somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প বা কথা: মেছো মান্দু, থিওরি মান্দু অথবা কাঠ পায়ের এক যুবক

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেছো মান্দু, থিওরি মান্দু অথবা কাঠ পায়ের এক যুবক
___________________________________________



মান্দু তার কাঠ পায়ে ভর করে হাঁটছে, ঠক্‌ থুপ, ঠক্‌ থুপ। ওর একটা পা আসল আরেকটা পা নকল, কাঠ পা বা ক্রাচ্‌‌। এই কাঠ পা নিয়েই সে বেশ দ্রুত হাঁততে পারে, ব্যাপারটা এমন যে কিছু কিছু সময় ওর জোড়ে হাঁটা সমান সমান আরেক জনের মোটামোটি দৌড়ানোর কাছাকাছি। ব্যাডমিন্টনে মাঝে মাঝেই অনেককে হারিয়ে দেয়। দৌড়াতেও পারে সে, বেশ ভালো। মাঝে মাঝে ক্রিকেটও খেলে। তবে আম্পায়ারিং ওর বেশি পছন্দ। তাইতো এলাকার সব ম্যাচে প্রধান আম্পায়ার ঐ মান্দুই। আর মান্দুর সেরা নেশাটা হলো মাছ ধরা, হুইলে বা বর্শীতে আর ঠিক এর পরেই কার্ড খেলা, থ্রি কার্ড, নাইন কার্ড, টাকার খেলা।

মাছের খবর পেলে মান্দুর মাথা ঠিক থাকেনা। হোকনা ৫/৭ হাজার টাকার টিকেট, মাছ ধরতে তার যেতেই হবে। ভাগাভাগির সঙ্গীও পেয়ে যায়, আরো আছেনা মেছো সব। তাই টিকিট পাওয়াটাই আসল কথা টাকা কোন ব্যাপারনা মোটেও। আর টিকিট পেয়ে গেলে দিনকয়েক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় তার প্রস্তুতি। সারা বাড়ি মো মো করে মসলার গন্ধে, চারের গন্ধে। মান্দু একটা ঘোরের মধ্যে চলতে থাকে এসময়, রাতে ঘুমাতে পারেনা ঠিকমতো। বউ এর শরীরও ভালোলাগেনা ঠিকঠাক। চোখের সামনে শুধু সে হুইলের ফাতারি দেখতে পায়। এই ডুব মারলো বুঝি। আর জলের এখানে সেখানে মাছেদের কম্পন, আহ্‌ ওইটা ধরলো বুঝি। এরকম সময়ে মান্দুর বউ অস্থির হয়ে যায়, ওর শরীরের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। ও বুঝে গ্যাছে, স্বেচ্ছায় এখন সে তার দেহ ছোঁবেনা। মান্দুর বউ তার ভরাট হাতখানা স্বামীর স্পর্শকাতর জায়গায় রাখে। মান্দু বিরক্ত হলেও বাধ্য হয়, সে তার স্বপ্নভঙ্গের ভেতরেও জলের মাঝে ফাতারির ওঠানামা দেখতে পায়। মান্দুর ভালোলাগে। যেখানে বর্শি, ফাতারি, মাছ, জল সেখানে মান্দুর ভালোলাগে।

শিকার ভালো হলে মান্দুর মেজাজ ফুরফুরে থাকে। সন্ধ্যার পর সাহেব বিবি গোলাম তাকে ডাকে, ডাকে আরও সব কার্ডখেঁকো বন্ধুরা। মান্দু নিজেকে কখনোই জুয়ারু ভাবেনা, ভাবেনা তার খেলার সাথীদেরও। জীবনের জন্যতো কিছুটা এন্টারটেইনমেন্টের দরকার আছে নাকি। তাই এটা জুয়ার পর্যায়ে পড়ে না। কোনদিন ২০টাকা, কোনদিন ৫০টাকা, কোনদিন ১০০টাকা থেকে লিড শুরু হয়। আনসিন সিনে তা ডাবলও হয়ে যায়। কোন কোন সন্ধ্যায় খুব বেশি হলে ৪/৫ হাজার হেরে বসে আবার কোনবার বেশি লাভ করে ফেলে। মাস শেষে গড়পরতা সমান। টাকা টাকাই থাকে, একটু আধটু এদিক সেদিক হয়ে যায় তবে মাঝখান থেকে পুরো মাস মজা আর মজা। কার্ডের নেশা যে না খেলে সে কি আর বুঝবে। মাঝে মাঝে হাইভোল্টেজ ম্যাচ চলে। সকাল থেকে রাত ১১টা অবধি। নাওয়া খাওয়ার কথা মনে থাকেনা। ফোনে মিছে কথার অভাবও থাকেনা।

