somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আ'লীগ সৃষ্ট শ্বাসরুদ্ধকর ও সংকটজনক পরিস্খিতিতে সেনা মোতায়েন হয়

১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সব দাবি মেটানোর পরও ২০ লাখ লোক এনে বঙ্গভবন ও ঢাকাকে অচল করে দেয়ার কর্মসূচি দিয়েছিল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল। এই কর্মসূচির জন্য মাত্র ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দেয়ায় দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্খিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সংকট ও চরম অনিশ্চয়তার মুহূর্তে জনজীবনকে স্বাভাবিক রাখা ও দেশের শিল্প, সম্পদ ও ব্যবসায় রক্ষার জন্য দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোন বিকল্প ছিল না রাষ্ট্রপতির সামনে। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়েছেন। অবশেষে আ'লীগের ৫ম অবরোধ হুমকির মুখে শ্বাসরুদ্ধকর ও সংকটজনক পরিস্খিতিতে তিনি দেশে সেনা মোতায়েন করেন।
৮ম জাতীয় সংসদের ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নেয়ার কথা ছিল সুপ্রীমকোর্টের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে. এম. হাসানের। কিন্তু আওয়ামী লগি বৈঠাধারীদের তাণ্ডব, পিটিয়ে মানুষ হত্যা, খুনসহ চরম নৈরাজ্যকর পরিস্খিতি সৃষ্টির ফলে বিচারপতি কে. এম. হাসান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে অসম্মতি জানান। এরপর রাষ্ট্রপতি সংবিধানে বর্ণিত দ্বিতীয়, তৃতীয়, ৪র্থ ও ৫ম বিকল্প অনুসরণ করে ব্যর্থ হওয়ার পর সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে চরম অনিশ্চিত রাজনৈতিক সংকটময় মুহূর্তে নিজেই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। অন্য ১০ জন উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন ২ দিন পরে। প্রধান উপদেষ্টা শপথ গ্রহণ করেন ২৯ অক্টোবর এবং অন্য ১০ উপদেষ্টা শপথ নেন ৩১ অক্টোবর।
১০ জন উপদেষ্টা শপথ গ্রহণের পর থেকে ইতিমধ্যে ৪৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে। গতকাল পদত্যাগকারী ৪ জন উপদেষ্টাসহ কতিপয় উপদেষ্টার ভূমিকা কি ছিল সেটা আজ বিশেষভাবে মূল্যায়নের দাবি রাখে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কাজ হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং দৈনন্দিন রুটিন কার্যক্রম সম্পাদন করা। কোন নীতিনির্ধারণী কাজ বা রাজনৈতিক সমঝোতা, দূতিয়ালী তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়ার মুহূর্তেই দেশে এমন রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছিল যে, সেনাবাহিনী মোতায়েন তখনই প্রয়োজন ছিল বলে দেশবাসী আশা করছিল। কিন্তু একটি বড় রাজনৈতিক দল ও জোট যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য প্রচেষ্টা চালানোর সুযোগ দেন রাষ্ট্রপতি। এই সুযোগ পেয়ে কয়েকজন উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিশনে নেমে পড়েন। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১৪ দল ১১ দফা দাবি জানিয়ে ১ সপ্তাহের আলটিমেটাম দেয়। তখন প্রধান দাবি ছিল বিচারপতি এম. এ. আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। এ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ১৪ দল আয়োজিত অবরোধ প্রত্যাহার বা জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কোন উদ্যোগ না নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ৪ দল, ১৪ দল, এলডিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট ও দলের সাথে সিরিজ বৈঠক করে। পরে কতিপয় প্রস্তাব তৈরি করে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করে। কিন্তু অবরোধ প্রত্যাহারে তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি। বরং আওয়ামী লীগ ২ দিন বিরতি দিয়ে আবারো দ্বিতীয় দফা সপ্তাহব্যাপী অবরোধ আরোপ করে দেশব্যাপী। দ্বিতীয় দফা অবরোধের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির অনুরোধের প্রেক্ষিতে সিইসি এম. এ. আজিজ দীর্ঘমেয়াদী ছুটিতে যেতে সম্মত হন। তার পরিবর্তে ২ জন নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু তাতে সংকট দূর হয়নি, বরং আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল তাতেও আপত্তি জানায়। তাদের দাবি নতুন কমিশনারদের সরাতে হবে। পুরাতন কমিশনার স. ম. জাকারিয়াকে সরাতে হবে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মাহফুজুর রহমানকেও সরাতে হবে। নির্বাচনী তফসিল বাতিল করতে হবে। ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে ইত্যাদি। দাবির কোন শেষ নেই। এসব দাবির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট নতুন সংকট সৃষ্টি হয় এবং আরো ২টি অবরোধ দেয়া হয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে। উপদেষ্টা কমিটি আবারো দূতিয়ালীর ভূমিকা পালন শুরু করেন। তারা দুই নেত্রীর সাথে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ করান। পরে দুই নেত্রীর সাথে পুনরায় আলাপ হয় কমিটির। মহাসচিব পর্যায়ে অনেক বার বৈঠক হয়েছে প্যাকেজ প্রস্তাব নিয়ে। প্যাকেজ প্রস্তাবের পুরো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল নির্বাচনী তফসিল বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণা্ল সেটা সম্পন্ন হয়েছে। ভোটার তালিকা সংশোধনের ব্যবস্খা নেয়া হয়েছে। প্যাকেজে তৃতীয় প্রস্তাব ছিল নব নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার মোতাব্বির হোসেন চৌধুরীকে ছুটিতে পাঠিয়ে তার স্খলে অন্য একজন নতুন কমিশনার নিয়োগ। এটাও সম্পন্ন হওয়ার পথে। ঠিক সেই সময় ১৪ দল নতুন শর্ত দিয়েছিল যে স ম জাকারিয়াকে সরাতে হবে। এভাবে একটির পর একটি নতুন দাবি কতটা মিটানো সম্ভব নব্বই দিনের কেয়ারটেকার সরকারের পক্ষে? এ প্রশ্ন দেশবাসী সর্বস্তরের মানুষের।
সর্বশেষে আওয়ামী লীগ এমন একটি দাবি জানিয়েছে, যে সংবিধানের মধ্যে থেকে পূরণ করা সম্ভব নয়। স ম জাকারিয়া, মোদাব্বিরসহ যাদেরকে নির্বাচন কশিমন থেকে সরানোর আবদার তুলেছিল তারা সেটা পূরণ করা সম্ভব শুধুই তারা নিজেরা যদি পদত্যাগ করতে বা ছুটিতে যেতে রাজি হন। কিন্তু তারা বা তাদের কেউ যদি অসম্মতি জানান তাহলে তাদের সরানো বা ছুটিতে পাঠানোর এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির বা কারোই নেই। কিন্তু কতিপয় উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের এই দাবিটিও বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, সংবিধান লংঘন করে হলেও এই দাবি পূরণ করার পরও তাদের দাবি শেষ হতো না। আরো নতুন নতুন দাবি তারা জমা রেখেছিল। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের নামে সংবিধান লংঘন করে সাংবিধানিক ব্যক্তিকে অসাংবিধানিক পন্থায় সরানোর দাবি জানিয়ে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছিল ১৪ দল। গত রোববার থেকেই ঢাকায় ২০ লাখ লোক এনে বঙ্গভবন ঘেরাও করার চরমপত্র দিয়েছিল তারা। তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের লগি-বৈঠার পাশাপাশি এবার হাড়িপাতিল, হোগলা, পাটি ইত্যাদি নিয়ে ঢাকায় এসে বঙ্গভবন ঘেরাওয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার এই ঘোষণায় দেশে আবারো এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্খিতির সৃষ্টি হয়েছিল। স্কুলে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। একমাস অবরোধ ও কয়েকদিনের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচির ফলে গোটা দেশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছিল। আমদানি রফতানি, বন্দর সব ব হয়ে গিয়েছিল। সর্বোপরি দেশের ভাবমর্যাদা বিদেশে মারাত্মকভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়েছিল। এ অবস্খায় আবারো ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্পর্শকাতর ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ২০ লাখ লোক এনে ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়ায় আবারো শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্খিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এ অবস্খায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার কোন বিকল্প ছিল না রাষ্ট্রপতির কাছে। সেনাবাহিনী গত রোববার যখন বঙ্গভবনে প্রবেশ করে তখন উৎসুক জনতাকে বাহবা দিতে দেখা গেছে। জনগণ বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন ছিল। জনগণের এই প্রত্যাশা থাকলেও কতিপয় উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের একের পর এক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। জনদুর্ভোগ লাঘবের কোন উদ্যোগ তারা নেননি। এ অবস্খায় তারা গতকাল যে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তাতে আরো স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা আওয়ামী লীগকে আরো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেয়ার পক্ষপাতি ছিলেন। সেনাবাহিনীকে মূলত তিনটি কারণে ডাকা হয়েছে। এগুলো হলো্ল জনদুর্ভোগ লাঘব করে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×