এক.
নাম নিয়া ভালোই প্যাচ লাগে এই দেশে। নবজাতকের নাম রাখা নিয়া রীতিমতো পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দ্যায়। নানা বাড়ি থেইকা দেওয়া নাম আর দাবা বাড়ির নামের পছন্দ এক না হওনে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়। আমার নিজের নাম নিয়াই এমন ক্যাচাল লাগছিলো...নানা স্বদেশী আন্দোলনে গেছিলেন তার বাবার পিস্তল চুরি কইরা। তখন তার নাকি মাত্র ১৫/১৬ বছর বয়স। তিনি ফিরা আসেন অবশ্য বিদ্রোহের মাঝামাঝি সময়েই, কারণ বৃটিশ শাসকের চাকরী করা তার বাপের তখন খুব খারাপ অবস্থা। এমনিতেই ধর্ম পরিবর্তনের লেইগা নিজের সমাজচ্যূত হইছিলেন তিনি শুরুতেই...তার উপর ইংরেজরাও তখন শত্রু। নানা ঐ কৈশোর কালে এই চাপ নিয়া খুব বেশিদিন পলাইয়া থাকতে পারেন নাই।
তো এই বিদ্রোহী নানা শেষ কালে আমার নাম করণ করলেন এক বিপ্লবী ডাকাতের নামে। আর দাদা বাড়ি থেইকা দেওয়া হইলো আরেক নাম। নানার দেওয়া নাম হিন্দুয়ানি দোষে দুষ্ট হওনের কারণে বাড়িতে আমারে দাদাবাড়ির দেওয়া নামেই ডাকা হয় বেশীরভাগ সময়। কিন্তু আমি নানার নাম ব্যবহার কইরা ফেলতে সক্ষম হই সার্টিফিকেটে-পাসপোর্টে।
আমার বাপতো মেঝো চাচার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া বন্ধ রাখছিলেন দীর্ঘদিন। তাগো অপরাধ মেঝো চাচার একমাত্র ছেলের নাম রাখছিলাম আমি। কিন্তু তার বেয়াই সাহেবের নিয়ত মতো অন্য আরেক নামে তার পরিচিতি হইতে শুরু হয়। আমার নিজের তেমন কোন ক্ষোভ ছিলো না যদিও। কারণ এই চাচীর বাড়িতে যাইতে ভালোই লাগতো আমার। অনেক খাওন দাওন জুটতো।
তো আজকে হঠাৎ নাম নিয়া নতুন বিতর্ক উঠতে দেইখা মজাই পাইলাম। আমাগো শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পাল্টানো হইলো দীর্ঘকাল পর। নতুন নাম কি হইতে পারে এইটা মনে হয় না অনেক হার্ড লাইনার আওয়ামি কর্মীরাও আন্দাজ করতে পারছিলো। আমারে জিগাইলে আমিও মনে হয় সবার মতোন কইতাম বঙ্গবন্ধু'র নামে হইতে পারে। কিন্তু সকল মানুষরে অবাক কইরা দিয়া বিমান বন্দরের নতুন নাম দেওয়া হইলো ইসলামী আওলিয়া শাহজালালের নামে।
এই নামকরণের উদ্দেশ্য-বিধেয় বুঝতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। যাতে জিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে একটা ইসলামী প্রতিপক্ষ দাঁড় করাইয়া ভবিষ্যত আন্দোলনের সম্ভাবনা নস্যাৎ করা যায়। অথবা আওয়ামিরা হয়তো ভাবতেছে তারা আর ক্ষমতায় আরোহন করবার পারবো না পরবর্তী নির্বাচনে, তাই আগের থেইকাই একটা আন্দোলনের সুযোগ তৈরী কইরা রাখা আর কি...কারণ চারদল বা বিএনপি যেই ভাবেই পরবর্তী সরকার গঠিত হোক, বিমান বন্দর থেইকা জিয়ার নাম তুইলা দেওনের প্রক্রিয়া যাতে বহাল থাকে। তখন ইসলামী বাতাবরণে আওয়ামিরা ভালোই আন্দোলন চালাইবো।
লোকমুখে জানি আওয়ামি লীগের ইতিহাসে মুসলিম কানেকশান সবসময় শরীয়তি ছিলো। যাগো লগে জামায়াতের খুব বেশী দূরত্ব নাই। বিশ্ব রাজনীতিতেও শরীয়ত পন্থী দেশগুলির লগে আওয়ামি কানেকশান ভালো্। কিন্তু এই ইসলাম দিয়া জামায়াত-বিএনপি জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন...তারাও বড়ো শরীয়তের মুসলমান। কিন্তু মারেফত বা হাকীকতের যেই ইসলাম এই দেশের বড় অংশের মানুষের পছন্দ, তারে পুঁজি করলে বরং আওয়ামিগো আখেরে লাভ হওনের সম্ভাবনা। যার ফলশ্রুতিতেই আওয়ামি লীগ বাইছা নিলো এই দেশের বুজুর্গ ধর্ম প্রচারকগো মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়জনরে। শাহজালাল সাহেব নিজে এই রাজনৈতিক খেলারে কেমনে দেখতেন কে জানে...
দুই.
নাম যাই হোক না কেনো আমার মন খারাপের কোন পরিবর্তন হয় না। আমি স্থবির অসুস্থ থাকি। বাতাসে শরীর ভাসানোর খেলা খেলতে গিয়ে বুঝতে পারি...বয়সের ভার অনেক গিয়েছে বেড়ে। যদিও দুষেছি মধ্যাকর্ষণ শক্তিরে...
তিন.
ঘুম কম হওয়াতে মনে হয় বেড়ে যাচ্ছে আমার টেনশন। অজানা-অচেনা সব সম্ভাবনা গুলি প্রবল দৌড়ায় আমার হৃৎপিন্ডের প্রান্ত এলাকায়...