somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনোদন মানুষকে কি ভুলিয়ে রাখে- শেষাংশ

০৩ রা জুন, ২০১১ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অস্তিত্বের বাস্তবতা : বিনোদন অস্তিত্বের বাস্তবতা ভুলিয়ে রাখে।

মাননীয় পাঠক! আপনি কখনো অন্ধকার রাতের পরিস্কার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন? অসংখ্য তারার বিশাল মহাকাশের দিকে তাকিয়ে আপনার কি অনুভূতি হয়? আমার তো মনে হয় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে (পাশে কেউ থাকলেও) বেশীর ভাগ মানুষই একটা নিঃসঙ্গতা বোধ করবে - এই নিঃসঙ্গবোধের মূলে রয়েছে নিজের ক্ষুদ্রতা ও অনুল্লেখযোগ্যতার একটা অনুভূতি। মানুষ পৃথিবীতে একা আসে কিন্তু সেটা সে অতটা মনে রাখে না বা রাখতে পারে না। তবে যেতে হবে একদমই একা, এই বাস্তবতাটা তাকে এক ধরনের নিঃসঙ্গ ও বিষন্ন বোধ করতে বাধ্য করে এবং এটাই স্বাভাবিক। এই নিঃসঙ্গতা থেকে মানুষের মুক্তি লাভের উপায় কি? সাধারণ এই সত্যটা উপলব্ধি করা যে, সে আসলে নিঃসঙ্গ নয়, বরং সে তার সৃষ্টিকর্তার সর্বময় জ্ঞানের আওতায় রয়েছে - রাসূল (সা.) যেমন হিজরতের সময় অন্ধকার গুহায় ভীত হযরত আবুবকর (রা.)-কে বলেছিলেন, “আমরা তো মাত্র দু’জন নই, আল্লাহ্ আমাদের সাথের তৃতীয় জন।” যারা বিশ্বাসী এবং তাকওয়া সম্পন্ন, তারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একথাটা অনুভব করেন। আর নিঃসঙ্গতা দূর করার যে উপায় আল্লাহ্ দেখিয়ে দিয়েছেন, সেই উপায় অবলম্বন করতঃ নিঃসঙ্গতা দূর করতে হবে। আল্লাহ্ যে সাথীকে ’হালাল’ করেছেন, সেই সাথীকে জীবনে গ্রহণ করে, ’আল্লাহ্-অনুমোদিত’ উপায়ে নিঃসঙ্গতা দূর করতে হবে। এছাড়া ভালো মুসলিম হতে হলে সমাজবদ্ধতা বা জামাতবদ্ধতার যে প্রয়োজন, তাতেও আপনা আপনি নিঃসঙ্গতা দূর হবে। কিন্তু তা না করে ব্যক্তিগত “ফুর্তি” আহরণের পশ্চিমা দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে, কোন সমাজবদ্ধতা তো থাকবেই না বরং একটা দেশ বা জাতি কিছু স্বেচ্ছাচারী ’ব্যক্তির’ সমষ্টিতে রূপান্তরিত হবে - শত কোলাহলের মধ্যেও সত্যিকার অর্থে ঘর সংসারের দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক এই মানুষগুলো যেমন যৌবনে নিঃসঙ্গই থেকে যায়, বার্ধক্যে বিভিন্ন হোমে বা আশ্রমে স্থানান্তরিত হয়ে নিঃসঙ্গই নয় কেবল, বরং তার সাথে প্রত্যাখ্যাত হবার অনুভূতি নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।

