সীমা নাই, সেও তো বই লিখতে পারে নাই! বই লেখা যে খুব কঠিন কাজ, বই লেখা যে যা-তা লোকের কর্ম নয়, তিনি স্বীকার করেছিলেন বৌয়ের কথায়, মনে মনে। এবং গৌরব বোধ করেছিলেন।
তিনি তাই বইমেলা এসেছেন জামাইয়ের বই এর খোঁজে, সাথে এসেছে তার সর্বক্ষণের সাগরেদ শফিক। যদিও ভেগে যাওয়ার পর মেয়ের মুখদর্শন তিনি করেন নাই, কথাও বলেন নাই, এমনকি ফোনেও, জামাইয়ের বইটি সংগ্রহের লোভ তিনি সামলাতে পারেন নাই, শরিফুল আবেদকে ছলেবলে বইটা দেখিয়ে তার এতদিনের অপমানের শোধ নেয়ার একটা সুপ্ত ইচ্ছাও তার ছিল।
বইটির নাম তিনি জানতেন না, তার সাগরেদ শফিক শুধু প্রকাশনীর নামটাই জেনে নিতে পেরেছিল। নির্দিষ্ট স্টলে গিয়ে জামাইয়ের নামটি বলতেই চশমাআঁটা গোলগাল মুখের মেয়েটি অধিকতর গোলগাল হেসে বলল, “ওর একটা বই এসেছে। খুব ভাল চলছে। দিচ্ছি…”
জামাইয়ের বই ভালো বিক্রি হচ্ছে শুনে তার মুখে গর্বের হাসি ফুটে উঠে, তবে তিনি “আমি কবির শ্বশুর” বলে পরিচয় দেয়ার লোভ ও হাসিটাকে সামলে রাখেন।
মেয়েটি বইটি হাসিমুখে তার হাতে দিলে, তিনি বইয়ের নামের দিকে তাকিয়ে থাকেন এবং তার হাসিটি মিলিয়ে যায়। বইটির নাম, তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না, “জিহ্বা দিয়ে চেটে চেটে খা!”।
নামটা দেখে, নামের নিচে তার জামাইয়ের নামটা বারবার পড়ে, হতভম্ভ হবেন নাকি রেগে যাবেন বুঝতে না পেরে তিনি সাগরেদের দিকে তাকান এবং দেখেন, শফিক তার দিকে তৈলাক্ত মুখে তাকিয়ে আছে। তিনি বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকেন, উৎসর্গ পৃষ্ঠায় নিজের নামটি দেখে আবার থমকে যান এবং মুখের হাসিটা আবার ফুটে উঠতে চাইলে সেটা নিয়ন্ত্রন করেন।
উৎসর্গপাতায় নিজের নামটি তিনি বারবার পড়েন, এবং কবি জামাইয়ের অছিলায় তার নামটিও ছাপানো হয়েছে দেখে সুখবোধ করেন। মেয়ে ও কবি জামাইকে ক্ষমা করে দেয়ার কথাও একবার তার মাথায় চট করে ঘুরে যায়।
তিনি প্রথম কবিতাটা পড়ার প্রস্তুতি নেন।
প্রথম পৃষ্ঠার ছাপানো শব্দগুলো তার চোখে ভাসে এবং তিনি উচ্চস্বরে আবৃত্তির মতো করে পড়েন, “তোমার স্তন ধরে ঝোলাঝুলি করছে ছ'টা সাতাশ বছরের শিশু…”
তিনি আর পড়তে পারেন না, শক্ত চোখে আবার তিনি সাগরেদের দিকে তাকান এবং শফিক তার চোখ দেখে ভয়ে কুকুরের মত জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চাটে। পৃষ্ঠা উল্টালে 'পরস্ত্রী' নামের একটা কবিতা তার চোখে পড়ে এবং তিনি আবার পড়েন,
“স্ত্রীর পাশে শুয়ে তোমাকে দেখি আর হস্তমৈথুন করি রোজ
প্রেসক্রিপশনে প্যারাসিটামল নেই, তুমি আমার রোগমুক্তির ডোজ…”
তিনি নির্বাক ও লজ্জিত হয়ে কিচ্ছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর ক্ষিপ্ত হয়ে বইটি ডিসপ্লেতে ছুড়ে মেরে গটগট করে হাঁটা শুরু করেন এবং সাগরেদটি কিছু বুঝতে না পেরে হতবুদ্ধি হয়ে তাকে অনুসরণ করে।
ছবিসূত্রঃ CLEANPNG
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৩৩