বছর শেষ হয়ে আসছে । নির্বাচনের এক বছরের হিসাব নিকাশ ও চলছে । ব্লগেও নানা রকমের তুলনা, তালিকা , প্রিয় - অপ্রিয় লিস্ট বানানো শুরু হয়ে গেছে । নেহায়েত মজা করেই করছেন ভাগাভাগি হয়ত , আস্তিক - নাস্তিক ভাগ, পুরুষ নারীতে ভাগ, বরিশাল-নোয়াখালী-কুমিল্লা - চট্টলা বনাম বাকি বাংলাদেশ ভাগ, বুয়েট - নন বুয়েট ভাগ, পাবলিক - প্রাইভেট বিদ্যালয় ভাগ, বিবাহিত - অবিবাহিত ভাগ, ভাড়াটিয়া - বাড়ির মালিক ভাগ; এই তালিকা দীর্ঘ হতে হতে আসমান ফুঁড়ে যাবে ! বাঙ্গালী যোগে -গুণে পিছিয়ে থাকলেও ভাগে অনেক এগিয়ে গেছে নিঃসন্দেহে । আর মাইনাস তো ব্লগ ও বাস্তব - দুই জীবনের রাজনীতিতেই বিশেষ মশহুর!
আমি যেই তালিকা গুলো প্রতিটা বছর শেষে দেখতে চাই!
১। বাংলাদেশের প্রতিটা রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা কে কার সাথে " ব্যবসা" , " আত্মীয়তা" , " রক্তের সম্পর্ক" সূত্রে আবদ্ধ । নাম ও আবদ্ধতার তরিকা সহকারে ।
২। প্রতিটা নেতা নেত্রীর ছেলে মেয়ে কে কোথায় পড়ে বা কাজ করে কিংবা কার সাথে সংসার করে ।
৩। নির্বাচিত প্রতিটা জনপ্রতিনিধির প্রত্যেকে প্রতি মাসে বাংলাদেশের জনগণের রক্ত জল করা ট্যাক্সের টাকার কি পরিমাণ বিভিন্ন সরকারী অফিস , সংসদ , সেবা (টেলিফোন, গাড়ি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) ইত্যাদির মাধ্যমে ভোগ করেছেন । কত টাকা বিল বাকি রেখে সটকেছেন। অতীত , বর্তমান মিলিয়েই সন্নিবেশ করতে পারেন। বর্তমান ( আওয়ামী লীগ) হইলে আরো ভালো ।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে , আমি এই রকম তালিকা কিংবা প্রোফাইল বানানোর কথা কেন ভাবছি?
উত্তরটা হলো বাংলাদেশে নানান তেলেস্মাতি হয় । বেশির ভাগ সময় " সত্যি সেলুকাস" বলা ছাড়া আমরা কিছুই করি না বা করার সুযোগ থাকে না ।
যেমন একটা উদাহরণ দেইঃ দেখলাম ৩৪৫ টা গাড়ির জন্য ৭০০ কোটি টাকা খরচের কথা । এইটা দিয়ে একটা নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যায় হয়ত । যেইটা দেশের মানুষের জন্য অনেক বেশি দরকারী । ১০০০ মানুষ জলে ডুবে , ১০০০ টা পরিবার ঈদের আনন্দের সময় স্বজন হারিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন , ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেলো। রাস্তায় কত কিছু নিয়ে মিছিল হয়। বাঁধের বিরুদ্ধে মানব বন্ধন সহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয় । কিন্তু রক্ত পানি করা ট্যাক্সের টাকার ৭০০ কোটি যখন জনপ্রতিনিধিদের বিলাসের পেছনে ব্যয় করার কথা ওঠে, যখন ৫০ হাজার স্বজন কবরে কবরে , শ্মশানে শ্মশানে বুক চাপড়ায় তখন কেন মিটিং, মিছিল, প্রতিবাদ , মানব বন্ধন , ভাঙচুর হয় না?
ঐ ৭০০ কোটি টাকাটা তো আপনার আমার রক্ত পানি করা ট্যাক্সের টাকা !
ঐ ১০০০ মানুষ তো আপনার আমার আত্মীয় !
হয় না কারন আমরা এত দিনে জেনে গেছি, বুঝে গেছি , আমাদের ব্রেইন এই কথা দিয়ে ওয়াশ করা হয়ে গেছে যে আমরা যতই চেচাই আর লাফাই আর ভাংচুর করি না কেন , আমার রক্ত বেচা টাকা দিয়ে গাড়িই কেনা হবে। আমাদের স্বজনেরা আল্লাহর মাল হয়ে ডুবে ভেসে যাবে , আর আমরা হাত কামড়ে - বুক চাপড়ে বিনা প্রতিবাদে গুমরে যাবো। কিন্তু কেন? আপনি কি বোঝেন , " কিছু করার নেই" কথাটা যেদিন থেকে ভাবতে শিখেছি , সেই মুহুর্ত থেকে ওরা জিতে গেছে?