আপনার মগজ ধোলাই প্রক্রিয়া: আপনার যে মগজ ধোলাই হচ্ছে, বিনোদন তা ভুলিয়ে রাখে।

বিনোদনের আড়ালে যখন আপনার মগজ ধোলাই করা হয়, তখন আপনি সেটা টেরই পান না - বিনোদন সামগ্রী গিলতে গিয়ে মানুষের চেতনা ও বিচারবুদ্ধি এমনভাবে লোপ পায় যে, বিনোদনের মাধ্যমে তার মস্তিষ্কে যে কোন নির্দিষ্ট ’গভীর মর্মবাণী’ প্রোথিত হয়ে যাচেছ, তা সে টেরই পায় না। একটা উদাহরণ দিই: ছোটরা তো বটেই, “আজে বাজে” জিনিস না দেখে, অনেক অভিভাবকরাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে 'Tom & Jerry’-র মত ’নিষ্পাপ’ কার্টুন দেখে তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গদান করে কৃতার্থ করে থাকেন। সম্মানিত পাঠক! আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন যে 'Tom & Jerry’-র অন্তর্নিহিত বক্তব্য কি? Reversal of authority বা denial of authority বা reversal of order নিশ্চয়ই! প্রচলিত যে ব্যবস্থা, বিন্যাস বা বাস্তবতা তা হচেছ বিড়াল বড় বা শক্তিশালী - ইঁদুরের উপর তার কর্তৃত্ব থাকবে এবং ইঁদুর তাকে ভয় পাবে। ঠাট্টার ছলে ব্যাপারটাকে উল্টে দিয়ে আসলে শিশু মস্তিষ্কে বাবার বিরুদ্ধে সন্তানকে অবাধ্য হবার এবং স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে অবাধ্য করে তোলার প্রথম বীজ বপন করা হয়। অর্থাৎ প্রচলিত বা traditional (এবং ইসলামীও বটে) মূল্যবোধের অবসানের প্রয়াস।

জ্ঞানার্জন থেকে বিচ্যুতি: বিনোদনের নামে আপনাকে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের প্রয়াস থেকে ভুলিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা হয়।

আপনার অজান্তেই আপনাকে জ্ঞানার্জন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা বা জ্ঞান বিমুখ করা গেল। গবেষণার ফলাফল বলে যে, যারা সারাক্ষণ TV-র সামনে বসে থাকেন, তারা কোন কিছুতেই মনযোগী হতে পারেন না বিধায় তাদের দিয়ে কোন Serious পড়াশোনা সম্ভব নয়**। বস্তুবাদী অবিশ্বাসী সমাজপতিরা জানে, আপনার জ্ঞানার্জন তাদের জন্য কতটুকু বিপজ্জনক!! তাই, তারা চায় যে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে আপনি তাদের হয়ে কাজ করবেন, কেবল ততটুকু জ্ঞানই যেন আপনার থাকে - উন্নত বিশ্বের সাধারণ মানুষরা একদিকে যেমন অবিশ্বাসী সমাজপতিদের লাভবান করতে Junk Food খেয়ে পেট ভরে, অন্যদিকে তেমনি Junk পত্রিকা পড়ে তাদের চিত্ত-বিনোদন ঘটে। বৃটেনে যেমন Sun বা Mirror শ্রেণীর পত্রিকা পড়ে তাদের সাধারণ মানুষ, আমেরিকাতে তেমনি People শ্রেণীর সাময়িকী চলে । Economist-এর নাম প্রতি তিনজনে একজন জানলেও (!!) সেটা সৌভাগ্যের ব্যাপার হতো। আপনাকে সত্য থেকে সরিয়ে রাখা বা সত্য অনুসন্ধান থেকে দূরে সরিয়ে রাখা বা ভুলিয়ে রাখা হচ্ছে, বিনোদনের মিডিয়া টাইকুনদের আরেকটা মহান ব্রত। ’খবর’ নামক পণ্য সব সময়ই engineerd এবং fabricated - এখনকার বিশ্বের প্রধান সংবাদ উপস্থাপনকারী সংস্থাগুলো যেহেতু বস্তুবাদী অবিশ্বাসীদের নিয়ন্ত্রণে (বা আরও সঠিকভাবে বললে ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণে), সেহেতু তারা আপনাকে যা বিশ্বাস করাতে চাইবে, তাই দেখাবে, এবং আপনিও তাই বিশ্বাস করবেন। দুর্ভাগ্যবশত আপনার মনে হবে যে, আপনার সময়, সঙ্গতি, সামর্থ বা সাহস কোনটাই অতটুকু পর্যাপ্ত নয়, যতটুকু হলে আপনি এসবের বাইরে গিয়ে সত্য অনুসন্ধান করতে পারতেন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×