অনিশ্চয়তা বোধের কারনেই মানুষ ছুটাছুটি করে নিশ্চয়তার পেছনে। আকাঙ্খা তৈরী হয় সবকিছুর পরম সত্য জাননের। আর তাই দেখা যায় আধুনিক যুগের বিজ্ঞানের উন্নয়ণ হইছে শনৈ শনৈ। তার সাথে মধ্য যুগের স্কেপটিক চিন্তার প্যাটার্ন পাল্টাইয়া আবারো চিন্তকরা দৌড়াইছে সেই নিশ্চয়তার খোঁজে। কিন্তু নিশ্চয়তার সাথে সবসময়ই যেই বিষয়টা যুক্ত থাকে সেইটা হইলো পরম সত্য উপলব্ধি। মানুষ নিশ্চিত হইতে চাইছে, পরম সত্যের খোঁজ পাইতে চাইছে। কিন্তু পরম সত্য বইলা যে আসলে কিছু নাই সেইটার উপলব্ধি হওনের আগেই সে একটা আদর্শ রূপ বানাইয়া ফেলছে, যেইটারে পরম সত্য না কইলেও পরম সত্ত্বা কইয়া মনে শান্তি পাওনের চেষ্টা করছেন সকলে। পুরান আমলের গোত্রপতি কিম্বা জমিনদার কিম্বা রাজাগো ঈশ্বরের চাইতে যার পার্থক্য খুব বেশি নাই, এই সত্ত্বা বিজ্ঞানের উন্নয়ণের সাথে অনেক বেশি লজিক্যাল হইছে খালি, মডারেট হইছে। মানুষ তার অনিশ্চয়তা বোধের থেইকা ঈশ্বরের চরিত্র পর্যন্ত পাল্টাইয়া ফেলছে! এইটা ভাবতেই আমার গা শিউরাইয়া উঠে! কিন্তু আসলেই তা হয়।
আমি মূলতঃ একটা উদ্দেশ্য নিয়া এই লেখা শুরু করছিলাম, সেইটা হইলো অনিশ্চয়তার কারণে আমাগো সমাজে যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরী হইছে, আর তারে নিয়া যেই ফালাফালি, কিম্বা বিশ্বাসের ফুলঝুড়ি তা নিয়া আমার মনে প্রশ্ন তৈরী হয়। আসলে মানুষ, মানে আমি খুব ব্যক্তিগত মানুষের কথা কইতেছি, অনিশ্চয়তা বোধের কারনে একধরনের সম্পত্তিজাত ধারনা দিয়া আক্রান্ত হয়, এই সম্পত্তিজাত ধারনা আসে হারানোর ভয় থেইকাই। আর অনিশ্চয়তার আরো ভায়োলেন্ট হাতছানিতে সে প্রতিশোধ পরায়ন হয়! সম্পত্তি টিকাইয়া রাখতে সে প্রয়োজন বোধ করে নিয়ম প্রতিষ্ঠার! অনিশ্চয়তার উদ্ভ্রান্ত বোধ থেইকা বাইর হইয়া আসতে চায় সে। কিন্তু নিয়ম কি অনেক কিছু পাল্টায়? নিয়ম কি অনিশ্চয়তা বোধ থেইকা মানুষরে মুক্তি দেয়? নিয়মের বিপরীত কোন কিছু যদি আমরা ভাবতে পারি তা হইলো নিয়মহীনতা। কিন্তু মানুষ কি নিয়ম হীনতায় উন্মাদ থাকে? উন্মাদই যদি থাকে তাইলে নিয়মটারে বিশ্বাস হিসাবে নিতেও তো সমস্যা হওয়ার কথা!?
নিয়ম প্রতিষ্ঠার বিষয়টা কিন্তু ব্যক্তি মানুষ নেয় না সকল সময়, কারন ব্যক্তি মানুষের অনিশ্চয়তা বোধ থাইকা যায়, এইটারে মাইনা নিয়া জীবনের প্রবহমানতা বজায় রাখে সে। পরিসরের ভিন্নতায় কিন্তু ভিন্নরম হয়, একসময় ক্ষমতার মধ্য দিয়া সম্পত্তির বৃহৎ ভাগীদার, যারা মূলতঃ সমাজের বড় প্রতিষ্ঠানের কাড়াকাড়ি দিয়া অনিশ্চয়তা কাটানের খেলাটা খেলে, তারাই নিয়ম প্রতিষ্ঠা করে। অজানারে ভয় পাওয়া থেইকা উৎসারিত অনিশ্চয়তারে কাটানের লেইগা নিয়ন্ত্রণের বাহানা দেখায়। আর এই বাহানার থেইকাই তাগো ভাবনা জুইড়া থাকে সহজ সমাধানের নিশ্চয়তা। সমাধানটারে ভেতর থেইকা মানে যারা ভূক্তভোগী তাগো থেইকা না নিয়া, উপর থেইকা চাপাইয়া দেওনের তাগীদ তৈরী হয়। কখনো ঈশ্বর বলিয়াছেন বইলা, আবার কখনো... নিজেই ঈশ্বরের মতোন সিদ্ধান্ত মূলক হইয়া। কিন্তু খুব ভালো সিদ্ধান্ত দিতে পারাটাই যে অনিশ্চয়তা বোধহীনতার সাথে তুলনীয় কিছু না, সেইটা তাগো মাথায় থাকে না। অনিশ্চয়তা বোধের কারনে মানুষ তার "মান" সব কিছুরেও পাল্টাইয়া ফেলনের কথা ভাবে। অনিশ্চয়তা বোধরেও স্বাভাবিকতায় নিয়া আসার কথা ভাবে। এইটাই তো হওয়ার কথা টাইপ ভাবে। নিশ্চিত হওয়ার খেলায় অংশগ্রহণ কমাইয়া দেয়।
যাই হোক শুরু করছিলাম বোধ নিয়া. ঠিক বোধ নিয়া না, মূল্যবোধ নিয়া। যে কোন বোধের মতো মূল্যবোধ সবসময় দ্বান্দ্বিক চরিত্রের মধ্যে থাকে না। মূল্যবোধ নির্ধারণ হয় আগে। মানুষ ভালোবাসা, আবেগ, রাগ- ক্ষোভ, লজ্জা কিংবা অন্যান্য বোধের ক্ষেত্রে কোন প্রাক নির্ধারণের ব্যবস্থা রাখে না। কিন্তু মূল্যবোধ তৈরী করে বর্তমানরে নিজের মতো রুচীবোধে পরিচালনের স্বার্থে। আমার মনে হয় ঐটা নিয়া আলোচনা করা যাবে পরের ভাগে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



