-কোথায় যাচ্ছিস?
-এই তো বাবা টিউশনিতে,জামিল শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বললো।
- কটায় ফিরবি? আনোয়ার সাহেব চশমা ভাজ করতে করতে বললেন।
-এই তো বাবা, ধরো রাত ১১ টায়
-এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকা ঠিক না, শোন আসার সময় পারলে এক পাতা ল্যাকজোটানেল নিয়ে আসিস,আমার হাত পুরো খালি, এ মাসের পেনশনের টাকা এখনো তুলিনি, এর ভেতর রুনির শ্বশুর বাড়ীতে ঈদের জামা কাপড় পাঠালাম,বিয়ের প্রথম বছর………
-ঠিক আছে, ঠিক আছে, জামিল চুল ঠিক করতে করতে তাড়াহূড়ো বের হয়ে আসলো।
জামিল গলির মোড়ে এসে একটা ডারবি ধরালো, গোল্ডলিফ আর খাওয়া যায় না, একটা সিগারেট ৮ টাকা, কোন মানে হয়, এমনিতেই টানাটানির সংসার, বাবার অল্প পেনশন আর ৩ টা টিউশনির টাকায় চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে, জামিল পকেটে হাত দিলো, ১০০ টাকার একটা নোট পাওয়া গেলো,বিশাল ভরসার কথা।
আজ জামিলের প্রথম কাজ লাবনীর বাসায় যাওয়া, লাবনী রাগ করে আছে, একটা কিটক্যাট আর গোলাপ নেওয়া যায়, তবে দেওয়া বেশ মুশকিল, লাবনীর বাবা আবার ওয়ার্ড কমিশনার, ধরতে পারলে এমন প্যাদানী দেবে। যো হোগা দেখা যায়েগা ভাবতে ভাবতে জামিল ৫০ টাকা দামের একটা কিটক্যাট কিনে ফেললো।
জামিল লাবনীদের বাসায় যখন পৌছালো তখন বেশ আধার হয়ে এসেছে,কারেন্ট ও নেই, তবে লাবনীদের বাসায় কারেন্ট আছে, কমিশনার সাহেব দু এলাকার লাইন তার বাসায় নিয়ে ইলেক্ট্রিসিটিকে বাঈজী নাচ নাচাচ্ছেন।
-তা জামিল সাহেব কি মনে করে? চৌধুরী খালেকুজ্জামান জামিলকে বসতে ইঙ্গিত করলেন।
-জ্বী চাচা ভালো,জামিল আসে পাশে তাকালো, বসার কোন জায়গা নেই, কমিশনার সাহেব বসে আছেন বারান্দায় চেয়ার নিয়ে, তার হাটুর কাছে বসে আছে এলাকার উঠতি মাস্তান কাশেম।
-কোন দরকার ছিলো?
-চাচা, আমার একটা কমিশনার সার্টিফিকেট দরকার ছিলো।
-তা অফিসে আসবে এখানে কি? সকালে অফিসে আসো, এখন যাও।
চাচা আমি একটু পানি খাবো, খালেকুজ্জামান জামিলের দিকে তাকালেন, তুমি ভদ্র ছেলে, তুমি কেনো পানি খাবে? পানি খাবো আমরা বলেই খালেকুজ্জামান অপ্রকিতস্থের মতন হাসতে লাগলেন। কাশেম হাত নেড়ে জামিলকে দূর হতে বললো।
জামিল জানালার দিকে তাকালো, লাবনী দাঁড়িয়ে আছে, তবে কাছাকাছি হওয়ার সু্যোগ নেই।
কমিশনার সাহেবের বাসা থেকে বের হয়ে জামিল গেলো ঝুমুকে পড়াতে, আলরেডি বেতনের ডেট পার হয়ে গেছে, আজ টাকা দেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা, টাকাটা খবই দরকার, আব্বার অষুধ নিতে হবে, আব্বার জন্য একটা পাঞ্জাবীও কেনা দরকার, মানুষটা গত ঈদেও কিছু কেনেনি।জামিল ঝুমুদের বাসায় পোছে দেখলো ইয়া বড় একটা তালা ঝুলছে, পাশের বাসার রফিক দাত খোচাতে খোচাতে বললো, হ্যারা তো ঈদের ছুটীত বাইত গ্যাসে গা। জামিল কিছু বললো না, শান্ত ভাবে হাটতে হাটতে যখন বাসায় ফিরিলো তখন রাত সাড়ে এগারোটা,আনোয়ার সাহেব উঠোনে বসে আছেন।
-ল্যাকজোটানেল এনেছিস? রাতে যে একদম ঘুম হয় না।
জামিল হাত বাড়িয়ে একটা ট্যাবলেট দিলো। তার খব ক্লান্তি লাগছে। মা মারা যাওয়ার পর বাবা কিছুটা মানসিক সমস্যায় আছেন, বোনটার বিয়ে দেওয়ার পর বাবার হাতে কোন টাকা নেই, জামিল অনার্স শেষ করে বসে আছে দু বছর, চাকরী হয় না, কিছু হয় না, এর ভেতর লাবনীর নাকি বিয়ে প্রায় ঠিক, জামিলের কিছু ভালো লাগে না, হঠাত কারেন্ট চলে যায় , নক্ষত্রের আলো মৃত অয়ে আসে, আনোয়ার সাহেব অন্ধকার হাতড়ে জামিলের হাত ধরেন,হাতটা কি শুকনো।
-জামিল, বাবা ভালো আছিস তো?
-জামিল চুপ করে থাকে।
-কিরে কিছু বলছিস না যে? আনোয়ার সাহেব জামিলের পিঠে হাত রাখেন।
-বাবা কবিতা শুনবে?
-শোনা
এক পাল মৃত নক্ষত্রের বিষাদ বুকে নিয়ে জামিল ভরাট গলায় আবৃতি করে-
"যেখানেই যাই আমি সেখানেই রাত!
স্টেডিয়ামে খোলা আকাশের নিচে রেস্তোরাঁয়
অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর ধরেছে নিটোল দিন নিটোল দুপুর....
সেখানে গেলেও তবু আমার কেবলই রাত,
আমার কেবলই শুধু রাত হয়ে যায়!"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