যে কোন রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের মধ্যে অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। শুধু একটি সীমানা থাকলেই একটি রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না। তার জন্য প্রয়োজন আইন। একটি সরকার ব্যবস্থার তিনটি বিভাগের মধ্যে অন্যমত প্রধান অর্গান হচ্ছে বিচার বিভাগ। একটি রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ যত শক্তিশালী হবে, রাষ্ট্র ততশক্তিশালী এবং সার্বভৌম হবে। যদি বিচার বিভাগ দুর্নীতিগ্রস্থ এবং পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে সে রাষ্ট্র একটি দুর্বল রাষ্ট্র এবং সংঘাতময় অনগ্রসর রাষ্ট্রতে পরিনত হতে বাধ্য।
মহান স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পার হলেও সামরিক স্বৈরতান্ত্রিক আলখেল্লা থেকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী বের হয়ে আসতে পারেনি। অতীতে যেভাবে আইন এবং সংবিধানকে স্বৈরাচারী সরকার নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে, বর্তমানে সেটা আরো প্রকট আকার ধারন করেছে।
বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে, আইনের যে ভেলকিবাজী জনগন দেখতে পাচ্ছে তা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য তথা আভ্যন্তরীন নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরুপ। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ একের পর এক রায় প্রদান করে যাচ্ছে, এবং অত্যন্ত অদ্ভুতভাবে তা ক্ষমতাসীনদের স্বার্থের অনুকুলেই গিয়েছে। আরো সহজভাবে বললে, সরকার যা চায়, বিচার বিভাগও কাকতালীয়ভাবে সেই রায়ই প্রদান করে। অথচ কাগজে কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং রাজনৈতিক প্রভাবমূক্ত। কিন্তু রিয়েলিটি হচ্ছে তার উল্টো। বাংলাদেশের মানুষ যে আশা আকাংখা নিয়ে ৭১ এ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল, সেই আশা আকাংখাকে পাশ কাটিয়ে আওয়ামী সরকার অতীত থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধানকে দলীয় আশা আকাংখার দলিলে পরিনত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেনি। ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত এই বাংলাদেশ রাষ্ট্র দ্বিধা বিভক্ত এবং সংঘাত রক্তপাতের ভেতর দিয়ে ইতিহাস অতিক্রম করেছে।
উপরের দীর্ঘ আলাপের মূল বক্তব্য হলো, বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করাই, আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস।
বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচার বিভাগকে আরেকটি বড়-সড় বিতর্কের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। একটি জলন্ত অগ্নী পরীক্ষার মুখোমুখি বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কল্পনা প্রসুত অভিযোগ এবং মিথ্যা স্বাক্ষী হাজির করে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা সম্ভবতঃ আইনের ইতিহাসে নজীর বিহীন। যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চারিতার্থ করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগ যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করে, তাহলে তা হবে সভ্যতার ইতিহাসে নজীর বিহীন জুডিশিয়াল মার্ডার। যা আইনের ইতিহাসে ভয়াবহ লিগ্যাল ক্যু।
বিচার বিভাগ যদি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন নিপীড়নের হাতিয়ার হিশাবে হাজির হয়, তাহলে তা রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিবে। সাধারন মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করবে। আর তখনই তৈরী হবে সংঘাত সংঘর্ষ।
আওয়ামী লীগ মনে করে এই দেশ শুধুমাত্র তাদের। আওয়ামী লীগ মনে করে এই দেশ শুধুমাত্র তার বাপের। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, এই দেশ ১৬ কোটি মানুষের। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর আবার রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা শ্লোগান হাজির করে আওয়ামীলীগ গোটা দেশ এবং জনগণকে বিভক্ত করে তুলেছে। কিন্তু কাদের স্বার্থে? এই দেশ যদি সংঘাত আর সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে দুর্বল রাষ্ট্রে পরিনত হলে আওয়ামী লীগের কি লাভ? নাকি প্রতিবেশী দাদারা চায় না সোনার বাংলাদেশ নামক কোন শক্তিশালী সার্বভৌম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব পৃথিবীর মানচিত্রে টিকে থাকুক?
বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব এখন বিচারকদের হাতে ন্যাস্ত। তারাই সিদ্ধান্ত নিবেন আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে? দ্বিধা বিভক্ত না ঐক্যবদ্ধ!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪২