somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিরোনামহীন একটি লেখা......

১৩ ই জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ প্রথম আলোর গত সপ্তাহের নারীমঞ্চ টা হাতে নিতেই একটা খবরে চোখ আটকে গেল। বখাটেদের বিরুদ্ধে ছাত্রীরা। প্রতিবেদনটির মাঝখানে কিছু মিছিলরত মেয়ের ছবি স্কুল ড্রেস পরা। দীর্ঘদিন ধরে বখাটেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ ছিল তারা। সর্বশেষ তাদেরই এক সহপাঠী কে প্রমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ার অপরাধে এক বখাটে গালে চড় মারলে প্রতিবাদে তাদের রাস্তায় নেমে আসা। অতঃপর ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ ছেলেটিকে গ্রেফতার করে এবং তার সহযোগীদের গ্রেফতার করার জন্য আরও ২৪ ঘন্টা চেয়ে নিয়েছে ।

খবরটি ব্যতিক্রমধর্মী কোন খবর নয়। প্রতিদিনই পেপার খুললেই এ ধরনের ৮/১০টি খবর
পাওয়া যাবে। কখন আগ্রহ হলে পড়ি কখনো পাশ কাটিয়ে চলে যাই অন্য খবরে। কিন্তু আজ কেন যেন পাশ কাটাতে পারলাম না। স্কুল ড্রেস পরা ওই প্রতিবাদমূখর মেয়েগুলোর মাঝে কোথায় যেন নিজেকেই খুঁজে পেলাম। মনে পড়ে গেল নিজের জীবনের কিছু দূঃসহ স্মৃতির কথা।

তখন সবেমাত্র স্কুল জীবন শেষ করেছি। কলেজে প্রবেশ করব। বাবা সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন তাই বদলী সংক্রান্ত জটিলতায় আমাকে আটটি সকুলের স্বাদ গ্রহন করতে হয়েছিল। কলেজ জীবনেও যেন এই ঘটনার পূনরাবৃত্তি না ঘটে তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করে বাবার কর্মস্হলের কলেজে না ভর্তি না করে উত্তরবঙ্গের অন্য একটি জেলায় একটি নামকরা কলেজ ভর্তি করানো হল আমায়। কলেজের কোন ছাত্রীনিবাস নেই তাই অনেক খুঁজে বেশ ভাল নিরাপত্তা ব্যবস্হা আছে এরকম একটি প্রাইভেট হোষ্টেলে থাকার ব্যবস্হা হল।

শুরু হল আমার হোষ্টেল জীবন। বাবা মা ছেড়ে এই প্রথম বাইরে থাকা। মন অনেক খারাপ। তবে কলেজ আর প্রাইভেট নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে হত যে নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। এরই মাঝে শুরু হল উপদ্রব। যে সমস্যার কারণে আজ সুনামগন্জের ওই মেয়েরা পথে নেমে এসেছে আমার জীবনেও একই সমস্যার সূচনা ঘটল। বাবা মা কাছে নেই হোষ্টেলে থাকি বখাটেদের তো চরম সুযোগ। আমাদের দেশে কিছু শ্রেণীর মানুষ আছে যারা হোষ্টেলে থাকা মেয়েদের যে কি মনে করেন তা আমি বুঝিনা আর বুঝলেও চিন্তা করতে চাইনা।এ ই উপলব্ধি আমার পরবর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আরও তীব্রভাবে হয়েছে। যাই হোক শুরু হলো আমার বিভীশিকাময় জীবন। হোষ্টেল গেইট,কলেজ গেইট,প্রাইভেট স্যারের বাসা সবখানেই তারা আছে। দূর থেকে তাদের দেখলেই রিকশা ঘুরিয়ে দেই, স্যার কে বলি , রাস্তায় নেমে বান্ধবীর বাসায় সময় কাটিয়ে অন্য সময় হোষ্টেলে ফিরি তাও তাদের এড়াতে পারিনা। সামনে পরলেই রিক্সা জোর করে আটকিয়ে একই কথা। সহপাঠী পরিচয় দিয়ে হোষ্টেলেও ঢুকে পরল একদিন।আমার বাবা হার্ট এবং ব্লাড প্রেশারের রোগী। বললে টেনশন এ অসুস্হ হয়ে পড়বেন তাই তাঁকে তখনো জানাইনি। লোকাল অভিভাবক কে জানিয়েছি শুধু। কিন্তু কোন লাভ হলোনা। পূর্বের মতই যন্ত্রনা চলতেই থাকল। ওদের দেখলেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকি আমি। শেষে একদিন ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গেল আমার। রিকসা নিয়ে ফিরছিলাম প্রাইভেট থেকে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে প্রায়। দূর থেকে দেখলাম হোষ্টেল গেইট এ দাঁড়িয়ে আছে বীরপুরুষরা। রিকসা থামতেই এগিয়ে এল। হাতে চিঠি। আর সহ্য করতে পারলাম না। চিৎকার করে উঠলাম। রাগে অন্ধ হয়ে গালাগালি করতে লাগলাম। হোস্টেলের এক আপু হাত ধরে টেনে নিয়ে এল আমায়। আসার সময় শুনলাম পেছন থেকে ওরা চিৎকার করছে "কাজটা ভাল হল না। দেখে নিব। দেখি কি ভাবে কলেজ যাও। "ইত্যাদি ইত্যাদি। তার পর থেকে শুরু হল এসিড মারার হুমকি। দুদিন পর আমি নিজেকে আয়নায় দেখলে ভয় পাব এই জাতীয় কথাবার্তা। আমাকে না পেয়ে আমার সহপাঠীদের ফোন করে একই কথা বললো ওরা। আর পারলাম না, বাবাকে জানালাম সব ফোনে। শোনামাত্র বাবা ছুটে এসে নিয়ে গেলেন আমাকে। চিন্তায় বাবা মার ঘুম নেই। কি করবেন আমাকে নিয়ে।নিজেকে ভীষন অপরাধী মনে হচ্ছিল। সামনে পরীক্ষা। বাসায় বসে থাকলেও তো চলেনা। অনেক ভেবে চিন্তে এক বান্ধবীর বাসায় সাময়িকভাবে থাকার ব্যবস্হা হল। আর বাবা চেষ্টা করতে লাগলেন এই শহরে বদলীর জন্য।

