somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর -২

২১ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দিনের সেই ভয়াবহ অভিগ্গতার পর কিছুটা দমে গেলেও ভাবলাম যে করেই হোক এগুলোকে পটাতেই হবে। শুরু হল পটানোর প্রক্রিয়া। হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলাম চকলেট আর মজার মজার স্টিকার। কিন্তু বিচ্ছুগুলো যে এত ত্যাঁদোর তাই বা কে জানত? সোনামুখ করে চকলেট নিবে , হাতে স্টিকার লাগাবে। তারপর যেই সব নেয়া শেষ, ভোঁ দৌড় ক্লাসের বাইরে মায়ের কাছে এবং যথারীতি আমি তাদের পিছু পিছু ...। অতঃপর চ্যাংদোলা করে ক্লাসে নিয়ে আসা।
যাই হোক, কয়েকদিন পর পরিস্হিতির কিছুটা উন্নতি হল। চকোলেটের লোভেই হোক আর আমার আদরের কারনেই হোক ওরা ধীরে ধীরে মাকে ছেড়ে ক্লাসে থাকা শিখে গেল, শুধু একজন ছাড়া। এই বাচ্চাটি ওর মাকে কিছুতেই ক্লাস ছেড়ে যেতে দিবেনা। এ কয়েকদিন ওর কোন কথাই আমি শুনিনি শুধু ভ্যা.... শব্দ ছাড়া। ও যেন পণ করেছে মা ছাড়া কারো সাথে কথা বলবেনা। কিন্তু এভাবে কতদিন? একদিন ওর মাকে আমি অনুরোধ করলাম ওকে রেখে চলে যেতে নইলে তো ওর অভ্যাস গড়ে উঠবেনা। ভদ্রমহিলা বের হয়ে গেলেন। শুরু হল ওর সপ্তম সুরে চিৎকার। ওকে থামানোর জন্য কোলে তুলে নিয়ে দেয়ালে ঝুলানো বিভিন্ন ছবি দেখাতে লাগলাম ওকে। একসময় এনিমেল চার্ট এর সামনে নিয়ে এলাম। একটু কাজ হল ।দেখলাম দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে বড় বড় চোখে ছবিগুলো দেখছে সে। ওকে কুকুরের ছবি দেখিয়ে বল্লাম।
তুমি এটাকে চেনো? মাথা ঝোকালো সে। কান্না বন্ধ।
বলত এটা কি?
এইডা কুত্তা।
জুড়িয়ে গেল কান আমার। এইরকম পরিবেশে এই ভাষা শুনব ভাবিনি। বুঝলাম বাসায় কেউ এই ভাষায় কথা বলার কারণে এই অবস্হা। তারপর যতবারই বলি ছি কুত্তা বলতে হয়না বল কুকুর। ও ততবারই বলে, না এইডা কুত্তা। বল কুকুর। না, কুত্তা কুত্তা কুত্তা। বুঝলাম কপালে দুঃখ আছে। কুত্তা >কুকুর >ডগ। কুকুরে আসতেই এত সময়, ডগে আনব কখন? এর চেয়ে তো ওর চুপ থাকাই ভাল ছিল।