এই কার্ড খেলার সময়ে মান্দু আবার অনেক থিওরি করে। এখানে থিওরি মানেটা হলো খেলার মাঝে নিজের ভাগ্য বদলানো বা অন্যের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনবার জন্য নানান কৌশল করা। যেমন সে মাঝে মাঝে পানির বোতলটা অন্যদের মাথায় থেকিয়ে নিজের বগলের নিচে চেপে রেখে দেয়। আবার কখনো নিজের বা অন্যের জামা প্যান্ট বা লুঙ্গি থেকে ঝুলে থাকা সুতো ছিঁড়ে নিয়ে নিজের নখে বা কানের সাথে পেঁচিয়ে রাখে। আবার কখনো একটি নির্দ্দিষ্ট জায়গাতে বসতে না দিলে সে খেলতে চায়না, এমন সব খাম খেয়ালিপনা আরকি। এতে মাঝে মাঝে বেশ কাজ হয় ভাগ্য বদলের, ফলে সে থিওরি ব্যাপারটাকে খুব গভীরভাবে নেয় খেলার সময়। ওর দেখাদেখি আরও দু'একজনও এমনটা শুরু করে দেয়। এগুলো হলো মজার উপর মজা আরকি। এ নিয়ে হাসাহাসিও কম হয়না। আবার হাসাহাসির মাত্রা বেশিবেশি হয়ে গেলে রাগারাগিও হয়ে যায়। মান্দুর প্রিয় কার্ড হলো ৩,৬,৯ স্পেশাল রানিং। কার্ড হাতে নিয়ে প্রথমে এদের যেকোন একটি কার্ড দেখলেই ওর ভেতরে ধরফড়ানি শুরু হয়ে যায় আর তার পরেরটা যদি সেই সিরিয়ালের আরেকটি হয় তো ওর মুখের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে যে কিছু একটা হতে যাচ্ছে পরের কার্ডটা মিললেতো সোনায় সোহাগা আর না মিললে, হুশ্‌ শালা, ভাগ্যটাই খারাপ।

মান্দুর মেজাজ ফুরফুরে থাকলে ওর বউ পাশ ফিরে ঘুমানোর ভানকরে থাকলেও রেহায় পায়না। জীবনীশক্তিতে ভরপুর এই মান্দু, যে কিনা তার জীবনের প্রায় তিরিশটা বছর কাঠ পা সাথে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই ছোট্টবেলা বছর কয়েক বয়সে ট্রাকের চাকার নিচে পড়ে মান্দু ওর পাটা হারিয়েছিলো, একটুর জন্য শুধু জীবনটা বেঁচে গিয়েছিলো।

এখন মনে হয় ও নিজেও জানেনা যে ওর একটা পা কাঠের এবং ওর সাথে যারা নিয়মিত চলাফেরা করে, মেশে তারাও ভুলে গ্যাছে ওর কাঠপায়ের কথা।
মান্দু এক স্বতস্ফুর্ত স্বভাবের যুবকের নাম, যার একটি কাঠের পা আছে অথচ যার ভেতর বাহিরটা প্রাণশক্তিতে ভরপুর। সামনে চলার পথে কোন কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনা। ওর লোহা লক্কলের ব্যাবসার মতো জীবনটাকেও লোহা বানিয়ে ফেলার পথে ও অনেকটা এগিয়ে গ্যাছে।।
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×