আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১২
* বাংলার ভূ—প্রকৃতি
বর্তমান ভূপ্রকৃতি
বাংলার ভূ-গঠন সম্পর্কিত আলোচনা থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি সর্বদাই পরিবর্তনশীল। ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ বছর পূর্বে ভূ-প্রকৃতিতে পরিবর্তন যেমন ব্যাপক ছিল বর্তমানে তা নেই, তবু কিছু না কিছু পরিবর্তন হচ্ছেই। বাংলাদেশের বর্তমান (২০০৮) ভূ-প্রকৃতির অবস্থান থেকে আমাদের আলোচ্য সময়ে পরিবর্তনের পরিমাপ সঠিক করা না
গেলেও পরিবর্তনের ধারা খানিকটা হলেও বোঝা যাবে। বাংলাদেশের তেতুলিয়ার উত্তরে বাংলাবান্দা সমুদ্রসীমা হতে ৯৭ মিটার উঁচু।১৭ এখান হতে সমভূমি অঞ্চল উত্তর-পশ্চিম দিক হতে দক্ষিণ-পূর্বদিকে ক্রমান্বয়ে ঢালু এবং বঙ্গোপসাগর পাড় খেপুপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
সমুদ্রতীর থেকে ২৫ হতে ৫০ কি.মি. দূরে খুলনা-বরিশাল লক্ষ্মীপুর বরাবর সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে মাত্র ১.৫ মিটার উঁচু। অন্যদিকে মেঘনা অববাহিকা মোহনা হতে উত্তর-পূর্ব দিকে মেঘালয় সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে অনূর্ধ্ব ৩ মিটারের মধ্যে। দেশের মাঝামাঝি কিছুটা উঁচু চত্বর ভূমি ব্যতিরেকে এ বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলকে ঢালের তারতম্য হিসেবে মোট পাঁচ ভাগে করা যায়।
১. দেশের উত্তরে বাংলাবান্দা হতে দক্ষিণে বীরগঞ্জ-নীলফামারি বরাবর যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৯৭-৪০ মিটারের মধ্যে এবং ঢালের অনুপাত ১:২,০০০।
২. দক্ষিণে জয়পুরহাট-গাইবান্ধা বরাবর অঞ্চলটি ৪০-২০ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত এবং ঢালের অনুপাত ১:৪,০০০;
৩. এই অঞ্চলটি ২০-১০ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত যা দক্ষিণে পাবনা-ময়মনসিংহ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং ঢালের অনুপাত ১:৮,০০০;
৪. এলাকাটি ১০-১৫ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত যার ঢাল দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ১:১৫,০০০ হতে উত্তর-পূর্ব দিকে ১:৩০,০০০।
৫. সমভূমির বাকি অংশে ঢালের অনুপাত ১:১৫,০০০ হতে ১:৪০,০০০।১৮
উপরিউক্ত ঢালের ব্যতিক্রম বৃহত্তর চট্ট্রগাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা। টেকনাফ হতে রামগড় পর্যন্ত উত্তর- দক্ষিণ হতে সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে ঊর্ধ্বভাঁজ সমন্বয়ে গঠিত যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৮০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ১২৪৩ মিটার পর্যন্ত।১৯ এ পাহাড়ি অঞ্চল ভারতের ত্রিপুরার মধ্য দিয়ে ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে প্রসারিত। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের নিকট চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৩৫১ মিটার উঁচু এবং সিলেটের হারারগজ পাহাড়ের চূড়া ৩৩৫ মিটার উঁচু। এছাড়া রয়েছে বৃহত্তর সিলেটের জাফলং হতে শেরপুর জেলার উত্তরাংশে যমুনা নদীর পূর্ব পাড় পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় পূর্ব-পশ্চিমে প্রলম্বিত বিচ্ছিন্ন টিলাসমূহ। এ টিলাগুলোর মধ্যে সিলেটের জাফলং এলাকায় টিলার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৬১ মিটার। কক্সবাজার হতে টেকনাফ পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকার পাদদেশে পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত অবস্থিত। এটি লম্বায় প্রায় ১৫০ কি. মি. এবং চওড়ায় ১ হতে ৪ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বিস্তৃত।
17 M.I. Bakhtine: Major Tectonic Features of Pakistan Part II
১৮ বিধান চন্দ্র মন্ডল; আসম উবাইদ উল্লাহ: ভূগঠন বিদ্যা।
19 Sikder, A.M – Tectonics of Bengal Basin
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