এগুলো তো কিছুই না। আমার আসল অগ্নিপরীক্ষা শুরু হলো কয়েকদিন পরে যখন নতুন একটি বাচ্চা এসে ভর্তি হল আমার ক্লাসে। এই বাচ্চা সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায় অন্যগুলো যদি বান্দর হয় এ হল বান্দরের প্রিন্সপ্যাল। আর আমারও এমন কপাল অন্য আরেকটি সেকসন থাকা সত্তেও ও কিনা ভর্তি হল আমারই ক্লাসে। প্রথমদিনই এসে সে গোটা ক্লাসটি নিজ কন্ট্রোলে নিয়ে নিল। সে একাধারে বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী। প্রথম দিন স্কুল কিন্তু নো কান্নকাটি। তার দুই হাত সর্বদা সক্রিয়। একহাত দিয়ে যদি একজনের চুল টেনে ধরেছে তো অন্যহাত দিয়ে আরেকজনের কান টানছে। দুই হাত যদি ধরে থাকা হয় নো প্রবলেম। পা আছেনা? পা দিয়ে ল্যাং মেরে ফেলছে আরেকজন কে। এক নিমিষের মধ্যে সবকিছু উলটপালট। আমার নিরীহ হাত ব্যগটিও রক্ষা পেলনা। সব জিনিস বের করে সারা ঘরময় ছড়িয়ে রাখল। একটু অন্যদিকে তাকালেই ক্লাস থেকে এক ছুটে ও আই সির ( ডিফেন্সের উচ্চপদস্হ কর্মকর্তা, পদমর্যাদায় প্রিন্সিপ্যালের উপরে) অফিস রুমে যেয়ে টেবিলে উঠে পা ঝুলিয়ে বসে পড়ে। আমি যেয়ে বগলদাবা রে নিয়ে আসি। কিন্তু ওকে বকা দেয়া যায়না কিছুতেই। কারণ কিছু বলতে গেলেই ভুবনভোলানো হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরবে আমাকে। তখন কি কিছু বলা যায়? ও আবার আমার ভাগ কাউকে দিবেনা। মিছ তুমি ওকে আদল কললে কেন? আমাকে কল। ওকে খাইয়ে দিলে কেন? আমাকে খাইয়ে দাও। ওকে গুববয় বল্লে কেন? আমাকে বল। এমনি কত অভিযোগ ওর।

কিন্তু ওর দুষ্টুমি কমছেনা কিছুতেই। সবাই কে প্রতিদিন মারছে।পূর্ববর্তী ক্যাডাররা ওর ভয়ে তটস্হ থাকে।প্রতিদিন অন্যান্য গার্ডয়ানের কমপ্লেনে অতিষ্ট আমি। একদিন ও আই সি নির্দেশ দিলেন ওকে অন্য সেকসন এ দিতে। অন্য মিসকে হয়ত ভয় করবে এই ভেবে। মনটা খারাপই লাগছিল কিন্তু করার কিছুই নেই। ওকে যখন অন্য ক্লাসে নেওয়া হচ্ছিল ও প্রথমে বুঝতে পারেনি। কিন্তু ওই ক্লাসের দরজায় যেয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই দাঁড়িয়ে পড়ল আর কিছুতেই সে ঢুকবেনা। ও আই সি যেই ওকে কোলে তুলে নিয়েছে ক্লাসে ঢুকানোর জন্য, দুমাদুম কিল, ঘুসি আর ল্যাং মারতে লাগল ওনার পেটে আর বুকে। ওনি ওকে আটকাতে না পেরে ছেড়ে দিতেই ও এক দৌড়ে চলে এসেছে আমার কাছে। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না। ''মিছ আমি ওই থেছনে যাবনা, আমি তোমাল কাছে থাবব,আমি আর দুত্তুমি কব্বনা''। আমার যে কি হল দেখি আমার চোখ দিয়েও টপটপ পানি পড়ছে। এমন ভালবাসা পেলে কার না চোখে পানি আসে? আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ও আই সি কে বল্লাম," প্লিজ, ও আমার ক্লাসেই থাকুক। আমি দেখে রাখব ও দুষ্টুমি করবেনা"। ভদ্রলোক টিচার, স্টুডেন্ট এর যৌথ কান্না দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি এ কথা বলতেই তড়িঘরি করে বলে উঠলেন," ঠিক আছে ঠিক আছে ও আপনার ক্লাসেই থাকুক"।
তারপর থেকে ফাইনাল এক্সাম পর্যন্ত ও আমার ক্লাসেই ছিল। তবে ওকে কাবু করার নতুন অস্ত্র পাওয়া গেল। দুস্টুমি করলেই ওকে শুধু একবার বলা তোমাকে ওই সেকসন এ দিয়ে আসব সাথে সাথে সে ভদ্র । বলে,"দেখ আমি গুববয় আমি এততুও দুততামি কলিনা"। বলাই বাহুল্য, এই গুববয় হয়ে থাকার স্হায়িত্ব কখনোই দুই মিনিটের বেশি নয়। (চলবে)।



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:২১
৪৬টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×