বিচ্ছিন্ন ভাবে খবরে, ব্লগে ও অন্যান্য মাধ্যমে এই তেলেসমাতির প্রমান গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়ে যায় । এক সাথে পাই না । অনেকের চোখ এড়িয়ে যায় বলে আমরা কেউ কেউ জানিও না ।উদাহরণঃ টাল দেলোয়ারের পায়জামা খুলে যাওয়ার কথা আমরা যতজন জানি, ততজন কি জানি তার দুইবাসার বাজার খরচ সংসদের অফিসিয়াল বিল থেকে করা হয়েছে চীফ হুইপ থাকা কালে? আমরা কয়জন জানি এক মাসে দেলোয়ার ৭৪০ টি এসি আই এরোসল স্প্রের বিল করেছেন তার অফিস ঘরের জন্য? কিছু করতে পারবো না ভেবে জানার আগ্রহও প্রকাশ করি না । কিন্তু , ৫ বছরে অন্তত একবার কিছু একটা করার সুযোগ আমাদের জীবনে কিন্তু আসে!দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজে আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষমতা নাই বললেই চলে । একটাই অস্ত্র এখনো হাতে রয়ে গেছে আর তা হলো , "ভোট"। কিন্তু সেই ভোটটাও মোটামুটি অকার্যকর করে রাখা হয়েছে । ( যারা দাঁড়ায় তারা সবাই খারাপ হলে ভোট আর দিব কারে?) তাই প্রায়শই শুনি ( আমার নিজেরও একই অবস্থা ) , ভোট দিয়ে কি হবে? ভোটার হয়ে কি হবে? কাকে ভোট দিব?
আমি ১০১% নিশ্চিত , এই অনুভূতির আরো খারাপ রুপ দেখবো ২০১৩ সালে । কিন্তু আমরা ভোটার হওয়া বন্ধ করলেই , ভোট দেওয়া বন্ধ করলেই কি প্রলয় বন্ধ হবে? কিছু না করে ঘরে বসে থাকলে অবস্থা কি আরো খারাপের দিকেই যাবে না? কয়জনের সুযোগ আছে দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যাবার? অভিবাসী হওয়াটাই কি সমাধান?
সম্ভাব্য সমাধানঃ
সত্যি কথা বলতে কি , বাংলাদেশের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তপনা ঢুকিয়ে মসল্লা সহকারে মাখিয়ে তরকারি বানানো হয়েছে । অবস্থা এমনই
হয়েছে যে আমাদের শুধু বড় বড় দুর্নীতি গুলাই চোখে পড়ে , বিবেকে ধাক্কায় , ছোট খাট চুরি, চামারি, ঘুষ , মিথ্যাচার এখন আর গায়ে লাগে না । ( ঘুষ দিয়ে ফাইল ছাড়ানো, বিশেষ সুবিধা নেওয়া, বয়স কমিয়ে সার্টিফিকেট নেওয়া, তদবির করে কাজ আদায়, ডোনেশন দিয়ে মেডিকেল ভর্তি , মিথ্যা যোগ্যতা ও পরিচয় দিয়ে প্রেম আদায় ইত্যাদি) । তাই হঠাৎ করে একদিন সবাই সৎ হয়ে যাওয়া কিংবা দেশ বদলে ফেলা অথবা নেতানেত্রী বদলে ফেলা সম্ভব হবে না । তবে কাজটা এখন শুরু করলে বেঁচে থাকতে থাকতেই এই দেশের পরিবর্তন দেখে যাওয়া সম্ভব!
