ধীরে ধীরে সব কিছু আমাগো নিয়ন্ত্রণে চইলা আসতেছিলো। একের পর এক গোপন শিবির কর্মী ধরা পরতেছিলো তাগো দেয়া ইনফরমেশনে আমরা শিহরিত হইতেছিলাম, তাগো পরিকল্পণায় আমরা ভীত হইতেছিলাম। ঢাকা শহরে বড় হওয়ার কারণে শিবিরের আসল রূপ ঠিক জানতাম না আগে। খালি জানতাম এরা হাত-পা-রগ এইসব কাইটা দখলের রাজনীতি করে। শিবির হাত কাইটা দিছিলো এইরম দুইজনরে দেখার দুর্ভাগ্য আমার হইছিলো এর আগে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এক কমরেড রাজেশদা আর আমার মেজ কাক্কুর রাজনৈতিক বন্ধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল হামিদ, এই দুইজনেরই ঠিক একই প্যাটার্নে কনুই থেইকা হাত কাইটা দিছিলো শিবির কর্মীরা, দুইটা ঘটনারই উদ্দেশ্য ছিলো ক্যাম্পাস দখল। কিন্তু তারা যে কেরম গোপন গোপন খেলায় সংগঠনের বিস্তার ঘটায়, নিয়মিত কেরম ফজরের নামাজ পইড়া আলো ফুটনের আগে সেন্ট্রাল মাঠে কাঠের আর আসল অস্ত্র দুই দিয়াই কমব্যাট ট্রেনিং সেশন করতো সেইসবের বিস্তারিত বর্ণনা দিতেছিলো ধরা পরা শিবির কর্মীরা। আক্রমণের দিন যেইসব শিবির কর্মী ধরা পরছিলো তাগো মধ্যে এক দুইজনরে হয়তো আমাগো ব্লগের জামায়াতি বন্ধুরাও চিনবেন। একজন ছিলো মাত্র সেকেন্ড ইয়ারের কাস শুরু করা মৃন্ময়। সে যদ্দুর মনে পরে জিওলজিতে পড়তো। পোলাপাইনের কাছে শুনছি সে লেডি কিলার টাইপ ছিলো। যাউগ্গা ঐটা মূখ্য না, তার আরেকটা পরিচয় হইলো সে ছিলো সালাম বরকত হলের ছাত্রদলের দফতার সম্পাদক। এই মৃন্ময় পরে শুনছি জামায়াতের কোন এক কেন্দ্রীয় নেতার সু সন্তান। আলী আহসান মুজাহিদ কি? আরেকজন ছিলো চৌহান যার নাম আগেও একবার কইছি। সে ছিলো ভাসানী হলের পর্ণো ছবি দেখার কমিটির আহ্বায়ক টাইপ। সে শিবিরের কর্মী এই পরিচয় বিশ্বাস করতে কষ্ট হইছিলো আমার নিজেরই। অসাধারণ সব ছদ্মবেশ!
এমন শিবির কর্মীরাও ধরা পরছিলো ঐ টাইমে যারা শিবির বিরোধী মিছিলে শ্লোগান ধরতো গলা কাঁপাইয়া। অনেকে ধরা পরলে তারা লাফাইয়া গিয়া কলার চাইপা ধরতো কিছু কওনের আগেই মাইর শুরু করতো। কিন্তু এই ধরনের ছেলেরা যাগো ধরতো তারা আর কোন ইনফো দিতো না। তবে সেই ছেলের রুম থেইকাই বনপুকুরে জামায়াতের অফিসে কোন নেতা আইসা তাদের কিভাবে ইসলামের পথে শহীদ হওনের কথা বলছে তার বিষদ বর্ণনা ওয়ালা লেখা ডাইরী পাইয়া আমরা হতভম্ব আর একই সাথে আতংকিত হইতে শুরু করলাম। আশেপাশের কাউরে বিশ্বাস করতে পারি না। মানুষরে বিশ্বাস করতে না পারাটা যে কিরম অস্বস্তিকর আমি হাড়ে হাড়ে টের পাইছিলাম ঐ সময়ে। এখনো কোন আদালত ভবনে গেলে আমার সেইসব দিনের স্মৃতি মাথায় আসে।
শিবির কর্মীগো আন্ডারগ্রাউন্ড বিস্তার দেইখা রীতিমতো শ্রদ্ধাবোধও জাগতো মাঝে মাঝে। তাগো সব স্তরের কর্মীরাই সবাইরে চিনতো না। আক্রমরে 3দিন পর আমাগো বন্ধু আলমগীর হলে ফিরা আসছিলো। তার হাতে মুক্তাগাছার মন্ডা। কিন্তু তারে তার দৈর্ঘ্যের চেয়ে বড় এক রাইফেল নিয়া ছাঁদে দেখা গেছে, আল বেরুণী হল দখলের পর। শেষ মুহুর্তে পালাইয়া যাইতে পারা কয়েকজনের একজন সে। আমরা তখন গেস্টরুমে বসি নিয়মিত কে আসলো কে গেলো তা দেখনের লেইগা। আলমগীররে আমরা বসাইলাম, তারে একদম সাধারণ ভাবে জিজ্ঞাসা করলাম। সে যথারীতি সব অস্বীকার করলো। আমরা তার রুমে গিয়া লকার চেক করলাম। সেইটা পুরা খালি কোন জামাকাপড় বই পত্রও নাই! এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে কিছু কয় না! তারপর তারে হালকা চর-থাপ্পরও দেয়া হইলো। সে কিছু বলে না। মানুষরে তো মারতেও পারি না ঠিক মতো! তারে নিয়া আসা মুক্তাগাছার ড্রাই মন্ডা খাওয়াইলাম আধা কেজির মতো পানি ছাড়া। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। মেষে পাশের পোলাটার কাছ থেইকা একটা ব্লেড নিলাম। ব্লেডটা টেবিলের উপর রাইখা তার চোখ বানলাম। চোখ বাইন্ধা হাতে নিলাম একটা পেনসিল। পেনসিলের শিস দিয়া হালকা কইরা তার কান্ধের রগের উপর বুলাইলাম। আর সাথে সাথে সে কয় "হাসান"। আমি কই হাসান কি? সে কয় হাসান হইলো শিবিরের সদস্য। অদ্ভুত!
আমরা জানতাম হাসান শিবির কর্মী, সে পুলিশের হাতে ধরাও পরছিলো, কিন্তু সে শিবিরের সদস্য! তারপরের নাম যেইটা কইলো সেইটা শুইনা আমি রীতিমতো ভরকাইলাম! "কামরুল ভাই"। কামরুল ভাই ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আল বেরুনী হল শাখার সভাপতি! হাসান দোহারী নামে কবিতা লিখতো বাংলা বিভাগের ছাত্র কামরুল হাসান। শিবিরের এই আক্রমণের সময় সম্ভবতঃ সে মাস্টার্সের রেজাল্টের অপেক্ষায়। তখন ছাত্রলীগের বড়ই দুর্দশা! আলবেরুনী হলের প্রায় একক প্রতিনিধিত্ব করে কামরুল হাসান দোহারী। সে ছাত্র শিবিরেরও সভাপতি!
ক্যাম্পাস থেইকা বাইর কইরা দেয়ার 15 দিন পর সে ছাত্র শিবিরের জাবি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করলো। তার এই পদোন্নতি আমাগো বাঁচাইছিলো। তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি মহিবুল্লাহ আরেকটু হইলেই আমাগো বিরুদ্ধে মামলা করার সবকিছু সাজাইয়া ফেলছিলো। সে এক বিরাট ইতিহাস!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