বান্ধবীর বাসা থেকে কলেজ করি তাও ভয় যায়না। যুবক ছেলেদের জটলা দেখলেই মনে হয় এই বুঝি ওরা এসিড নিয়ে এখুনি ছুটে আসবে আমার দিকে। একদিন ভোরে দেখি বাবা এসে হাজির। রাতে আমাকে নিয়ে দূঃস্বপ্ন দেখেছেন তাই থাকতে না পেরে এই ৫০ মাইল রাস্তা ছুটে এসেছেন আমাকে দেখতে আমি ঠিক আছি কিনা। চোখে পানি চলে এল আমার। মনে হল আসলেই মেয়ে হয়ে জন্মানো বুঝি পাপ। বাবা মার জন্য শুধু অশান্তি ছাড়া আর কিছু দেবার ক্ষমতা কি আছে আমার? তারপর কয়েকদিনের মধ্যে বাবা বদলী হয়ে এলেন সেই শহরে। বাবার প্রমোশন হয়েছিল কিন্তু ওই শহরে তখন সেই পদটা খালি ছিলনা। তাই তিনি সচিবালয়ে অনুরোধ করে অন্য দপ্তরে অনেক কম সুযোগ সুবিধাসমপন্ন পদে বদলী হয়ে এই শহরে আসলেন শুধু আমার কথা চিন্তা করে। একমাত্র বাবা মাই বুঝি পারে সন্তানের জন্য ক্যরিয়ারের এমন ত্যাগ স্বীকার করতে। এর এক বছর পরেই আমার বাবা অবসরে চলে যান তাই প্রমোশনের সুবিধা তিনি আর কখনোই ভোগ করতে পারেননি। আজ প্রায় দুই বছর হলো আমার বাবা অন্য জগতের বাসিন্দা। নিজের যে কোন বৈরি সময়ে সবার আগে আমি আমার এই পরম বন্ধু বাবার অভাব তীব্রভাবে অনুভব করি।

ধীরে ধীরে সমস্যা দূর হলো। বাবার গাড়িতে কলেজ যেতাম বলে বখাটেরাও আর সুবিধা করতে না পেরে সরে গেল। আমিও পরীক্ষার পর কোচিং করতে চলে এলাম ঢাকায়। ওই কয়েকটা দিন স্মৃতির পাতায় কিছু তিক্ত স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল। কিনতু আজ অনেকদিন পর মিছিলের ওই মেয়েগুলোকে দেখে মনটা কেমন যেন করে উঠল। ওইযে স্কুল ড্রেস পরা প্রতিবাদী মেয়েগুলো ওদের মাঝে তো আমি আমাকেই দেখতে পাচ্ছি। আমিও তো ওদের মত দুই বেণী করে কলেজ ড্রেস পড়ে কলেজ যেতাম। আমার মনের মাঝেও তো ঠিক একই ঘৃনা ছিল বখাটেদের প্রতি যা এখন ওদের মাঝে রয়েছে। মেয়েগুলোকে আজ খুব আপন মনে হচ্ছে আমার। হবে নাই বা কেন, ওরা যে আমার সেদিনের সেই অব্যক্ত প্রতিবাদের বাস্তব রুপ।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:৫১
৩১টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×