শুরুতে আমরা আমাদের সকল নেতা নেত্রির প্রোফাইল এই ইন্টারনেটে সন্নিবেশ করতে পারি। নির্বাচন কমিশন জীবনেও করবে না । আমাদেরকেই করতে হবে । কাদের হাতে বার বার আমার জীবন , আমার টাকা পয়সা , আমার রক্তার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব তুলে দিচ্ছি তা আমাদের নিজেদের তাগিদেই জানা দরকার । পত্রিকার পয়সা দিয়ে প্রকাশিত " রাজনৈতিক জীবন " এর বাইরে , সম্পূর্ণ ও সত্য প্রোফাইল জানা ও জানানো দরকার ।
দয়া করে বলবেন না , এই লিস্টি করে কি হবে ! মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল একাট্টা করার সময়েও এই ধরনের অনেক কথা বলে অনেকেই দায় দায়িত্ব এড়াতে চায়, বলে , এই সব করে কি হবে? বিচার তো আর হবে না ! কথা হলো , বিচার আমরাই করবো , আজ নয়ত কাল । প্রমান গুলা এক সাথে না করলে বিচারের সুযোগ এলেই বা কি হবে? আমরা কি কিছু করতে পারবো? যুদ্ধাপরাধীদের লিস্টের চেয়ে এই লিস্টও কম গুরুত্বপূর্ণ না । একদল ১৯৭১ এ মেরেছিলো , আরেক দল এখনো আমাদের মেরে চলেছে।
আগামী নির্বাচনে কি হবে সেইটা এখন থেকেই ঠিক করা দরকার । ৪ বছর আসলে খুব কম সময়! রাজনীতিবিদেরা পরিবর্তন আনে না । সেই আদিকাল থেকে দুই পয়সার মানুষেরাই যুথবদ্ধ হয়ে নিজেদের তাগিদে পরিবর্তন আনে । তাই দুই পয়সার মানুষের উপরেই আমার ভরসা ১০০%।
আমি কি আপনাদের সাথে পাব? কত শত মানুষ এই ব্লগে আসেন আর বাংলাদেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন, তাদের ঐ ইচ্ছাগুলোকে কাজে পরিণত করার এই উদ্যোগে কি আপনি সাড়া দেবেন?
বাংলা ব্লগিং সাইট হয়েছে কয়েকটা । ব্যক্তিগত ব্লগ তো আগেই ভুরি ভুরি। তার মানে লেখালেখির পিছনে অনেকেই সময়, শ্রম, ও টাকা ঢালছেন । আমি জানি এইটা একটা বিশাল প্রজেক্ট হবে । অনেকটা উইকিপিডিয়ার মত। কিন্তু এর উপরে আমাদের জীবন মরণ নির্ভর করছে । নির্ভর করছে ১৫ কোটি মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রনকারী নানা সিদ্ধান্ত । যেই ৬০ টা মানুষ এই ১৫ কোটি মানুষের জীবনকে যাচ্ছেতাই করে চালাচ্ছে , যেই ৩০০টা মানুষ ১৫ কোটি মানুষের ইচ্ছে অনিচ্ছের তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছা অনিচ্ছা চাপিয়ে দিচ্ছে বারে বার , তাদের সম্পর্কে একটা স্থায়ী দলিল কি আমাদের হাতের নাগালে থাকা উচিত নয়?
সব কয়টা ব্লগ মিলিয়ে যদি ৬০০০ ব্লগারও থাকে , তার ভিতরে ৬০০ ব্লগারও যদি মাঝে মাঝে তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন , তাহলেও ৩০০ ( সংসদের ৩০০ আসন) এলাকার রাজনীতিবিদদের পরিচয় তুলে ধরা সম্ভব।
আমি শুধু প্রয়োজনের কথাটা বললাম । এর টেকনিকাল দিক, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের দিক গুলো আপনাদের আলোচনার উপরে ছেড়ে দিলাম। আপনি কি ভাবছেন?
এই তালিকা করে কি হবে আসলে?
এইটা আসলে প্রথম ধাপ । একটা দেশের মাথা নষ্ট হইলে হাত পায়ের চিকিৎসা করে কোন কাজে আসে না। সুতরাং মাথা গুলা আগে ভালো হওয়া দরকার । আমরা ভোট দিয়ে দিয়ে এই যে প্রতিবার নষ্ট, পঁচা কতগুলা দালাল নিয়ে মাথায় বসাই, সেইটা সবার আগে বন্ধ হওয়া দরকার । এই বন্ধ করার প্রথম ধাপ হলো কাদের ভোট দেব আর কাদের দেব না এইটা বুঝার জন্য রাজনীতিবিদদের সঠিক পরিচয়টা জানা দরকার । আমি নিজে সবাইরে চিনি না । আপনি কি আপনার এলাকার নেতাগুলারে চিনেন ?
হঠাৎ করে ভোটের আগে চার রঙা পোস্টারে আমি তাদের চিনতে চাই না । আমি এখন থেকেই চিনতে চাই , জানতে চাই , ২০১৩ সালে কারা দাঁড়াবে ভোটে । অবশ্য তার আগেও অনেক মেয়র, ইউনিয়ন , হ্যান ত্যান নানা কিসিমের ভোট ও আছে ।
কারে দিব না , এইটা জানা তো যথেষ্ট না , কারে দিব , এইটা জানাও জরুরী । এইটা আসছে ২য় পর্বে । এইটাই পরের , দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
তালিকা , সাধের বাংলাদেশ ও বছর শেষের ভাগাংক
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ
গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন