somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুটবলের যতো রঙ্গ তামাশা

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে লিখেছিলাম, সবার সাথে আবারো শেয়ার করলামঃ

যেহেতু সারা বিশ্ব এখন ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত সেহেতু ফুটবল নিয়ে কিছু মজার কথা বলার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। সারা বিশ্ব যদিও ফুটবল খেলাকে ফুটবল বলে জানে শুধুমাত্র আমেরিকা আর কানাডা এই জনপ্রিয় খেলাকে বলে "সকার"। কোন্‌ হিসাবে বলে আল্লাহপাক জানেন। আমেরিকা কানাডায়ও কিন্তু এদের ভাষায় ফুটবল খেলা আছে (সকার না) এবং যথারীতি বেশ আড়ম্বরের সাথে প্রতিবছর ফাইনাল খেলেও থাকে যাকে বলা হয় সুপার বোল।

ফুটবলের শাব্দিক অর্থের ব্যাখ্যা দেবার জন্য কোন রকেট সাইন্টিস্ট হবার প্রয়োজন নেই। খুব সাধারন ভাবেই বুঝা যায় এর নামকরন থেকে। যেমন ফুট মানে পা আর বল তো বলই। সেই হিসাবে পা দিয়ে যে বল খেলা হবে সেটাই ফুটবল খেলা হবার কথা, তাই না? কিন্তু এরা যেটাকে ফুটবল খেলা বলে সেই খেলায় ফুটের অর্থাৎ পায়ের সাথে বলের কোনই সম্পর্ক নাই। অনেকটা জব্বারের বলী খেলার মতো ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি আর গুতাগুতি করে ওভাল শেপের বিশাল আকারেরএকটা ডিমের মতো বলকে দুই হাতে বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে মরনপন যুদ্ধ করে প্রানপনে দৌড় শুরু করে প্রতিপক্ষের কিম্ভুতকিমাকার গোল পোষ্টের উদ্দেশ্যে। আর তার পিছে পিছে পঙ্গপালের মত সবগুলি ছোটে তাকে ধরবার উদ্দেশ্যে। কয়েকগজের বেশী কিন্তু যেতে পারে না, অমনি প্রতিপক্ষের সব গুলো খেলোয়াড় হুড়মুড় করে হামলে পড়ে তার উপর। আর খেলোয়াড় এক একটা আল্লাহর মাল জাম্বু সাইজের। এতো গুলোর যাতা খাওয়ার পরে সেই খেলোয়াড়টি যদি টাইট আর নিশ্ছিদ্র পোশাক না পরে থাকতো তাহলে নির্ঘাত অনাকাঙ্খিত কোন কিছু শরীরের বিশেষ স্থান দিয়ে বের হয়ে গিয়ে সারা মাঠই পয়ঃপদার্থে আচ্ছাদিত হয়ে যেতো। আচ্ছা বলেন এটা ফুটবল হল কি করে? ওহ ফুট দিয়ে দৌড় দেয় বলেই কি ফুটবল নাম দিয়ে দিল? আসলে এসব কিছুই না। সারা দুনিয়ার মতের আর পথের উল্টা দিকে তো এদের থাকতে হবে! তাই নিজেরা নিজেরা সর্দারি করে মিলুক বা না মিলুক একটা নাম দিয়ে দিয়েই মনে করছে কি করে ফেললাম রে!!

