somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ভাস কবি

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বড়ভাই মাঝে মাঝে আমার সাথে আড্ডা দেন। কয়েক দিন ধরে খেয়াল করছি তিনি খুব দৌড়ের উপর আছেন। খোজ নিয়ে জানলাম তিনি গ্রাম গঞ্জে ঘুরে ঘুরে ‘ভাস কবিতা’ নামের এক ধরনের কবিতা সংগ্রহ করছেন। কবিতা চাইলাম, দিলেন না। দিলেন একজন ভাস কবির সংক্ষিপ্ত জীবনী।

অপেক্ষাকৃত স্বল্প শিক্ষিত এক শ্রেণীর কবি কোন বিশেষ ঘটনা বা কাহিনীকে উপজীব্য করে তার কল্পনার হস্ত প্রসারিত করে অনেকাটা গীতি কবিতার আদলে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ কবিতা রচনা করেন। পড়ে বিশেষ ভাসে এক কাগজে ছাপিয়ে তা বিভিন্ন হাট-বাজার, লঞ্চ-স্টিমার, ট্রেন, বাস বা কোন জনবহুল স্থানে দাঁড়িয়ে অনেকটা পুথি পড়ার মতো করে সুর করে পড়েন। এভাবে ঘুরে ঘুরে আসর জমিয়ে এ ভাস কবিতা বিক্রি করেন। বাংলা লোক সংস্কৃতির অন্যতম ধারা এ ভাস কাবিতার প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে সংস্কৃতির বিলুপ্তপ্রায় এ ভাস কবিতা এখনও অনেকেই ধরে রেখেছেন। মোঃ আব্দুল হাই ফকির তাদেরই একজন। তার জন্ম ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারী ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার জয়দা পোস্ট অফিসের রামপুর গ্রামে। বাবা আসাদুজ্জামান ফকির ছিলেন কৃষক ও মা ছামেনা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। ছোট বেলা থেকে দুরন্ত আব্দুল হাই ফকির শৈশবে স্কুলে পড়ার সময় বাবার সঙ্গে হাটে বাজারে গেলে দেখতেন কোন একজন লোক দাড়িয়ে সুর করে কবিতা পড়ছে আর তার চার দিকে অনেক লোকজন ঘিরে দাড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে। সে কবিতা পড়া শুনতে তার খুব ভাল লাগতো। তিনি কবিতা শুনার নেশায় প্রায়ই বিভিন্ন বাজারে যেতেন কবিতা পড়া শুনতেন এবং তা কিনে নিয়ে গিয়ে পড়তেন। বাড়ি ফিরে ভাবতে থাকেন এমন কবিতা লেখা যায় কিনা। ভাবনা থেকেই একদিন ‘রেনুবালার দুঃখের তরী’ নামে একটি দীর্ঘ কবিতা লিখে তা অনেককেই পড়ে শুনালেন। শুনে সবাই তার কবিতার উচ্ছসিত প্রশংসা করল। এরপর কবিতাটি তিনি ছাপা খানায় গিয়ে ছাপিয়ে হাটে নিয়ে গিয়ে এক আসরে পড়লেন এবং প্রতিকপি এক আনা চার পয়সা দরে বিক্রি করে কিছু পয়সা উপার্জন করলেন। ৭ম শ্রেণী পড়ার সময় বাবা মারা গেলে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর একদিন পুলিশের চাকরির উদ্দেশ্যে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর যান। চাকরি না পেয়ে এলাকার এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে সেখানকার একটি রুটির কারখানায় কর্মচারীর কাজ নিয়ে সেখানে থেকে যান। ছয় মাস পর চাকরি ছেড়ে তিনি এলাকায় ফিরে এসে নিজেই ছোট আকারের একটি রুটির ফেক্ট্ররী দিয়ে ব্যবসা করতে থাকেন। এখানেও ব্যর্থ হয়ে তিনি নিয়মিত ভাস কবিতা লেখা এবং তা জনবহুল স্থানে গিয়ে সুর করে পড়া ও বিক্রি শুরু করলেন। এতে যা রোজগার হয় তা দিয়ে কোন মতো সংসার চলে যায়। এভাবে সেই ১৯৬৫ সাল থেকে তার ভাস কবিতা লেখা এবং তা সুর করে পড়ে পড়ে বিক্রি শুরু হয় । কবিতা পড়া এবং বিক্রির ধারাবাহিকতায় দেশের প্রত্যেকটি জেলায় তার ঘুরা শেষ। এক সময় তিনি কাঁধে কবিতার ঝুলি নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে রেলে উঠতেন। কবিতায় সুর তুলতে তুলতে সেখান থেকে তিনি বাহাদুরাবাদ হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ঘুরতেন। সিলেট, চট্রগ্রাম, দিনাজপুর বা দূরে কো্থাও গেলে সপ্তাহ কেটে যেত। আজ অবধি কবিতা বিক্রি করেই তার সংসার চলে। কবিতার জন্য সারা দেশে তার অসংখ্য ভক্ত সৃষ্টি হয়েছে যারা কখনও তাকে দেখলেই বুকে জড়িয়ে ধরে ভালবাসা প্রকাশ করেন। এখন তিনি আগের মতো আর বেশী দূরের হাটে বাজারে যেতে পারেন না। কিন্তু মুক্তাগাছার বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুরসহ পার্শবর্তি হাট-বাজারে নিয়মিত কবিতা বিক্রি করেন। এ কবিতা বিক্রিই তার জীবন জীবিকার একমাত্র উৎস। তিনি এ পর্যন্ত ২৫০ টির মতো ভাস কবিতা রচনা করেছেন। তার কবিতা দ্বারা মানুষ একটু হলেও আনন্দ উপভোগ করে এতেই তিনি নিজেকে সার্থক মনে করেন।


দুঃখের বিষয় একটা ভাস কবিতাও চক্ষে দেখলাম না। অপেক্ষায় আছি, কবে সেই বড়ভাই ভাস কবিতা শুনাতে রামপুর নিয়ে যাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×