একটি বাংলাদেশ
তুমি ঘুমন্ত জনতার।
সারা বিশ্বের বিস্ময়
তুমি আমার লজ্জা।
কি খারাপ লাগছে কথাটা শুনে? তাহলে চলেন কিছুটা আলোচনা করি।
১৯৭১ সালে আমাদের পূর্বপুরুষরা নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। উদ্দেশ্য ছিল পরাধীনতা থেকে মুক্তি, নিজেদের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা, দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক উন্নতকরণ ইত্যাদি। এর কোনকিছু কি স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে?
উল্টো অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের করা হয়েছে হত্যা আর রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে পুজি রাজনীতি করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য পরাধীনতা থেকে মুক্তি হলেও আজও সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। শুধুমাত্র শাসকগগোষ্ঠীর পরিবর্তন হয়েছে। আগে পাকিস্তানিরা শাসন করত এখন নিজ জাতির কতিপয় লোক গণতন্ত্রের কথা বলে শাসন করে যাচ্ছে। এটাকে আসলে শাসন বলা চলেনা, এটাকে বলতে হবে দুঃশাসন। কারণ এই শাসনের ভিতর অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, হত্যা, ধর্ষণ সবই রয়েছে। যার পুরষ্কার হিসেবে বিশ্ব আমাদেরকে দুর্নীতিতে প্রথম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা কি অবাক করা লজ্জা নয়?
আজকাল বিচার চাইতে ঘুষ লাগে, ন্যায়বিচার বিক্রি হয়ে যায় অবিচারের কাছে। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চা পানির টাকা লাগে, ব্যাংক থেকে টাকা উঠাইতে গেলেও চা পানির টাকা দেওয়া লাগে, জমি রেজিস্ট্রি করতে চা পানির টাকা লাগে, গাড়ির টিকেট পাইতে চা পানির টাকা লাগে, স্কুল কলেজে ভর্তি হয়তে গেলে চা পানির টাকা লাগে, অবসরে যাওয়ার পর প্যানশনের টাকা উঠাইতে চা পানির খরচ দেওয়া লাগে, রোগীর দেখাশোনা করার জন্য চা পানির টাকা দেওয়া লাগে ইত্যাদি। এখানে মাত্র সামান্য কিছু উল্লেখ করলাম। কারণ সবগুলো এখানে উল্লেখ করা আমার কাছে দুঃসাধ্য। চা পানির খরচ কথাটা এজন্য বললাম কারণ যারা এভাবে টাকা চেয়ে নেই তারা কখনো এটাকে ঘুষ বলেনা। তারা এটাকে ভদ্র ভাষায় চা পানির খরচ বলে। এসব কি লজ্জা না।
ডেনমার্ক এর রাষ্ট্রদূতকে কোন এক সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি যখন বক্তৃতা শেষ করে চলে যাবেন তখন দেখলেন তার হাতব্যাগটি চুরি হয়ে গেছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।
রাজধানীতে ঘুষ নেওয়ার সময় পুলিশকে হাতেনাতে ধরে ফেললেন বাংলাদেশে ঘুরতে আসা একজন বিদেশী। এগুলো কি আমাদের জন্য লজ্জা না?
দুবাই, মালয়েশিয়া, সৌদিআরব আমাদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ আমাদের অপরাধ করার প্রবণতা অনেক বেশি। প্রবাসে আমাদেরকে ছোট করে দেখা হয় শুধুমাত্র বাঙালী বলে। আমাদের প্রবাসীরা বেশী পরিশ্রম করেও কম বেতন পাই কারণ আমাদের প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর চুক্তিতে নিম্নতম বেতন খুবই সামান্য ধরা হয়েছে। এগুলো কি লজ্জা নয়?
ন্যায়বিচারের প্রতীক নিয়ে লড়াই হয় কিন্তু ন্য্যায়বিচারের জন্য লড়াই নেই। ব্যাক্তি স্বাধীনতার কথা বলা হয় কিন্তু ব্যাক্তি স্বাধীনতা উপেক্ষিত থেকে যায়। চুরকে চুর বলা যায়না, খুনিকে খুনি বলা যায়না, সত্যের কোন মূল্য নেই। এসব কি লজ্জা না?
লজ্জার তালিকাটা এত বড় যে লিখে শেষ করা যাবেনা। নিম্নশ্রেণীর লোক থেকে শুরু করে উচ্চশ্রেণীর লোক পর্যন্ত লজ্জার তালিকাটা বিস্তৃত। গুটিকতক লোক বাদে সবাই জড়িত।
কথাগুলো আপনার ভাল না ও লাগতে পারে। অতএব এ লেখাটা ভুলে যান। আমি কোন বিখ্যাত লেখক নয় যে আপনি আমার কথাগুলো মেনে নেবেন। তবে যাচাই করতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