যাক, ঐ প্যাচাল বলে আর কি হবে, এবার আমার নিজের একটা ফুটবল খেলা দেখার অভিজ্ঞতার কথা বলছি, ১৯৮২ সালের কথা, আমি তখন কলেজে পড়ি। ঢাকা স্টেডিয়ামে আবাহনী মোহামেডান ফাইনাল খেলা। আমার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় দেশের বাড়ি থেকে আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল তখন। বয়সের ব্যাবধান কম থাকায় তাকে নিয়েই স্টেডিয়ামে গেলাম খেলা দেখতে। আমি আবার আবাহনীর ঘোর সমর্থক ছিলাম এবং আবাহনীর গ্যালারিতে গিয়ে তাকে নিয়ে বসলাম। টান টান উত্তেজনায় খেলা চলছে। মুহুর্মুহু আক্রমন প্রতি আক্রমনে শ্বাস রুদ্ধকর পরিস্থিতিতে খেলা চলছে। আবাহনীর গ্যালারি হলো মাঠের দক্ষিন পশ্চিম কর্নারে আর মোহামেডানের গ্যালারি ছিল উত্তর পশ্চিম কর্নারে। মাঝখানে ছিল প্রেসবক্স এর বাধা। দুই গ্যালারি থেকেই গালির বন্যায় ভেসে যাচ্ছিল গোটা অঞ্চল। ধইরা লা মাইরা লা এগুলি তো ছিল অতি মামুলি চিৎকার চ্যাঁচামেচি। কিছুক্ষন পর পর বিরতি দিয়ে দিয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপের মহড়া চলতো। বৃষ্টির মতো ইট বর্ষিত হচ্ছে আবাহনীর গ্যালারীর দিকে। তখন দেখা যেতো আবাহনীর গ্যালারির সবাই একেবারে দক্ষিনে সরে এসেছে। আবার কিছুক্ষন দম নিয়ে এদের বর্ষিত ইট সংগ্রহ করে যখন আবাহনীর সমর্থকরা ইট পাটকেল অভিযানে নামত তখন মোহামেডানের সমর্থকদের একেবারে উত্তর পূর্ব কর্নারে নিয়ে যেতো। মাঠের খেলা দেখব না এই খেলা খেলবো? ফলে মাঠের খেলা দেখার পাশাপাশি আমরাও ছিলাম সারাক্ষন দৌড়ের উপরেই। খেলা প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। কোন পক্ষই গোল করতে পারছিল না। অতিরিক্ত সময়ের পরেও ড্র থাকলে খেলাটি টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হবে। অতিরিক্ত খেলা শেষ হতে সম্ভবত ৪/৫ মিনিট বাকি আছে। এমন সময় মোহামেডান আচমকা গোল করে বসে। মোহামেডান গ্যালারীতে ফাটাফাটি আনন্দ চিৎকার চ্যাঁচামেচি আর আবাহনী গ্যালারীতে শোকের ছায়া। এমনি অবস্থায় আমার আত্মীয়টি করলো কি আনন্দের আতিশয্যে মোহামেডান সমর্থকদের সাথে সাথে উল্লাস ধনি দিয়ে উঠে। আবাহনীর সারা গ্যালারি পিনপতন নিস্তব্ধতার মাঝে আমার আত্মীয়টি আনন্দে লাফিয়ে উঠে। আমি কি আগে ঘুনাক্ষরেও জানতাম যে সে মোহামেডানের সমর্থক? তাহলে তো তাকে খেলা দেখতেই নিয়ে আসি না। যা হোক, আমি শুধু দেখলাম ইট বৃষ্টির সাথে সাথে হিংস্র হায়েনার পাল ছুটে আসছে তার দিকে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে খুবলে খুবলে খাবার জন্য। আমি উপায়ন্তর না দেখে ত্বরিত গতিতে তার শার্টের কলার ধরে দিলাম এক দৌড়। ভাগ্যক্রমে আমরা বাহির হবার গেটের কাছেই বসেছিলাম। কয়েক সেকেন্ড মাত্র লেগেছে গেট পার হতে, তখনো যেহেতু মাঠ উত্তেজনার তুঙ্গে তাই তেমন কেউ বের হচ্ছিল না, এই সুযোগে আমরা এক দৌড়ে জিপিওর ভিতর ঢুকে গেলাম এবং দ্রুত সেখান থেকে বাসায় চলে আসি।

সেদিন রাতের খবরে দেখি ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে গুলিস্তান এলাকা রনক্ষেত্র। ৮ টি বাসে আগুন, ১ জন নিহত, অর্ধ শতাধিক আহত আর প্রচুর ভাংচুর।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×